ইউরোপের রাজনীতিকরা অভিবাসন ও বাক স্বাধীনতা নিয়ে ভোটারদের উদ্বেগকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
Published : 15 Feb 2025, 12:28 PM
রাশিয়ার কাছে নতি স্বীকার না করে কী করে ইউক্রেইনের যুদ্ধ শেষ করা যায় আর কীভাবে ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো যায়, চলতি বছরের মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে মূলত এই নিয়েই আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু সম্মেলনে উপস্থিত সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন মার্কিনি, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স মঞ্চে উঠে এ দুটোর কোনোটার পেছনেই সময় ব্যয় করলেন না।
এর বদলে শুক্রবার ভুয়া তথ্য, অপতথ্য আর বাক স্বাধীনতার অধিকার নিয়ে যুক্তরাজ্যসহ ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্রদের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে তিনি উপস্থিত প্রতিনিধিদের স্তম্ভিত করে দেন, জানিয়েছে বিবিসি।
ভ্যান্সের বক্তৃতার ওই ২০ মিনিট ছিল খুবই কিম্ভূত, হলরুমে প্রায়ই ছিল পিনপতন নীরবতা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউরোপের রাজনৈতিক নেতা, সামরিক কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তৃতায় ভ্যান্স ইউরোপে রাশিয়ার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন।
পাশাপাশি তিনি ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করায় যুক্তরাজ্য, খিস্ট ধর্মাবলম্বী অ্যাকটিভিস্টকে দোষী সাব্যস্ত করায় সুইডেন, পোস্টে নারীবাদবিরোধী মন্তব্য করায় নাগরিকদের বিরুদ্ধে জার্মানির অভিযান ও বিদ্বেষমূলক কন্টেন্টের কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ায় ব্রাসেলসের তীব্র সমালোচনাও করেন।
“ইউরোপের ক্ষেত্রে আমি যে হুমকি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত তা রাশিয়া নয়, চীনও নয়, অন্য কোনো বহিরাগত শক্তিও নয়। আমি চিন্তিত ভেতর থেকে উদ্ভূত হুমকি নিয়ে, ইউরোপের কিছু মৌলিক মূল্যবোধ আছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মেলে, সেই মূল্যবোধ থেকে পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে,” বলেন ভ্যান্স।
ইউরোপের রাজনীতিকরা অভিবাসন ও বাক স্বাধীনতা নিয়ে ভোটারদের উদ্বেগকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তার এ বক্তব্যে প্রতিনিধিরা এতটাই স্তম্ভিত হয়ে যান যে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের বলা কৌতুকেও তারা হাসতে ভুলে যান।
“যদি মার্কিন গণতন্ত্র ১০ বছর ধরে গ্রেটা থুনবার্গের তিরস্কার সহ্য করতে পারে, তাহলে আপনারাও ইলন মাস্কের কয়েক মাস সহ্য করতে পারবেন,” মজা করে বলেন ভ্যান্স।
এ রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট অবশ্য যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঠিকই দেখা করেছেন, যা নিয়ে ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বেশ উচ্ছ্বসিতও দেখা গেছে।
জেলেনস্কি বলেছেন, ভ্যান্সের সঙ্গে তার চমৎকার আলোচনা হয়েছে।
“এটা আমাদের প্রথম বৈঠক, শেষ যে নয় সেটা আমি নিশ্চিত “পুতিনকে থামানো এবং যুদ্ধ বন্ধের পরিকল্পনা তৈরিতে ওয়াশিংটন ও কিয়েভের আরও কথা বলা, একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে দিয়ে বলেন ইউক্রেইনের নেতা।
“আমরা সত্যিকার অর্থেই শান্তি চাই, খুব করেই চাই। কিন্তু আমাদের দরকার বাস্তবিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা,” বলেছেন তিনি।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও শান্তি চান, তবে সেটা তার শর্তে।
পুতিন চান, ইউক্রেইন কখনোই নেটোতে যোগ দেবে না এমন নিশ্চয়তা দিক এবং ক্রাইমিয়া, দনবাসসহ রাশিয়ার দখলে যেসব অঞ্চল আছে তার কথা ভুলে যাক।
কয়েকদিন আগে ট্রাম্পের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথও বলেছেন, ক্রাইমিয়াসহ বেশ কিছু অঞ্চল ফিরে পাওয়ার আশা ইউক্রেইনের জন্য ‘বাস্তবসম্মত নয়’।
কিইভের নেটোতে যোগ দেওয়ার আশায়ও পানি ঢেলে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র; পরে কখনো রাশিয়া ফের আক্রমণ চালালে ইউক্রেইনের সুরক্ষায় মার্কিন সেনা পাঠানোর প্রস্তাবও ওয়াশিংটন উড়িয়ে দিয়েছে।