যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে এ নিয়ে হামে ২ শিশুর মৃত্যু হল। রাজ্যটিতে এবছর এখন পর্যন্ত ৪৮০ জনেরও বেশি হাম আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
Published : 07 Apr 2025, 05:40 PM
যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম টেক্সাসে গত ফেব্রুয়ারিতে হামে এক শিশুর মৃত্যুর পর এবার দ্বিতীয় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অত্যন্ত সংক্রামক এই রোগ ছড়িয়ে গিয়ে গোটা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এবছর এখন পর্যন্ত ৬০০ পেরিয়ে গেছে।
টেক্সাসে গত বৃহস্পতিবার মারা যাওয়া দ্বিতীয় শিশুটির বয়স ছিল আট বছর। টেক্সাসের ইউএমসি হেলথ সিস্টেমের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যারন ডেভিস বিবিসি-কে বলেন, স্কুলগামী এই শিশু হামের জটিলতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তাকে হামের টিকা দেওয়া হয়নি এবং তার অন্তর্নিহিত কোনও স্বাস্থ্য সমস্যাও ছিল না।
হামের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র রোববার টেক্সাস সফর করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় এ রাজ্যটিতে এ বছরের শুরু থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ৪৮০ জনেরও বেশি হাম আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, গত সপ্তাহের শুরুতে এ সংখ্যা ছিল ৪২০। প্রাদুর্ভাব ছড়িয়েছে প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতেও।
ইউএমসি হেলথ সিস্টেমের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেভিস এক বিবৃতিতে বলেন, “এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা(শিশু মৃত্যু)টিকাদানের গুরুত্ব তুলে ধরে। হাম একটি অত্যন্ত সংক্রামক রোগ, যা গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যারা টিকা নেয়নি।”
বৃহস্পতিবার ভোরে মারা যাওয়া শিশুর বিষয়ে মন্তব্যের জন্য বিবিসি টেক্সাসের স্বাস্থ্য বিভাগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কোনও সংস্থাই শুক্রবার তাদের মামলার পরিসংখ্যানে শিশুটির তথ্য যোগ করেনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেনেডি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে শিশুটির মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি লেখেন, “আমার সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল-নীরবতা নেমে আসা পরিবারগুলোকে সান্ত্বনা দেওয়া এবং দুঃখের মুহূর্তে তাদের পাশে থাকা।”
তিনি এও জানান, টেক্সাসের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সমর্থন দিতে তিনি কর্মকর্তাদের নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। পাশাপাশি হামের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো কীভাবে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে তা বোঝার চেষ্টা করেছেন।
কেনেডি বলেন, টিকা, ওষুধ ও অন্যান্য সহায়তা দিতে মার্চ মাসের মতো তিনি একটি দল মোতায়েন করেছেন। হাম, মামস ও রুবেলা টিকার প্রসঙ্গ টেনে কেনেডি লিখেছেন, “হামের বিস্তার রোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হ'ল এমএমআর ভ্যাকসিন।”
গত ফেব্রুয়ারিতে টেক্সাসের স্থানীয় মেনোনাইট কমিউনিটির ছয় বছর বয়সী এক কন্যাশিশু মারা যায়, যা ছিল এক দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে হামে শিশু মৃত্যুর প্রথম ঘটনা। মার্চ মাসে নিউ মেক্সিকোতে ভাইরাস সংক্রমণের পর একজন মারা যায়, যার হামের টিকা নেওয়া ছিল না। যদিও তার মৃত্যুর কারণ এখনও তদন্তনাধীন রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প রোববার এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি মনে করেন, প্রাদুর্ভাব অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
“আমাদের আলোচনায় যে মাত্রার কথা আসছে- তার তুলনায় এখন পর্যন্ত মোটামুটি কম সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
“এটি এমন রোগ যার সম্পর্কে মানুষ বহু বছর ধরে জানে। এটা নতুন কিছু নয়।”
বিবিসি-র এক প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, “আমরা দেখব কী হয়। এটি বাড়তে থাকলে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। খুব কঠোর পদক্ষেপ।”
যুক্তরাষ্ট্রে বছরের এ পর্যন্ত ছয় শতাধিক হাম সংক্রমণের তথ্য নথিবদ্ধ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা-সিডিসি জানিয়েছে, গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২৮৫।
পশ্চিম টেক্সাসে এবার যে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে- বেশির ভাগ আক্রান্তই টিকা না নেওয়া। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউ মেক্সিকো, ওকলাহোমা এবং কানসাসের আক্রান্তরা সম্ভবত মূল প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হলে জ্বর, লাল ফুসকুড়ি, কাশি এবং অন্যান্য লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। ভাইরাসটি নিউমোনিয়া, মস্তিষ্ক ফোলাভাব এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
২০০০ সালে হাম নির্মূলের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ওই সময় থেকে ভ্যাকসিনবিরোধী মনোভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।
নিরাপদ প্রমাণিত টিকার দুটি ডোজ ভাইরাস প্রতিরোধে এবং গুরুতর সংক্রমণ কমাতে ৯৭ শতাংশ কার্যকর। আর হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যার প্রায় ৯৫ শতাংশকে অবশ্যই টিকা নিতে হবে।
হার্ড ইমিউনিটি অর্জন হলে একটি গোষ্ঠীর রোগ প্রতিরোধের যথেষ্ট ক্ষমতা থাকে; তখন রোগের বিস্তার তেমন হয় না এবং টিকা না নেওয়া ব্যক্তিরাও সুরক্ষিত থাকে।
সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাবটি এমন এক ধর্মীয় সম্প্রদায় থেকে ছড়িয়েছে, যারা প্রচণ্ড ভ্যাকসিন বিরোধী।
পশ্চিম টেক্সাসের স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বিবিসি-কে বলেছেন, টিকাদানের হার বাড়ানোর প্রচেষ্টায় তারা সীমিত অগ্রগতি দেখেছেন।
ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে কেনেডি শুরুতে নীরব প্রতিক্রিয়া দেখালে সমালোচনা শুরু করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
ভ্যাকসিন প্রশ্নে সংশয়বাদী কেনেডি শুরুতে পরিস্থিতিকে ‘অস্বাভাবিক নয়’ বলে বর্ণনা করেছিলেন।
বিবিসি লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রে এক দশকের মধ্যে গেল ফেব্রুয়ারিতে হামে আক্রান্ত প্রথম শিশুর মৃত্যুর পর তিনি তার মনোভাবে পরিবর্তন আনেন। তবে বাচ্চাদের টিকা দেওয়ার প্রশ্নে মা-বাবাদের পরামর্শ দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখেন কেনেডি। টিকার বিষয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করতে অভিভাবকদের উৎসাহিত করেন তিনি।
লুইজিয়ানার রিপাবলিকান সিনেটর বিল ক্যাসিডি টিকার বিষয়ে আরও জোরালো বার্তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ক্যাসিডি একজন চিকিৎসক, তিনি এর আগে টিকা নিয়ে কেনেডির সংশয়বাদী মনোভাবের সমালোচনা করেছিলেন।
ক্যাসিডি এক্স পোস্টে লিখেছেন, “সবাইকে টিকা নিতে হবে! হামের কোনও চিকিৎসা নেই। হামে আক্রান্ত হয়ে কোনও লাভ নেই। আর কোনও শিশুর যাতে মৃত্যু না হয়, সেজন্য শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দ্ব্যর্থহীনভাবে কথা বলা উচিত।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেনেডি মাঝে মাঝে হামের চিকিৎসা হিসেবে ‘ভিটামিন এ’র কথা প্রচার করেছেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে কেবল চিকিৎসকের নির্দেশনায় তা সরবরাহ করা উচিত। টেক্সাসের লুবকের কোভেন্যান্ট চিলড্রেনস হসপিটাল ভিটামিন এ বিষাক্ততার জন্য বেশ কয়েকটি শিশুকে চিকিৎসা দিয়েছে। ওই শিশুরা হামের জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিল।