উত্তরাখণ্ডের ঋষিকেশ নগরীর একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে শ্রমিকদের চিকিৎসা চলছে।
Published : 29 Nov 2023, 06:30 PM
হাঁটাহাঁটি, যোগব্যায়াম আর মোবাইলে গেম- ভূগর্ভের অন্ধকারে ১৭ দিন মনোবল চাঙ্গা রেখেছে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকা পড়া শ্রমিকদের।
মঙ্গলবার টানেল থেকে মুক্ত মেলার পর এমনটাই জানিয়েছেন তারা। বর্তমানে উত্তরাখণ্ডের ঋষিকেশ নগরীর একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সংবাদ মাধ্যমে তাদের একটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, তারা হাসপাতালে শয্যায় বসে খাবার খাচ্ছেন। তাদেরকে দেখে সুস্থই মনে হচ্ছে।
গত ১২ নভেম্বর রাজ্যের উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারায় একটি হাইওয়ে সুড়ঙ্গের একাংশ ধসে পড়লে ভেতরে আটকা পড়ে যান ৪১ শ্রমিক।
নানা বাধা-বিপত্তি আর আশা-নিরাশার দোলাচালে ১৬ দিন পার করার পর সপ্তাদশ দিন সন্ধ্যার পর তাদের একে একে টানেল থেকে বের করে আনা হয়।
ধ্বংসস্তুপের ভেতর প্রবেশ করানো তিন ফুট চওড়া একটি পাইপের ভেতর দিয়ে তারা মুক্ত আকাশে বেরিয়ে আসেন। সেখান থেকে তাদের স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
মঙ্গলবার রাত সেখানে পার করার পর বুধবার সকালে ঋষিকেশের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
চামরা ওরাঁ নামে আটকে পড়া এক শ্রমিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, এমনও সময় গেছে যখন তিনি সুড়ঙ্গের ভেতর খুব অস্থির বোধ করেছেন এবং বার বার তার মনে হতো কখন তাকে বের করে নেওয়া হবে।
“কিন্তু আমি কখনো নিরাশ হইনি। মোবাইলে নেটওয়ার্ক না থাকায় আমরা কাউকে ফোন করতে পারিনি। কিন্তু আমরা ভেতরে একে অপরের সঙ্গে কথা বলতাম এবং নিজেদের সম্পর্কে জানতাম।
“উদ্ধারকর্মীরা পাইপের মধ্য দিয়ে পোর্টেবল চার্জার পাঠানোর পর আমি মোবাইলে গেমস খেলেও সময় পার করেছি।”
উদ্ধার পাওয়া শ্রমিকদের একজন ফোনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, তারা একে অন্যকে সাহস যোগাতেন এবং সবাই একসঙ্গে বসে খাবার খেতেন।
“টানেলের ভেতর নিজেদের চাঙ্গা রাখতে আমরা হাঁটাহাঁটি করতাম এবং যোগব্যায়াম করতাম।”
আরেক শ্রমিক জানান, শুরুতে মোবাইলের চার্জ বাঁচাতে তিনি শুধু মাঝে মধ্যে সময় দেখতেন। কিন্তু উদ্ধারকর্মীরা পাইপ দিয়ে চার্জার পাঠানোর পর ফোনে গেমস খেলে বা অন্যান্য ভাবে নিজেদের বিনোদনের ব্যবস্থা করতেন।
বীরেন্দ্র কিশকু নামে আরেক শ্রমিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “প্রথম দিকে সুড়ঙ্গের ভেতর সবাই খুবই হাতাশ এবং দুঃখী হয়ে পড়েছিল। আমরা যে সুড়ঙ্গের ভেতর আটকা পড়ে আছি এটা বাইরের কেউ বুঝতে পেরেছে কিনা সেটা আমরা জানতাম না।
“কিন্তু যখন উদ্ধারকর্মীরা একটি পাইপের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলো তখন আমরা জানতে পারলাম, সরকার আমাদের বের করে আনতে কি কি করছে। আমি, আমার পরিবার এবং আমার পুরো গ্রাম এখন খুব খুশি।”
ঋষিকেশ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, শ্রমিকদের সবাই ভালো আছেন। কিন্তু এও বলেছেন, তাদের সবার দীর্ঘমেয়াদে সহায়তার প্রয়োজন পড়বে। এমনকি, ভয়াবহ এই অভিজ্ঞতা তাদের পরবর্তী জীবনে প্রভাব ফেলছে কিনা সেটাও নজরে রাখতে হবে।