'বোমা ফেলার নির্দেশ আছে, আপনার হাতে সময় দুই ঘণ্টা'

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ফোন করে এভাবেই হামলার সতর্কবার্তা দিয়ে লোকজনকে স্বল্প সময়ের মধ্যে সরে যেতে বলা হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2023, 07:18 PM
Updated : 8 Nov 2023, 07:18 PM

গত ১৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে গাজা স্ট্রিপের উত্তরের শহর আল-জাহরার বাসিন্দা মাহমুদ শাহীনের মোবাইলে একটি কল আসে। সেটি ছিল গাজায় ইসরায়েলের বোমা বর্ষণের দ্বাদশ দিন। কিন্তু তখনও আল-জাহরায় বোমা হামলা হয়নি।

আল-জাহরায় মধ্যবিত্তদের একটি এলাকায় একটি বহুতল ভবনের চতুর্থ তলায় তিন বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন দন্তচিকিৎসক ৪০ বছরের মাহমুদ। বৃহস্পতিবার ভোরে বাইরে প্রচণ্ড কোলাহল শুনে তিনি ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। তাকে দেখে কেউ একজন চিৎকার করে বলে ওঠেন, “আপনাকে পালাতে হবে, কারণ তারা ভবনে বোমা ফেলবে।”

এ কথা শুনে যখন তিনি ভবন ছেড়ে বেরিয়ে রাস্তা পার হয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছিলেন তখনই তার ফোনটি বেজে ওঠে। একটি প্রাইভেট নম্বর থেকে সেই ফোনটি এসেছিল।

মাহমুদ জানান, ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে একজন পুরুষ কণ্ঠ বলে ওঠে, “আমি ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আপনার সঙ্গে কথা বলছি।”

তাদের সেই ফোনালাপ একঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে। মাহমুদ বলেন, সেটি ছিল তার জীবনে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ফোনালাপ। ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি বলেন, “আমরা তিনটি ভবনে বোমা বর্ষণ করব।”

মাহমুদ বলেন, “তিনি আমাকে পুরো নাম ধরে ডাকছিলেন এবং বলেছিলেন, তিনটি ভবনে বোমা ফেলা হবে। আমাকে আশেপাশের এলাকা খালি করে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।”

মাহমুদ যে ভবনটিতে থাকেন সেটি হামলার লক্ষ্য বস্তু ছিল না। তবে হঠাৎ করেই তার কাঁধে শত শত মানুষকে উদ্ধার করার দায়িত্ব এসে পড়ে। তিনি বলেন, “অনেক মানুষের জীবন তখন আমার হাতে।”

মাহমুদকে যিনি ফোন করেছিলেন, তিনি নিজেকে আবু খালেদ বলে পরিচয় দেন। মাহমুদ তাকে ফোন কেটে না দেওয়ার অনুরোধ করেন।

মাহমুদ জানেন না কেনো তাকে সেইদিন লোকজনকে সরিয়ে নিতে বেছে নেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি তার যথাসাধ্য চেষ্টা করে তার এলাকার লোকজনদের জীবন রক্ষা করেছিলেন।

অপরিচিত ওই কণ্ঠস্বর সেদিন মাহমুদকে পরিচালিত করেছিল। এমনকি তার এটাও মনে হচ্ছিল, যদি তার ফোনের ব্যাটারি ফুরিয়েও যায় তবুও তারা তাকে খুঁজে পাবে।

মাহমুদ ওই ব্যক্তিকে বোমা বর্ষণ বন্ধ করার অনুরোধ করেছিলেন এবং গলা ব্যথা হয়ে যাওয়ার পরও তিনি চিৎকার করে করে প্রতিবেশীদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলেছিলেন। সব শেষে নিজের চোখে তিনি প্রতিবেশীদের ভবন বোমার আঘাতে বিস্ফোরিত হতে দেখেন।

হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বোমা বর্ষণের আগে কখনো কখনো গাজার কোনো কোনো বাসিন্দাকে ফোন করে সতর্ক করে। মাহমুদ তেমন ফোনকল সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন।

বিবিসি এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে আল-জাহরার একাধিক বাসিন্দা তাকে চিনতে পারেন। যাকে তারা সর্তক ফোন পাওয়া ব্যক্তি বলে বর্ণনা করেন।

ঘটনার প্রায় তিন সপ্তাহ পর বিবিসি মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাই তার দেয়া তথ্য সংবাদ মাধ্যমটি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। তবে মাহমুদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে ফেসবুকে পাওয়া তথ্য ও বোমা হামলার আগের ও পরের স্যাটেলাইট চিত্রে মিল খুঁজে পাওয়া গেছে।

‘এটা যে সত্য তা প্রমাণ দিন’

মাহমুদ ফোন পাওয়ার পর শুরুতে অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তির কথা বিশ্বাস করেননি। কারণ, তার চারপাশের লোকজন তাকে বলেছিল, এ ধরণের ফোনকল ভুয়া হতে পারে। যুদ্ধ শুরুর পর ফেসবুকে এ ধরণের ভুয়া ফোনকল আসার বিষয়ে সতর্ক করা হয়। তাই মাহমুদ ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে তিনি যে সত্য কথা বলছেন তা প্রমাণে একটি ‘ওয়ার্নিং শট’ মারতে বলেন। তিনি ভাবছিলেন, যদি সতর্ক করে গোলা ছোড়ে তবে তার শব্দে যারা এখনো ঘুমিয়ে আছে, রাস্তার কোলাহল শুনতে পাচ্ছে না তারাও জেগে উঠবে।

মাহমুদকে প্রমাণ দিতে আপাততদৃষ্টিতে কোথাও থেকে একটি ‘ওয়ানিং শট’ মারা হয়। সেটি খুব সম্ভবত ড্রোন থেকে ছোড়া হয় এবং যে অ্যাপার্টমন্টে ভবনগুলো হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে সেগুলোর একটিতে আঘাত হানে।

“আমি তাকে মূল বোমা হামলার আগে আরেকবার ওয়ানিং শট মারতে অনুরোধ করি।”

মাহমুদ বুঝতে পারেন ঘটনা সত্যিই ঘটতে চলেছে। তাই তিনি চেষ্টা করেন ওই ব্যক্তিকে খনিক্ষণ দেরি করাতে। এবং মাথা ঠান্ডা করে ওই ব্যক্তিকে বলেন, “লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার সময় আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে বোমা হামলা চালাবেন না।”

অপরপ্রান্ত থেকে মাহমুদকে আশ্বস্ত করা হয়। বলা হয়, তিনি চান না কেউ মারা যাক।

ফোন লাইনে রেখেই মাহমুদ প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি ছুটে যান এবং লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলেন। পরে তার সঙ্গে তার প্রতিবেশীরাও যোগ দেন।

সেদিন ভোরে শান্ত শহরটির রাস্তায় শত শত মানুষ চিৎকার করতে করতে দৌড়াতে থাকে। কেউ কেউ তাদের রাতে ঘুমানোর পোশাক বা প্রার্থনার পোশাকেই ছিলেন।

মাহমুদ বুঝতে পারছিলেন না কেনো তার এলাকা হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। বলেন, “আমি তাকে থামানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছি, কেনো আপনি বোমা হামলা করতে চাইছেন?

“জবাবে তিনি বলেন, ‘সেখানে এমন কিছু আছে যেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি কিন্তু আপনারা দেখতে পারছেন না’। এটা আমার-আপনার থেকে বড় মানুষের নির্দেশ এবং আমাদের বোমা হামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

পুরো এলাকা খালি হয়ে যাওয়ার পর ওই ব্যক্তি ফোনে মাহমুদকে জানান, এবার বোমা হামলা শুরু হবে। মাহমুদ তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, “যদি ভুল লক্ষ্যে বোমা হামলা হয়, তবে কী হবে?” জবাবে ওই ব্যক্তি বলেছিলেন, “কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।”

এর পরপরই আকাশে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান দেখা যায়। তার অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের পাশেই তিনটি ভবনের একটিতে বোম হামলা হয়।

অপর প্রান্ত থেকে মাহমুদকে ফোনে বলা হয়, “আমরা এই ভবনটিই চাইছিলাম।, দূরে থাকুন।”

পরে আরো দুটো ভবনও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

বোমা হামলা থামার পর ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে মাহমুদকে বলা হয়, “আমাদের কাজ শেষ…আপনি এখন ফিরে যেতে পারেন।”

সেদিন মাহমুদ চোখে সামনে যা দেখেছেন সেটা আজও তিনি বুঝতে পারেননি। গাজার ওই শহরে তিনি গত ১৫ বছর ধরে বসবাস করছেন এবং দন্তচিকিৎসক হিসেবে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। তার সন্তানরা সেখানে বড় হচ্ছিল।

মাহমুদ বলেন, “আমি তাকে বলেছিলাম আল-জাহরা বেসামরিক মানুষদের এলাকা। এখানে কোনো অচেনা মানুষ নেই…আমি তাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলাম। বলেছিলাম, এটা সীমান্ত এলাকা নয়..আগে কখনো সংঘাতও হয়নি। এটা সব সময় লড়াই-সংঘাত থেকে বাইরে থেকেছে।”

আবারও ফোন:

সেদিন রাতেই আবারও একটি প্রাইভেট নম্বর থেকে মাহমুদের ফোনে কল আসে। সবে নিজের ফ্ল্যাটে এশার নামাজ শেষ করেছেন তিনি। ফোনে একটি মিসড কল দেখে তার বুক অজানা শঙ্কায় কেঁপে ওঠে। তিনি আবারও বোমা হামলা চালানোর ভয় পান। এবার কী তাবে তার অ্যাপার্টমেন্টই হামলার লক্ষ্যবস্তু?

কিছুক্ষণ পর তার ফোন আবার বেজে ওঠে। এবার অপর প্রান্তে ছিলেন অন্য কেউ। যিনি নিজেকে দাউদ নামে পরিচয় দেন এবং বলেন, তারা বুঝতে পেরেছেন মাহমুদ ‘একজন বুদ্ধিমান মানুষ’। তাই তিনি সকালে যা করেছেন সেটা আবারও তাকে করতে হবে।

ওই লোক মাহমুদের জীবন সম্পর্কে এত বিস্তারিত বর্ণনা দিতে থাকেন যে মাহমুদ নিজেই খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। লোকটি তার ছেলের নাম পর্যন্ত বলেন।

মাহমুদ বলেন, প্রথমে ওই ব্যক্তি গাজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন, হামাসের সমালোচনা করেন। তারপর বলেন, আরো দুটি ভবনে সেই রাতে হামলা হবে। তাকে আবারও লোকজনদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে বলা হয়।

উত্তরে মাহমুদ বলেছিলেন, এ কাজে তার সময় দরকার।।

মাহমুদকে ফোনে শুরুতে দুইটি ভবনের কথা বলা হলেও পরে জানানো হয় সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এসেছে। এবং দুইটি নয় বরং সেখানে আরো কয়েকটি ভবনে হামলা হবে। যে সংখ্যা ২০টিতে পর্যন্ত গিয়ে ঠেকতে পারে।

মাহমুদ বলেন, তারা সড়কের পূর্বপ্রান্তের পুরো অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ধরে হামলা চালাতে চায়। সেখানে ২০টির বেশি ভবনে কয়েকশ ফ্ল্যাট ছিল।

“আমি ফোনে বললাম, ওই সব ভবনের বিষয়ে আগে সতর্ক করা হয়নি। সেখানে প্রচুর মানুষ রয়েছে যাদের এখনো সরিয়ে নেওয়া হয়নি। আমাদের অন্তত সকাল পর্যন্ত সময় দিন। এই রাতে মানুষজন কোথায় যাবে?

“উত্তরে তিনি বলেন, ‘আদেশ এসে গেছে এবং আমরা দুই ঘণ্টার মধ্যে সব ভবনে বোমা হামলা চালাব’।”

তারপরই মাহমুদ চিৎকার করে লোকজনকে সরে যেতে বলেন। তিনি এক ব্লক থেকে আরেক ব্লকে দৌড়াতে আর চিৎকার করতে থাকেন।

বাসিন্দারা ভয়ে আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকে। শিশুরা কাঁদতে থাকে। হুড়োহুড়িতে বাবা-মা থেকে শিশুরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সে এক ভয়াবহ রাত।

তবে এত কিছুর মধ্যেও মাহমুদ ফোন ওই ব্যক্তির সাথে কথা চালিয়ে যেতে থাকেন এবং চেষ্টা করতে থাকেন হামলায় যেনো দেরি করানো যায়।

মাহমুদ বলেন, এমনকি ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে নির্লিপ্তভাবে আমাকে এটাও বলে, ‘আপনি সময় নিন। আপনি অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত আমরা বোমা হামলা করবো না’।

“আমি চিৎকার করে বলি, না, এটা আমার অনুমতি নয়। আমি চাই না আপনি কোথাও বোমা ফেলুন। যদি আমাকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে বলেন তবে আমি লোকজনের নিরাপত্তার জন্য তাদের সরিয়ে নিব। কিন্তু যদি বোমা হামলা করতে চান তবে আমার অনুমতি নেওয়ার কথা বলবেন না। মাহমুদ শাহীন আল-জাহরাতে বোমা ফেলার অনুমতি দেবে না।”

সেই রাতে শেষ পর্যন্ত ফোনকলের সতর্কতা অনুযায়ী ইসরায়েলের হামলা হয়েছিল। হামলার পরের ধ্বংসস্তূপের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সেদিন রাত সোয়া ৯টার দিকে ফেসবুকে একটি পোস্টে বলা হয়, ‘আল-জাহরার ভবনগুলোয় মাত্র বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। সৃষ্টিকর্তা আমাদের ক্ষমা করুক।’

সেবারই শেষ নয়, এরপরও ফোনকল এসেছে মাহমুদের কাছে। তাতে নতুন করে হামলার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। মাহমুদ বলেন, “তারা আমাকে ফোন করে আর বলে, এবার আরেকটি ভবনে তারা বোমা ফেলবে। তারপর আরেকটি। তারা বলেছে, যতক্ষণ না আমাদের কাজ শেষ হবে, ততক্ষণ আপনাকে ফোন করতে থাকব।”

এক পর্যায়ে মাহমুদকে ফোনে না পেয়ে তার এক প্রতিবেশীর ফোন করে এই দন্তচিকিৎসককে চাওয়া হয়। মাহমুদ সব সময় তার স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান থেকে দূরে থাকতেন। তার দুটো কারণ ছিলো, এক তিনি সব সময় লোকজনকে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত থাকতেন এবং দ্বিতীয় কারণ হলো, তার মনে হয়েছিল যেহেতু ইসরায়েলি গোয়েন্দারা তার সঙ্গেই যোগাযোগ করছে। তাই তিনি তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারেন।

সেই রাতে আল-জাহরার বাসিন্দারা ইউনিভার্সিটি অব প্যালেস্টাইন এর ক্যাম্পাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। মাহমুদ বলেন, এরপর কী হবে সেটা জানতে সবাই তার দিকে তাকিয়ে ছিল। তারা বলছিল, “হেই ডাক্তার, তারা কী আর ফোন করেছে, আমরা কি এবার বাড়ি ফিরতে পারবো? তারা কী তোমাকে বলেছে এরপর কোথায় হামলা হবে?”

সে রাতে সব কিছু নিরব না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত মাহমুদ ফোনে দাউদের সঙ্গে কথা বলে যান। কিন্তু আল-জাহরার বাসিন্দারা কী করবে সে বিষয়ে কোনো আপডেট না দিয়েই একসময় লাইন কেটে যায়।

“তারা আমাদের বাড়িতে ফিরে যেতে বলেনি। এমনকি সরে যেতে বা এই এলাকা ছেড়ে যেতেও বলেনি। তাই লোকজন পরদিন দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর আস্তে আস্তে চলে যেতে শুরু করে। পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা বা দিনে গাজার অন্যান্য এলাকার মত আল-জাহরাও ভেঙে পড়ে।

মাহমুদ বলেন, “এমনকি যাদের বাড়ি তখনও দাঁড়িয়ে ছিল তারাও থাকতে পারছিলেন না। কারণ, সব পরিষেবা ভেঙে পড়েছিল। শহরের ড্রেনগুলো কাজ করছিল না। বেকারি নেই, সুপার মার্কেট নেই, এমনকি পানি-বিদ্যুৎও নেই।”

পরিবার নিয়ে গাজার অন্য অঞ্চলে চলে যান মাহমুদ। সেখানে তিনি তার এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেন। যেখানে আরো অনেক মানুষ ছিল।

নিজের বাড়ি বা ক্লিনিকের কথা সে সময় তার মনে আসেনি। বরং বেঁচে গেছেন এবং এখনো জীবিত আছেন এজন্য তিনি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন। বলেন, “বস্তুগত জিনিসের আসলে কোনো অর্থ নেই। আপনি যেকোনো সময় মারা পড়তে পারেন। আমরা তাই আর কিছু নিয়েই ভাবতে পারছি না।”