Published : 08 Apr 2025, 07:56 PM
অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধকালীন ‘বহিঃশত্রু আইন’ প্রয়োগে বাধা কাটল। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের এই আইন প্রয়োগের পক্ষে রায় দিয়েছে। এর ফলে ট্রাম্প এখন দ্রুতই ভেনেজুয়েলার গ্যাং সদস্যদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করতে পারবেন।
১৭৯৮ সালের ‘বহিঃশত্রু আইন’প্রয়োগ করে ভেনেজুয়েলার অপরাধচক্র ‘ত্রেন দে আরাগুয়া’–এর সদস্যদের দ্রুত এল সালভাদরে পাঠাতে চেয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু আইনটি প্রয়োগের ওপর স্থগিতাদেশ দেন মার্কিন একটি ফেডারেল আদালতের বিচারক।
গত ১৫ মার্চ ওই স্থগিতাদেশ দেওয়ার সময়ই ভেনেজুয়েলান গ্যাং সদস্যদের নিয়ে বিমান উড্ডয়নের খবর শুনতে পেয়ে বিমানটিকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশও দেওয়া হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত দুই শতাধিক গ্যাং সদস্য নিয়ে ফ্লাইটটি এল সালভাদরে পৌঁছে যায়।
এতে ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখেছিলেন বিচারক। ওদিকে, বিচার বিভাগের আইনজীবীদের ভাষ্য ছিল, বিচারক ফ্লাইট ফিরিয়ে আনার লিখিত আদেশ দিতে দেরি করায় ফ্লাইটটি আর ফেরানোর দরকার হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে তা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। অবশেষে নিম্ন আদালতের স্থগিতাদেশ তুলে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষেই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের পাঁচ বিচারক রায়ের পক্ষে ছিলেন এবং বিপক্ষে ছিলেন চার জন।
রায়ের পর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থার জন্য এ এক দারুণ দিন।” স্যোশাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, “দেশে আইনের শাসন বজায় রাখল সুপ্রিম কোর্ট।”
তবে ট্রাম্পের পক্ষে রায় দিলেও সুপ্রিম কোর্ট যুদ্ধকালীন আইনটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু গন্ডিও বেঁধে দিয়েছে। আদালত স্পষ্টই বলেছে, আইনটি যার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হবে তাকে এ বিষয়ে যথাযথভাবে জানাতে হবে। তার আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগও থাকতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রায়ে জানিয়ে দিয়েছেন, যুদ্ধকালীন আইনে কোনও অবৈধ অবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার আগে তার হাতে যথেষ্ট সময় দিয়ে নোটিস ধরাতে হবে। সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি নোটিসের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন।
ভেনেজুয়েলার গ্যাংসদস্যদের বিতাড়নের পক্ষে ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি হল- যুক্তরাষ্ট্র অপরাধ চক্রের আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে, যে চক্রটি অপহরণ, চাঁদাবাজি, সংঘবদ্ধ অপরাধ এবং চুক্তিভিত্তিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত।
যুদ্ধকালীন আইনের আওতায় একজন প্রেসিডেন্ট কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের টার্গেট করা এবং তাদেরকে দ্রুত ফেরত পাঠানোর বিপুল ক্ষমতা পেয়ে যান।
যুক্তরাষ্ট্র কোনও দেশের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থায় থাকলে বা কোনও দেশ যুক্তরাষ্ট্রে আগ্রাসন চালিয়ে বসলে কিংবা আগ্রাসনের হুমকি দিলে সেক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্যই আইনটি তৈরি করা হয়েছিল।
কিন্তু বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র কোনও যুদ্ধের মধ্যে বা হুমকির মুখে নেই। এমন একটি শান্তিপূর্ণ সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের যুদ্ধকালীন আইন প্রয়োগ চাওয়ার সমালোচনা করেছিল সিভিল লিবার্টিজ সংগঠনগুলো। আর এখন সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।