স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র যে কৌশলে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে উত্তেজনা হ্রাস করেছিল তার অন্যতম কারিগর ছিলেন কিসিঞ্জার
Published : 18 Dec 2022, 06:45 PM
আরেকটি বিধ্বংসী বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমাতে এখনই ইউক্রেইনের শান্তি ফেরানোর আলোচনা শুরু করা উচিত বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের ঝানু কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র যে কৌশলে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে উত্তেজনা হ্রাস করেছিল তার অন্যতম কারিগর ছিলেন এই কিসিঞ্জার। যিনি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তিনি কয়েকবারই সরাসরি সাক্ষাৎ করেছেন।
দ্য স্পেকট্যাটর ম্যাগাজিনে কিসিঞ্জার ‘কীভাবে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ এড়ানো যায়’ শিরোনামে একটি লেখা লেখেন। ওই লেখায় তিনি বলেন, ‘‘যেসব কৌশলগত পরিবর্তন এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছেসেগুলোর আরও শক্ত ভিত গড়ে তোলার এবং আলোচনার মাধ্যমে শান্তি অর্জনের লক্ষ্যে তাদের একটি নতুন কাঠামোতে সংহত করার সময় হয়ে আসছে।”
‘‘একটি শান্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইউক্রেইনকে নেটোর সঙ্গে যুক্ত করা উচিত,যদিও এ ইচ্ছা এরই মধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। নিরপেক্ষ থাকার বিকল্প এখন আর অর্থবহ নয়।”
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে নেটোর সদস্যপদ পাওয়ার আবেদন করে ইউক্রেইন।
কিসিঞ্জার আরও বলেছেন,তিনি গত মে মাসে যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যেখানে ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার যে সেনারা ইউক্রেইনে প্রবেশ করেছে তাদের প্রত্যাহার করে নেওযার কথা বলা হয়। তবে ক্রাইমিয়া নিয়েও ‘আলোচনা’ করতে হবে।
গণবিক্ষোভের মাধ্যমে ইউক্রেইনের রুশপন্থি প্রেসিডেন্টকে উৎখাতের পর ২০১৪ সালে পূর্ব ইউক্রেইনে গৃহযুদ্ধ বেধে যায়। ইউক্রেইনের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট পূর্ব ইউক্রেইনের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলো যুদ্ধ করে। যে যুদ্ধে রাশিয়া ইউক্রেইনের কাছ থেকে ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নিজেদের সঙ্গে সংযুক্ত করে নেয়।
বর্তমানে ইউক্রেইন যুদ্ধ যে অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না। ১০ মাসের যুদ্ধে এরইমধ্যে শতশত মানুষ নিহত হয়েছেন,লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে দেশে এবং দেশের বাইরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। রাশিয়ার হাতে বর্তমানে ইউক্রেইনের প্রায় একপঞ্চমাংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
ক্রেমলিন থেকে দাবি করা হয়েছে,যেকোনো ধরণের শান্তি আলোচনা শুরুর আগে কিইভ এবং পশ্চিমাদের রাশিয়ার দখল করা ইউক্রেইনের অঞ্চলগুলোর স্বীকৃতি দিতে হবে।
অন্যদিকে কিইভ সিদ্ধান্ত নিয়েছে,তাদের মাটিতে এমনকি ক্রাইমিয়াতেও একজন রুশ সেনা থাকা অবস্থায় তারা কোনো ধরনের আলোচনা বা যুদ্ধবিরতিতে যাবে না। তাদের আশঙ্কা,যদি তারা যুদ্ধবিরতিতে যায় তবে সেই সুযোগে রাশিয়া পুনরায় শক্তি সংগ্রহ করে নতুন বেগে আক্রমণ করবে।
গত কয়েকমাসে রুশ সেনারা সেখানে রক্ষণাত্মক কৌশলে যুদ্ধ করছে। রুশ সেনাদের দখল থেকে খারকিভ ও খেরসনসহ কয়েকটি অঞ্চল সম্প্রতি উদ্ধার করেছে ইউক্রেইনের সেনারা।
এ বিষয়ে পরামর্শ দিতে গিয়ে ৯৯ বছরের কিসিঞ্জার লেখেন,২০১৪ সালে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে যেভাবে স্থিতিশীলতা ফিরেছিল যদি এবার সেটা অসম্ভব বলে মনে হয় তবে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি দলের তত্ত্বাবধানে রাশিয়ার দাবিকৃত অঞ্চলে গণভোট আয়োজন একটি বিকল্প হতে পরে।
ইউক্রেইন যুদ্ধকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ নাম দিয়েছেন। তিনি বলেন,এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে রাশিয়াকে টুকরো টুকরো করার যে ষড়যন্ত্র পশ্চিমারা করেছে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।
কিসিঞ্জার সাবধান করে দিয়ে বলেন,রাশিয়াকে ‘দুর্বল’ করে দেওয়া বা ধ্বংস করে দেওয়ার ইচ্ছা আরও বড় বিশৃঙ্খলার জন্ম দিতে পারে। ইউক্রেইন বা পশ্চিমা কোনো দেশের এই পথ অনুসরণ করা উচিত হবে না।
বলেন, ‘‘রাশিয়ার বিলুপ্তি বা কৌশলগত নীতির জন্য এর ক্ষমতা ধ্বংস করার ইচ্ছা ১১টি টাইম জোন জুড়ে বিস্তৃত অঞ্চলটিতে যে শূন্যতা তৈরি হবে তা পূরণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হতে পারে।
‘‘এবং এর প্রতিযোগী পক্ষগুলো সহিংসতার মাধ্যমে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অন্যান্য দেশ জোর করে তাদের দাবি প্রসারিত করতে চাইতে পারে। হাজার হাজার পারমাণবিক অস্ত্রের উপস্থিতি দ্বারা এই সমস্ত বিপদ আরও বৃদ্ধি পাবে।”
বিশ্বের বৃহৎ দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের একটি রাশিয়া।