Published : 27 Mar 2025, 03:10 PM
উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত (এআই) আত্মঘাতী ড্রোনের পরীক্ষা তত্ত্বাবধান করেছেন এবং বলেছেন, আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের বিকাশে মনুষ্যবিহীন নিয়ন্ত্রণ ও এআই সক্ষমতাকে সবেচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এসব জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
স্থলভাগে ও সমুদ্রে শত্রুপক্ষের কার্যকলাপ এবং নানান কৌশলগত নিশানা শনাক্তে সক্ষম এমন উন্নতমানের নতুন গোয়েন্দা ড্রোনও পরিদর্শন করেছেন কিম।
“সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে ও বিকাশে মনুষ্যবিহীন সরঞ্জাম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত,” কিম এমনটাই বলেছেন বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে কেসিএনএ।
পারমাণবিক শক্তিধর উত্তর কোরিয়া এবারই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে আগাম সতর্কতা দিতে সক্ষম এমন একটি এয়ারক্রাফটও প্রকাশ্যে এনেছে। এটি দেশটির পুরনো বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক ছবিতে কিমকে চার ইঞ্জিনবিশিষ্ট, গায়ে গোলাকার চাকতি আকারের রাডার বসানো একটি উড়োজাহাজের সিঁড়িতে দেখা গেছে, মনে হচ্ছে তিনি যানটিতে ঢুকছেন। আরেকটি ছবিতে বোঝা যাচ্ছে, তিনি এয়ারক্রাফটটির নিচু দিয়ে ওড়া পর্যবেক্ষণ করছেন।
উত্তর কোরিয়া যে তাদের পুরনো রুশনির্মিত ইল-৭৬ কার্গো এয়ারক্রাফটকে এক ধরনের আগাম-সতর্কতাসমৃদ্ধ উড়োযানে রূপান্তরের চেষ্টা করছে, বাণিজ্যিক উপগ্রহের ছবি দেখে বিশ্লেষকরা তা আগেই অনুমান করছিলেন।
এই ধরনের এয়ারক্রাফট উত্তর কোরিয়ার এখনকার স্থলভিত্তিক রাডার ব্যবস্থাপনার কার্যকারিতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে বলে সেপ্টেম্বরে এক প্রতিবেদনে বলেছিল লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ।
কোরীয় উপদ্বীপের পাহাড়ি অনেক অঞ্চলে পিয়ংইয়ংয়ের এখনকার রাডার ব্যবস্থাপনা খুব একটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না।
তবে একটি আগাম-সতর্কতাসমৃদ্ধ এয়ারক্রাফটে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না, সে কারণে উত্তর কোরিয়া হয়তো তাদের বহরে থাকা বাকি বিমানগুলোকেও এই ধরনের উড়োযানে রূপান্তর করার ঝুঁকি নেবে, বলা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, উত্তরের এই উড়োজাহাজের সক্ষমতা কেমন তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট হওয়া না গেলেও এর আকার দেখে মনে হচ্ছে এটি ‘বিশাল ও ভারী এবং সম্ভবত সহজেই একে শনাক্ত ও ভূপাতিত করা যাবে’।
“যদিও এয়ারক্রাফটটি এখনকার বহরে থাকা বিমান সংস্কার করে করা, তাও রাশিয়া হয়তো এর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ও যন্ত্রাংশে কিছু একটা করে থাকতে পারে,” উত্তর কোরিয়ার নতুন এয়ারক্রাফটটিতে রাশিয়ার সম্ভাব্য সহযোগিতা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ব্রিফিংয়ে এমনটাই বলেছেন দক্ষিণের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের মুখপাত্র লি সাং-জুন।
ইউক্রেইন যুদ্ধে সেনা পাঠিয়ে পিয়ংইয়ং যে সহায়তা করেছে, তার বদলে রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও অজ্ঞাত বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম দিয়েছে বলে নভেম্বরে দাবি করেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিন ওন-সিক।
আলাদা এক পরিদর্শনে কিম নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, ইলেকট্রনিক জ্যামিং ও আক্রমণ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট নতুন বানানো সরঞ্জামও দেখেছেন, বৃহস্পতিবার জানিয়েছে কেসিএনএ।
তাদের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মনুষ্যবিহীন একটি ড্রোন ট্যাংক আকৃতিক একটি লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং পরে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে গেছে।
অন্য এক ছবিতে কিমকে সহযোগীদের নিয়ে টারমাকে হাঁটতে দেখা গেছে, পেছনে পার্ক করে রাখা আছে একটি নজরদারি ড্রোন, যার সঙ্গে অনেক উপর দিয়ে উড়তে সক্ষম মার্কিন নজরদারি এয়ারক্রাফট আরকিউ-ফোর গ্লোবাল হকের ব্যাপক সাদৃশ্য পাওয়া যাবে।
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে মস্কোর পক্ষে নামা উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা ড্রোন যুদ্ধে অংশ নিয়ে বাস্তবিক যুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করছে বলেই বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন।