ডিসেম্বরে ক্ষমতা দখল করা আহমেদ আল-শারার সরকারের জন্য পশ্চিম সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে চলমান এ বিদ্রোহকেই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
Published : 08 Mar 2025, 11:50 AM
ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের আলাউইত সম্প্রদায়ের যোদ্ধাদের করা বিদ্রোহ দমাতে তুমুল লড়াই চালাচ্ছে সিরিয়ার বর্তমান ইসলামপন্থি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী।
ডিসেম্বরে ক্ষমতা দখল করা আহমেদ আল-শারার সরকারের জন্য পশ্চিম সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে চলমান এ বিদ্রোহকেই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে, বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
দেশটিতে সংঘাতের খোঁজখবর রাখা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত সংখ্যালঘু আলাউইত অধ্যুষিত এলাকায় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের দুইদিনের সংঘাতেই ১৮০ জনের বেশি নিহত হয়েছে।
এর মধ্যে শুক্রবার বন্দুকধারীদের হাতে নিহত আলাউইত শহর আল মুখতারিয়ায় দুই ডজন পুরুষ বাসিন্দাও আছে, অঞ্চলটিতে অবস্থান করা লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ ও ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজের বরাত দিয়ে জানিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস ও দুই আলাউইত অধিকারকর্মী।
সংঘাত নিয়ে করা প্রথম মন্তব্যে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট শারা বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত বাশার আল-আসাদ সরকারের ‘অবশেষ’ দমনে ও তাদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারি বাহিনী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
যারা বেসামরিকদের ওপর আক্রমণ করছে, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ বলছে, বৃহস্পতিবার আসাদ সমর্থকরা তাদের বাহিনীর ওপর সুপরিকল্পিত ও মারাত্মক আক্রমণ চালালে সহিংসতা শুরু হয়।
মাসকয়েক আগে ক্ষমতা নেওয়া শারার প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলতে ও দক্ষিণপশ্চিমে ইসরায়েলসৃষ্ট নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছিল। তার মধ্যে আলাউইত অঞ্চলে এ বিদ্রোহ অন্তর্বর্তী সরকারকে নতুন সংকটে ফেলেছে।
সিরিয়ার তেলসমৃদ্ধ উত্তরপূর্ব এখনও সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সেটি দখলে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর।
এদিকে শুক্রবার দামেস্ক ও অন্যান্য শহরে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের সমর্থনে সমাবেশ হয়েছে।
শারার মিত্র হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব ও তুরস্ক জানিয়েছে, তারা সরকারি বাহিনীর পক্ষেই আছে। এদিকে জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক দূত বলেছেন, সংঘাত ও মৃত্যু, বিশেষ করে বেসামরিকদের মৃত্যুতে তিনি উদ্বিগ্ন।
আসাদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক রাশিয়া এখন নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী। লাতাকিয়া ও এর আশপাশের সংঘাতের ঘটনায় উদ্বিগ্ন মস্কো রক্তক্ষয় বন্ধে সিরিয়ার সব পক্ষের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আসাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরান বলেছে, তারা সিরিয়ার প্রতিটি গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের নিরীহ মানুষদের নিরাপত্তাহীনতা, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড ও ক্ষয়ক্ষতির তীব্র বিরোধিতা করছে।
আল মুখতারিয়া থেকে পাওয়া ছবি ও ভিডিওতে শহরের কেন্দ্রে একটি রাস্তার ধারে কাছাকাছি পড়ে থাকা অন্তত ২০টি মৃতদেহ দেখা গেছে, কিছু কিছু মৃতদেহে রক্তও দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটির স্থান নিশ্চিত হতে পেরেছে রয়টার্স, কিন্তু কখন বা কারা এই ভিডিও করেছে তা যাচাই করতে পারেনি।
এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসলামপন্থি সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ আছে এমন বন্দুকধারীদের দায়ী করছেন আলাউইত সদস্যরা।
নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে সিরীয় বার্তা সংস্থা সানা বলছে, সরকারি বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার পর উপকূলীয় এলাকাটিতে অসংগঠিত নানান গোষ্ঠী রওনা দেয়, তারপর থেকে সেখানে ‘বিচ্ছিন্ন সহিংসতার’ খবর পাওয়া যাচ্ছে।
“এসব থামাতে কাজ করছি আমরা,” বলেছে একটি সূত্র।
শুক্রবার পশ্চিম সিরিয়ার সাহলাব গ্রামে সুপরিচিত আলাউইত নেতা ৮৬ বছর বয়সী শেখ শাবান মনসুর ও তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুটি আলাউইত সূত্র।
এ হত্যাকাণ্ডের জন্যও দামেস্কঘনিষ্ঠ যোদ্ধাদের দায়ী করছে গ্রামটির বাসিন্দারা।