গুরুদুয়ারার মতো ধর্মীয় স্থানগুলো অবৈধ অভিবাসীর পাশাপাশি শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আঁতুড়ঘর হিসাবে ব্যবহার হওয়ার অভিযোগে আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের অভিযানের নিশানা হচ্ছে।
Published : 27 Jan 2025, 07:51 PM
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন অভিযানের আওতায়, যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তারা নিউ ইয়র্ক এবং নিউ জার্সির বহু গুরুদুয়ারায় অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ট্রাম্প তার পূর্বসূরি বাইডেন আমলের একাধিক নির্বাহী আইন প্রত্যাহার করেছেন। এর মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন সংবেদনশীল স্থানগুলোতে (স্কুল, গির্জা এমনকি হাসপাতাল) অভিবাসী আটক কার্যক্রমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেছে।
এর আগে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এবং কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন সংস্থাগুলোর ওপর এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এসব স্থানে অভিযান পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা ছিল।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি লিখেছে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কর্মকর্তারা নিউ ইয়র্ক এবং নিউ জার্সির গুরুদুয়ারার মতো ধর্মীয় স্থানগুলোকে নিশানা করছেন। কারণ, সেগুলো অবৈধ ও অনথিভুক্ত অভিবাসীদের পাশাপাশি শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আঁতুড়ঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের কাছে।
সংবেদনশীল স্থানে অভিযান পরিচালনার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এক বিবৃতিতে বলেছে, “অপরাধীরা আর গ্রেপ্তার এড়াতে আমেরিকার স্কুল এবং গির্জাগুলোতে লুকিয়ে থাকতে পারবে না। ট্রাম্প প্রশাসন আমাদের বাহাদুর আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের হাত বেঁধে রাখবে না।”
এর আগে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি বেঞ্জামিন হাফম্যান এই সংবেদনশীল স্থানগুলো থেকে অভিবাসী গ্রেপ্তারের এই নির্দেশনাসহ আরও একটি নির্দেশনা জারি করেন। সেটি হচ্ছে, বৈধ কাগজপত্র না থাকা কেউ গ্রেপ্তার হলে সেই ব্যক্তি যদি যুক্তরাষ্ট্রে দুবছরের বেশি সময় ধরে তার অবস্থান প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে দ্রুতই দেশ থেকে বের করে দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ।
অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। প্রথম ধাপে গত শুক্রবারই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫৩৮ জন অবৈধ অভিবাসীকে। শুরু হয়েছে তাদেরকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়াও।
সেই আবহেই এবার নিউ ইয়র্ক এবং নিউ জার্সির গুরুদুয়ারাগুলোতে ‘অভিযান’ শুরু করেছে আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস)। তবে এ পদক্ষেপের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কিছু শিখ সংগঠন। তাদের দাবি, এতে শিখদের ধর্মীয় স্থানের পরিত্রাতা নষ্ট হচ্ছে।
শিখ আমেরিকান লিগ্যাল ডিফেন্স অ্যান্ড এডুকেশন ফান্ড (এসএএলডিএফ)-এর নির্বাহী কর্তা কিরণ কৌর গিল বলেন, ‘‘ডিএইচএস-র এই নতুন নিয়ম অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যে ভাবে গুরুদুয়ারার মতো পবিত্র ধর্মীয় স্থানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, তাতে আমরা নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত। এতে ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতাও নষ্ট হচ্ছে।’’
শিখ সংগঠন জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের সংবেদনশীল স্থানগুলোতে অভিযান চালানোর নীতি বাতিল করার সিদ্ধান্ত ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টদের নজরদারি, তদন্ত, গ্রেপ্তার এবং গুরুদুয়ারাগুলোতে অভিযান পরিচালনার পথ সহজ করে দিয়েছে।
তারা আরও বলেছে, “আমাদের গুরুদুয়ারায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা-সহ বা ছাড়াই যখন তখন সশস্ত্র আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা অভিযান করতে ঢুকে যাবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। এই প্রসাশনিক বাধা আমাদের অতীতের সেই দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে, যখন সরকার শিখদের ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করেছিল।”
শিখ সংগঠনগুলো উদ্বিগ্ন।কারণ, যদি শিখরা গুরুদুয়ারায় অভিযান এবং নজরদারি নিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ভোগে, তবে শিখরা সেখানে যাওয়া বন্ধ করে দেবে। এতে তাদের ধর্মীয় অনুশীলনও বাধাগ্রস্ত হবে।