সাবেক সেনাপ্রধান বাজওয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়ে প্রেসিডেন্টকে ইমরানের চিঠি

ইমরান গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই চিঠিটি পাঠান বলে জানায় পাকিস্তানের দৈনিক ডন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2023, 05:40 PM
Updated : 16 Feb 2023, 05:40 PM

পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ‘বার বার শপথ ভঙ্গ করেছেন’ অভিযোগ তুলে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিকে লেখা এক চিঠিতে এ বিষয়ে ‘দ্রুত তদন্ত শুরুর’ আহ্বান জানিয়েছেন।

১৪ ফেব্রুয়ারি ইমরান ওই চিঠিটি পাঠান বলে জানায় পাকিস্তানের ইংরেজি ভাষার দৈনিক ডন। চিঠিতে ইমরান বলেন, জেনারেল (অবঃ) বাজওয়া চারভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।

নিজের এই দাবির পক্ষে প্রমাণ হিসেবে তিনি গত ৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত সাংবাদিক জাভেদ চৌধুরির একটি কলামের কথা উল্লেখ করেন। যেখানে বাজওয়ার মন্তব্যের উল্লেখ রয়েছে।

জাভেদ চৌধুরির কলামের উদ্বৃতি দিয়ে ইমরান বলেন, ‘‘জেনারেল বাজওয়া অতীতে বলেছিলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছিল ইমরান খান যদি ক্ষমতায় থেকে যান তবে তিনি দেশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন’ এবং তিনি এ কথা সাংবাদিক জাভেদ চৌধুরির কাছে স্বীকার করেছেন।

‘‘এখানে তিনি ‘আমরা’ বলতে ঠিক কাদের কথা বোঝাতে চেয়েছেন সেটা জেনারেল বাজওয়ার কাছে থেকে নিশ্চিত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী যদি ক্ষমতায় থেকে যান তবে তিনি ‘দেশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন’ এমন ভাবনা ভাবার বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কে তাকে দিয়েছে?”

একমাত্র জনগণ এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ‍অধিকার রাখে বলে বর্ণনা করে ইমরান আরও বলেন, ‘‘একমাত্র জনগণ ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে যে কাকে তারা তাদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চায়। কিন্তু তিনি এ অধিকার নিজের হাতে নিয়ে স্পষ্টভাবে সংবিধানের তৃতীয় সূচির ২৪৪ ধারা সমুন্নত রাখার যে শপথ নিয়েছিলেন তার লঙ্ঘন করেছেন।”

এরপর ইমরান বাজওয়ার আরেকটি স্বীকারোক্তির কথা উল্লেখ করেন। যেখানে সাবেক সেনাপ্রধান বলেছিলেন, তিনি ‘চেষ্টা করে সাবেক অর্থমন্ত্রী শওকত তারিনের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিটবিলিটি ব্যুরোর(এনএবি) মামলা খারিজ করতে সক্ষম হয়েছেন’।

ইমরান বলেন, ‘‘এর মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণ হয়, এনএবি সাবেক সেনাপ্রধানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এটাও সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন। কারণ, পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী সেনাবাহিনী নিজে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি অধিদপ্তর মাত্র এবং বেসামরিক স্বায়ত্তশাসিত সরকারি প্রতিষ্ঠান এনএবি কোনোভাবেই সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।”

এরপর ইমরান আরেক সাংবাদিক আফতাব ইকবালের একটি ইউটিউব ব্লগের কথা উল্লেখ করেন। ওই ব্লগে আফতাব দাবি করেন, ‘‘জেনারেল বাজওয়া তাকে বলেছেন, ‘ইমরান যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি ইমরানের সঙ্গে হওয়া কথোপকথন রেকর্ড করতেন’।”

যেটিকে একজন সেনাপ্রধানের শপথের চূড়ান্ত এবং তার নিজের মৌলিক মানবিক অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন বলে বর্ণনা করেন ইমরান।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কেনো এবং কোন অনুমোদনের ভিত্তিতে জেনারেল বাজওয়া (রাষ্ট্রীয়) গোপন কথোপকথন রেকর্ড করেছিলেন?”

সর্বশেষ ইমরান গত বছর ফেব্রুয়ারিতে তার রাশিয়া সফরের কথা উল্লেখ করেন। ইমরানের ওই সফর নিয়ে ‘চরম বিতর্ক’ রয়েছে। কারণ, ইমরান যখন রাশিয়া সফরে ছিলেন ঠিক ওই সময়ে ইউক্রেইনে আগ্রাসন ‍শুরু করে রাশিয়া।

ইমরান চিঠিতে বলেন, ওই সময় আরও একবার বাজওয়া সেনাপ্রধান হিসেবে তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেন। তিনি ওই সময় প্রকাশ্যে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে তৎকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার নীতির বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন।

২০২২ সালের এপ্রিলের ২ তারিখে ইসলামাবাদে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাজওয়া এমনটি করেন বলে জানান ইমরান।

চিঠিতে ইমরান শুধু সাবেক সেনাপ্রধানের সংবিধান লঙ্ঘনের কথাই বলেননি, বরং তিনি প্রেসিডেন্ট আলভিকে তার সাংবিধানিক দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।

ইমরান বলেন, ‘‘একজন প্রেসিডেন্ট এবং একটি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে (বাজওয়ার বিরুদ্ধে) দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রতিষ্ঠানিক তদন্তের নির্দেশ দেওয়া তার সাংবিধানিক দায়িত্ব।”

এই চিঠি বাজওয়ার সঙ্গে ইমরানের দীর্ঘদিনের তিক্ততার আরও স্পষ্ট প্রমাণ। যদিও তারা একসময় দাবি করেছিলেন তাদের মধ্যে কোনো মতভেদ নাই। তারা ‘একই নৌকার মাঝি’।

কিন্তু গত বছর এপ্রিলে ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সরকারকে উৎখাতের পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক সেনা প্রধানের মধ্যে সম্পর্কের ফাটল স্পষ্ট হতে শুরু করে।