বাশার আল আসাদের পতনের পর ৭ টি স্থানে মৃতদেহ খুঁজে তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ‘দ্য সিরিয়া জাস্টিস অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি সেন্টার’।
Published : 27 Feb 2025, 09:29 PM
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের আমলে রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে একটি সামরিক বিমানবন্দরের বন্দিশালায় নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়ে কিংবা মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে ১ হাজারেরও বেশি সিরীয়র মৃত্যু হয়েছে।
কবরস্থান সন্দেহে ৭ টি স্থানে মৃতেদেহ খুঁজে তৈরি করা একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে একথা। প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে।
রয়টার্সের সঙ্গে একান্তে শেয়ার করা এই প্রতিবেদনে ‘দ্য সিরিয়া জাস্টিস অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি সেন্টার’ (এসজেএসি) বলেছে, বাশার আল আসাদের পতনের পর তারা প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য, স্যাটেলাইট ছবি এবং সামরিক বিমানবন্দরের নথিপত্রের ছবির মাধ্যমে সমাধিস্থলগুলো চিহ্নিত করেছে।
বিমানবন্দরের মাটিতে কিছু সমাধি ছিল। অন্যান্য সমাধিগুলো ছিল দামেস্কজুড়ে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ওই নথিগুলো খতিয়ে দেখেনি এবং স্যাটেলাইট ছবির নিজস্ব পর্যালোচনা থেকে গণকবরের অস্তিত্ব নিরপেক্ষভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি।
তবে, রয়টার্সের সাংবাদিকরা এসজেএসি-র চিহ্নিত বেশ কয়েকটি স্থানের ছবিতে কিছু চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন। মেজ্জেহ বিমানবন্দর এবং নাঝার কবরস্থানে গভীর গর্ত খননের প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা এসজেএসি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের সঙ্গে মিলে যায়।
প্রতিবেদন লেখকদের একজন শাদি হারুন জানান, তিনিও একসময় বন্দি ছিলেন। ২০১১-১২ সালে সিরিয়ায় বিক্ষোভে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে কয়েক মাস আটক রাখা হয়। তিনি বলেন, তাকে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করতে প্রতিদিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হত।
রয়টার্সকে তিনি বলেন, "মৃত্যু এসেছে নানা রূপে।" বন্দিরা সেলের দেয়াল বা জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ ছাড়া আর কিছুই দেখতে না পেলেও, তারা মাঝে মাঝে গুলির শব্দ শুনতে পেতেন। প্রায় প্রতি দুই দিনে একবার কেউ গুলিবিদ্ধ হত। এরপর নির্যাতনকারীদের হাতে মারধরের শিকার হওয়ার ঘটনাও ঘটত।
হারুন বলেন, “নির্যাতনের সময় এক বন্দির পায়ে চাবুকের আঘাতে একটি ছোট ক্ষত হয়েছিল। কয়েকদিন ধরে সেটি জীবাণুমুক্ত বা চিকিৎসা না করায় ধীরে ধীরে গ্যাংগ্রিন (টিস্যু পচন ধরা) হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত, তার পা কেটে ফেলতে হয়।”
ওদিকে, নথিপত্র সংগ্রহের পাশাপাশি এসজেএসি ও সেদনায়া কারাগারে আটক ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন ১৫৬ জন জীবিত বন্দি ও বিমান বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার আটজন সাবেক সদস্যের সাক্ষাৎকার নিয়েছে।
নতুন সরকার একটি ডিক্রি জারি করে সাবেক কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে কথা বলা নিষিদ্ধ করেছে। যদিও এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি।
“যদিও প্রতিবেদনে উল্লেখিত কিছু কবর আগে পাওয়া যায়নি, তবে এই খোঁজ আমাদের জন্য আশ্চর্যজনক নয়, কারণ আমরা জানি যে আসাদের কারাগারে এক লাখেরও বেশি নিখোঁজ ব্যক্তি রয়েছে, যারা ডিসেম্বরের প্রথম দিকে মুক্তি পাওয়ার দিনগুলোতে বের হয়নি,” বলেছেন নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্নেল, যিনি তার সামরিক ছদ্মনামে আবু বকরের পরিচয়ে কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, “নিখোঁজ ব্যক্তিদের ভাগ্য উন্মোচন এবং আরও কবরের সন্ধান করা আসাদ সরকারের রেখে যাওয়া অন্যতম বড় উত্তরাধিকার।”
২০১১ সাল থেকে, যখন সিরিয়ায় বিক্ষোভে আসাদের দমনপীড়ন থেকে দেশটিতে পুরোদস্তুর যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে, তখন সিরিয়ায় কয়েক লাখ মানুষ নিহত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
বাশার আল-আসাদ এবং তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ (যিনি বাশারের আগে প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং ২০০০ সালে মারা যান)- উভয়কেই মানবাধিকার গোষ্ঠী, বিদেশি সরকার এবং যুদ্ধাপরাধ কৌঁসুলিরা দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ার কারাগারগুলোতে ব্যাপক বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বন্দিদের মারধরের পাশাপাশি সিরিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য অভিযুক্ত করেছে।