যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ব্রাজিলসহ বিশ্বে খাবারের ৭০ শতাংশ উৎপাদনকারী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লড়াইয়ে জাতীয় পরিকল্পনায় খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থাকে বিবেচনায় নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
Published : 01 Dec 2023, 10:04 PM
বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশই জলবায়ু সংকটে ঝুঁকির মুখে আছে বলে গবেষণায় দেখা গেলেও একইসময়ে খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থাও জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুতর প্রভাব ফেলছে।
তাই এবারের কপ২৮ জলবায়ু সম্মেলনে ১৩৪ টি দেশের নেতারা প্রথম জলবায়ুর ওপর খাদ্য ও কৃষির প্রভাবকে গুরুত্ব দিয়ে ঘোষণাপত্র সই করেছেন।
দুবাইয়ে চলমান এই সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ব্রাজিলসহ অন্য যেসব দেশ বিশ্বে খাবারের ৭০ শতাংশ উৎপাদন করে, তারা প্রত্যেকেই জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লড়াইয়ে নিজেদের জাতীয় পরিকল্পনায় খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থাকে বিবেচনায় নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন যদিও এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। চরম আবহাওয়ার কারণে খাদ্য উৎপাদনে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। একটি বন্যা কিংবা ঝড়েই একর একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু তারপরও একথা ঠিক যে, আমরা যা খাই এবং উৎপাদন করি সে ব্যবস্থাও আমাদের জলবায়ুর জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে।
বন উজাড় হওয়া, নগরায়নের পাশাপাশি যে পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়, মাটি প্রস্তুত করা হয় সেটি, এমনকি সারের ব্যবহার থেকেও বিশ্বে এক পঞ্চমাংশেরও বেশি কার্বন নিঃসরণ ঘটে।
২০১৫ সালে এক হিসাবে দেখা গিয়েছিল, খাদ্য ব্যবস্থা বিশ্বে প্রায় এক তৃতীয়াংশ উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। খাদ্য ও কৃষি থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হয় ১৮শ’ কোটি টন।
বিবিসি জানায়, কৃষি সংগঠনগুলো কপ২৮ সম্মেলনের ওই ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে দেশগুলোকে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে বলেও সতর্ক করেছে।
সমালোচকরা বলছেন, এই ঘোষণা খুবই অস্পষ্ট। কারণ, খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কীভাবে সামাল দেওয়া হবে সেটি বিশ্ব নেতারা নির্ধারণ করেননি।
তবে ঘোষণাপত্রে খাদ্য ও কৃষিকে স্থান দেওয়ায় এই ঘোষণাপত্র সই করা দেশগুলোকে এখন জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থায় বদল আনার কথা ভাবতে হবে।
দেশগুলো জাতীয়ভাবে তাদের কার্বন নিঃসরণ পরিমাপের ক্ষেত্রে খাদ্য উৎপাদন, পরিবহন এবং খাদ্য গ্রহণের প্রভাব কতটুকু সেটিও মূল্যায়ন করে দেখতে বাধ্য হবে। আগামী বছরই দেশগুলোকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হবে।
তবে এ মূল্যায়নের ফলে খাবারের দাম বেড়ে যাওয়া কিংবা আমাদের মাংস খাওয়ার ওপরও কোনও প্রভাব পড়ার ভয় নেই, বরং এমন পদক্ষেপ কাজে এলে আমরা সবাই যা খাচ্ছি বা উৎপাদন করছি, সেখান থেকে নিঃসরণ হওয়া গ্রিনহাউজ গ্যাস সামাল দেওয়া আমাদের জন্য সহায়ক হবে।