ইউক্রেইনের এক নারী বলেন, “আমরা অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফল নিয়ে চিন্তায় আছি। কারণ, আমরা শত্রুকে (রাশিয়া) পরাজিত করতে চাই।”
Published : 01 Nov 2024, 05:45 PM
নিজ দোকানের বাইরে ভাঙা কাচের টুকরো পরিষ্কার করছিলেন ইউক্রেইনের এক নারী ইননা। তিনি জানেন, তার দেশের ভাগ্য ঝুলছে পাঁচ হাজার মাইলেরও বেশি দূরের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের হাতে।
যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৫ নভেম্বরেই হতে চলেছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ইননা বলেন, “আমাদের আশা কমলা হ্যারিস ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী) জিতবেন এবং আমাদেরকে সমর্থন করবেন।”
রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলে আসা যুদ্ধে বোমা হামলায় ইননার দোকানের জানালা ভেঙে গেছে। ইউক্রেইনের জাপোরিজিয়া শহরে তার দোকান। যুদ্ধে তার মতোই অবস্থা এ শহরের আরও অনেকের। বোমার আঘাতে রাস্তায় ১০ মিটার চওড়া গর্ত হয়েছে।
ইননা বলেন, “আমরা অবশ্যই (যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের) ফল নিয়ে চিন্তায় আছি। কারণ আমরা শত্রুকে (রাশিয়া) পরাজিত করতে চাই।”
ইউক্রেইনের পক্ষে এ আশা পূরণ করতে পারার আশা কম। এটি করতে গেলে ইউক্রেইনের প্রয়োজন হবে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা-সমর্থন।
২০২৩ সালে ইউক্রেইনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সম্মুখসারির যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ সেনাদের হটিয়ে দেওয়ার আশা নিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছিলেন ইউক্রেইনের সেনারা।
কিন্তু তারা সফল হয়নি। এরপর ইউক্রেইনীয় সেনারা আত্মরক্ষামূলখ অবস্থানে থেকে লড়াই চালিয়ে যেতে শুরু করে। প্রতিদিনই রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও গ্লাইড বোমা হামলা চলছে ইউক্রেইনের বিভিন্ন স্থানে। অবিরাম রুশ হামলার শিকার হচ্ছে ইউক্রেইনীয় সেনারা।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস জিতলে ইউক্রেইনে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন। যদিও রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে তার ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
আবার হ্যারিসের প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যদি নির্বাচনে জেতেন তাহলে ইউক্রেইনে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা এখনকার চেয়ে কমে যেতে পারে। এ মুহূর্তে ইউক্রেইনে ৫ হাজার কোটি ডলারের বেশি সাহায্য দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
কী প্রভাব পড়তে পারে?
কমলা হ্যারিস বা ডনাল্ড ট্রাম্প- যিনিই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হন না কেন, ইউক্রেইন সীমান্তে, এমনকি দেশটিতে বাস করা প্রত্যেকের ওপরই এর গভীর প্রভাব পড়বে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি হ্যারিস বা ট্রাম্প ইউক্রেইনকে কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়া এবং সীমান্ত বন্ধ করে দিতে বলেন, সেক্ষেত্রে জাপোরিজিয়ার মতো অঞ্চলগুলো হঠাৎ উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ভাগ হয়ে পড়তে পারে।
১৯৫০–এর দশকে যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে দুই কোরিয়ার লড়াই থামলেও এখনও দেশ দুটি কার্যত যুদ্ধের মধ্যেই আছে।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইউক্রেইন যুদ্ধ থামাতে ‘কিছু একটা করবেন’। রাশিয়ার কাছে ইউক্রেইনকে কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় যে বিকল্প পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে তা হল: ইউক্রেইনের ওপর থেকে সমর্থন পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়া। সেটি করা হলে রুশ বাহিনী ক্রমেই তাদের কাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন এলাকাসহ একসময় গোটা ইউক্রেইনই দখল করে নিতে পারে।
আর তৃতীয়ত যা হতে পারে সেটি হচ্ছে- রাশিয়ার দখল করা সব এলাকা পুরোপুরি মুক্ত করা বা পুনরুদ্ধার করা। তবে সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
সম্মুখসমরে মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্র-নির্মিত সাঁজোয়া যানের বহরের একটি ইউনিট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এক ইউক্রেইনীয় সেনা আন্দ্রিয়া বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ হলে বা কমলে আমাদের পদাতিক সেনাদের ঘাড়ে এসে পড়বে বোঝা । আমাদের কাছে যা আছে তা নিয়েই আমরা লড়ব। কিন্তু সবাই জানে, ইউক্রেইনের একার পক্ষে এ লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।”
সেকারণে আন্দ্রিয়া ও তার সহ সেনারা ৫ নভেম্বরের যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন। ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা এরই মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেইনের সেনাদের আশা ও মনোবল ভেঙে দিচ্ছে এবং আরও সামরিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রচেষ্টাতেও হতাশা দেখা দিচ্ছে।
সেনা আন্দ্রিয়া বলেন, “আমরা যখনই শুনি ইউক্রেইনকে সাহায্য করতে তেমন ইচ্ছুক নন এমন প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রের জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন, তখন সেটি আমাদের হতাশ করে।”
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে কমলা হ্যারিস নিঃসন্দেহে ইউক্রেইনের পছন্দের প্রার্থী। সাংবাদিকরাও তার বিরুদ্ধে রাশিয়ার মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর প্রচেষ্টা মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে।
কিন্তু ইউক্রেইনের দক্ষিণ এবং পূর্বাঞ্চলজুড়ে এমন অনেক মানুষই দেখা গেছে, যারা চায় যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হোক। তাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থী ট্রাম্প। তিনি আবারও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসলেই ইউক্রেইনে স্বস্তি ফেরার সবচেয়ে ভাল সম্ভাবনা আছে বলে তারা মনে করে।