প্রথম পর্বে পিছিয়ে থাকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ব্যবধান কমালেও উপজেলায় দ্বিতীয় পর্বের ভোট শেষেও এগিয়ে থাকল বিএনপি।
Published : 27 Feb 2014, 08:56 PM
১১৫ উপজেলা বৃহস্পতিবার দিনভর ভোটগ্রহণের পর স্থগিত একটি বাদে বাকিগুলোর মধ্যে ১১০টির চেয়ারম্যান পদের ফল ভোর পর্যন্ত পাওয়া গেছে।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫১ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন বিএনপি নেতারা।
তাদের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী নেতারা ৮টি উপজেলায় চেয়ারম্যান হতে চলেছেন। দুই দলের বিজয়ীদের নিয়ে ১৯ দলের ৫৯ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রথম পর্বের তুলনায় দ্বিতীয় পর্বে গোলযোগের মাত্রা ছিল বেশি, যাতে একজন নিহতও হয়েছেন। গোলযোগের কারণে নোয়াখালী সদর উপজেলায় ভোট স্থগিত হয়েছে। এছাড়া স্থগিত হয়েছে ১৩টি উপজেলার ৩৪ কেন্দ্রের ভোট।
অপেক্ষাকৃত গোলযোগপূর্ণ দ্বিতীয় পর্বে কেন্দ্র দখল ও কারচুপির অভিযোগ রয়েছে বিএনপির। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে এবং ফলাফল গ্রহণযোগ্য হবে বলে প্রতিক্রিয়া ছিল আওয়ামী লীগের।
যে ১১০টির ফলাফল পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ৪৫টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।
প্রথম পর্বে ৯৬টি উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৩৪ প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন। দুই পর্ব মিলিয়ে ২১০টি উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যানের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৭৯ জন।
অন্যদিকে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব মিলিয়ে শুধু বিএনপির চেয়ারম্যানের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৯৬ জন। জামায়াত নেতাদের নিয়ে ১৯ দলের চেয়ারম্যানের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৬ জন, এর মধ্যে জামায়াতের ২০ জন।
অর্থাৎ দশম সংসদ নির্বাচন বয়কটকারী ১৯ দলের উপজেলা চেয়ারম্যানের সংখ্যা দুই পর্ব মিলিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ে ৩৭ জন বেশি। ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যানের সংখ্যাও তাদের বেশি।
দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত ভোটের মধ্যে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, বরিশাল সদর ও কুমিল্লার লাকসামের ফল ঘোষিত হয়নি। বাগেরহাটের ফকিরহাটে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী নির্ধারিত হয়ে গেলেও একটি কেন্দ্র স্থগিত থাকায় আটকে গেছে চেয়ারম্যান পদের ফলাফল।
এছাড়া বরিশাল সদরে ১১টি, তাড়াশে ১টি এবং লাকসামে ২টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হয়েছে।
দেশের ৪৮৭ উপজেলার মধ্যে দুই দিনে ২১০টিতে ভোটগ্রহণ হল। আরো চার পর্বে বাকি উপজেলাগুলোতে ভোট হবে।
দ্বিতীয় পর্বের ভোটে পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড়ি সংগঠনের আধিপত্য দেখা যায়। জনসংহতি সমিতি-জেএসএসের ৩ জন এবং ইউপিডিএফের ১ জন চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন।
বিএনপিবিহীন সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও একটি উপজেলায় চেয়ারম্যানের পদ পেয়েছে। এটি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা।
নির্দলীয় ক্য হ্লা চিং মারমা বান্দরবানের থানছি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন।
নোয়াখালী সদর উপজেলায় আহমদিয়া স্কুল কেন্দ্রে ভাংচুর হওয়া ব্যালট বাক্স। নোয়াখালী সদর উপজেলায় আহমদিয়া স্কুল কেন্দ্রে ভাংচুর হওয়া ব্যালট বাক্স। চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বে ৫২ জেলার ১১৫ উপজেলায় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৮ হাজার ১৩১টি কেন্দ্রে টানা ভোটগ্রহণ চলে।
এসব উপজেলায় ১৩শ’ জনের বেশি প্রার্থীর মধ্য থেকে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিতে ভোটার ছিলেন ১ কোটি ৯৮ লাখ ৫১ হাজার ১৭৬ জন।
প্রথম পর্বে ৯৬টি উপজেলায় ৬২ শতাংশ ভোট পড়লেও দ্বিতীয় পর্বে ভোটের হারের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি নির্বাচন কমিশন।
বিএনপি অভিযোগ করলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, কয়েকটি কেন্দ্রে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বাদে সার্বিকভাবে ভোটগ্রহণ ছিল শান্তিপূর্ণ।
নোয়াখালী সদর উপজেলায় কেন্দ্রের সংখ্যা ১১৭, যেখানে নতুন করে নির্বাচন হবে।
ভোটে পুলিশের সঙ্গে জামায়াতকর্মীদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন নোয়াখালীরই সোনাইমুড়ী উপজেলায়। এই উপজেলায়ও তিনটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হয়েছে।
নোয়াখালী ছাড়া বড় ধরনের গোলযোগ হয়েছে বাগেরহাটের ফকিরহাটে, যশোরের চৌগাছায়, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে।
চৌগাছায় সরকার সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জহুরুল ইসলাম। ফকিরহাটে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সরদার নিয়ামত হোসেনকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বিজিবির বিরুদ্ধে।
যশোরের চৌগাছায় হামলায় রক্তাক্ত বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জহুরুল ইসলাম। যশোরের চৌগাছায় হামলায় রক্তাক্ত বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জহুরুল ইসলাম। ‘অনিয়মের’ প্রতিবাদে কক্সবাজার জেলা, বরিশাল সদর, মুন্সীগঞ্জ সদর, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাটে, যশোরের শার্শা, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় হরতাল ডেকেছে বিএনপি।
ভোট চলাকালেই এসব এলাকার বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
স্থানীয় সরকারের ভোট হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এবার ‘ক্ষমতাসীনদের কেন্দ্র দখলের মহোৎসব’ হয়েছে।
ভোট ‘কারচুপির’ প্রতিবাদে আগামীতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার ইঙ্গিত দেন তিনি।
তবে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ বলেছে, পরাজয় আঁচ করতে পেরে ভোট বর্জনের ‘নাটক’ করেছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চল থেকে আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তাতে আমরা দাবি করতে পারি, সব জায়গায় শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।”
ক্ষমতায় থেকে প্রথম পর্বে হারের পর আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া ছিল এই রকম- দল হারলেও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে সরকারের জয় হয়েছে।
অন্যদিকে সংসদ নির্বাচন বর্জন করে সংসদে প্রতিনিধিত্ব হারানো বিএনপির বক্তব্য ছিল- উপজেলা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে জনগণ, যে সুযোগ তারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পায়নি।