গুগলের বিজ্ঞাপন বিভাগ বিচ্ছিন্ন চেয়ে মামলায় মার্কিন সরকার

অঙ্গরাজ্যের পরিবর্তে ফেডারেল আদালত যদি গুগলকে ভেঙে ফেলার কাজটি হাতে নেয় তবে তা অনেক সহজ হয়, বিশেষ করে ফেডারেল সরকারই যদি বাদী হয়।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2023, 09:35 AM
Updated : 28 Jan 2023, 09:35 AM

মার্কিন সরকার সম্ভবত অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার মাধ্যমে ইন্টারনেট জায়ান্ট গুগলের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগকে মূল কোম্পানি থেকে ছেঁটে ফেলার পথে এগুচ্ছে।

মঙ্গলবার ভার্জিনিয়ার ফেডারেল আদালতে মার্কিন বিচার বিভাগের দায়ের করা এই মামলায় গুগলের বিজ্ঞাপন বিভাগকে আলাদা করে ফেলার কথা বলা হয়েছে।

২০২০ সালে টেক্সাসসহ ১৭টি মার্কিন অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলদের দায়ের করা মামলার সঙ্গে এই মামলার মিল রয়েছে বলে শনিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

বিছিন্নভাবে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মামলার চেয়ে ফেডারেল সরকারের এ মামলার ওজন অনেক বেশি ও গুগলের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনায় বড় প্রভাব রাখার সম্ভাবনা রয়েছে বলে উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে।

ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক রেবেকা অ্যালেনসওয়ার্থের মতে, কোনো অঙ্গরাজ্যের পরিবর্তে ফেডারেল আদালত যদি গুগলকে ভেঙে ফেলার কাজটি হাতে নেয় তবে কাজটি অনেক সহজ হয়, বিশেষ করে ফেডারেল সরকার যদি বাদী হয়।

তবে অধ্যাপক অ্যালেনসওয়ার্থ এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা এমন সন্দেহও প্রকাশ করেছেন, গুগলের মতো একটি কোম্পানি যার বিশাল প্রভাব রয়েছে মার্কিন অর্থনীতিতে, তার একটি অংশকে বিক্রি করে দেওয়ার মত সিদ্ধান্তে আদালত আদৌ আসবে কিনা। ২০২১ সালে গুগলের মোট আয়ের শতকরা ১২ ভাগ এসেছিল বিজ্ঞাপন থেকে।

অঙ্গরাজ্যগুলোর মামলায় নিউইয়র্কের এক বিচারক সেপ্টেম্বর মাসে গুগলের ওই মামলা খারিজ করে দেওয়ার আবেদন অগ্রাহ্য করেন। তবে, আদালত একই সঙ্গে বাদীদের বেশ কিছু দাবির সঙ্গেও দ্বিমত পোষণ করেন। এর মধ্যে রয়েছে ফেইসবুকের মূল কোম্পানি মেটার সঙ্গে গুগলের অবৈধ বোঝাপড়ার অভিযোগ।

অঙ্গরাজ্যগুলোর মামলায় আদালতের কাছে উপযুক্ত সমাধান চাওয়া হয়েছে। অপরদিকে টেক্সাসের অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন, শাস্তিমূলক সব পথই বিবেচনায় রয়েছে। একেবারে ন্যূনতম সাজা হিসেবে গুগলের বিজ্ঞাপন ব্যবস্থাপনা ব্যবসা বিক্রির বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি।

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি আইনের অধ্যাপক হ্যারী ফার্স্ট বলেন, ফেডারেল এই মামলায় বেশ কিছু বিষয় অঙ্গরাজ্যগুলোর দায়ের করা মামলা থেকে আলাদা। “এবং তা থেকে আমার অনুমান বলছে যে, সরকার গুগলের কাঠামো এবং এর বিজ্ঞাপন ব্যবসায় বড় পরিবর্তন আনার বিষয়ে যথেষ্ট সিরিয়াস।”

এ বিষয়ে টেক্সাসের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস মন্তব্যের অনুরোধ সাড়া দেয়নি, অপরদিকে বিচার বিভাগ কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। আর গুগলকে এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধ করলে তাদের কাছ থেকেও কোন মন্তব্য পায়নি রয়টার্স।

সাধারণত অঙ্গরাজ্যগুলো গুগলের মত বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিয়মিতই অ্যান্টিট্রাস্ট আইন ভাঙার অভিযোগ তোলে। ফেডারেল সরকার কখনো কখনো সে মামলায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করে অথবা নিজে থেকেই মামলা করে, বিশেষ করে যদি বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে গুরুত্বপূর্ণ হয় উঠে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে অ্যান্ট্রিট্রাস্ট মামলায় সাধারণত বিচারকরা ফেডারেল সরকারের মতামতের বিপক্ষে যান না। ফলে, বিচার বিভাগ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের বক্তব্য এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হয়ে উঠতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে ২০১৯ সালে নিউইয়র্কসহ ১২টি অঙ্গরাজ্যের মামলায় আর্জি ছিল দুই মোবাইল ক্যারিয়ার টি-মোবাইল এবং স্প্রিন্টের একত্রিকরণ ঠেকানোর। মার্কিন সরকার সে মামলায় যুক্তি দেয় যে, চুক্তিটি এগিয়ে যাওয়া উচিত, কারণ, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেটের কভারেজ আরো ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

মামলায় বিচার বিভাগ যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বিস্তৃত প্রভাবের যুক্তি দেওয়ার ফলে অঙ্গরাজ্যগুলোর অভিযোগের গুরুত্ব এতে কমে যায়। আদালতও সরকারের সঙ্গে একমত পোষণ করে ওই একত্রীকরণ এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছিল।