শ্রমিক সংকট: রোবট কেনায় রেকর্ড উত্তর আমেরিকার কারখানায়

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ এবং কানাডা ও মেক্সিকোর কয়েকটি অংশে ৪৪ হাজার একশ’র বেশি রোবট অর্ডার করেছে বিভিন্ন কোম্পানি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2023, 08:44 AM
Updated : 11 Feb 2023, 08:44 AM

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা উত্তর আমেরিকার শ্রমবাজারে। এরই মধ্যে শ্রমিক নিয়োগে সংগ্রাম করছে কোম্পানিগুলো। ফলে উৎপাদন কারখানাগুলোয় মানব শ্রমিকের জায়গা ক্রমশ দখল করছে রোবট। কারখানার জন্য রোবট কেনার সংখ্যায় অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে ২০২২ সাল।

বছরের শেষের দিকে রোবটের চাহিদা কমেছে, এমন ধারণা চাউর হয়েছে। যদিও উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের মাধ্যমে পরিচালিত পারিবারিক খরচের ধরণ ও ক্রমশ বাড়তে থাকা সুদের হার বদলে যাওয়ায় ২০২৩ সাল এ খাতকে কতটা শক্তিশালী করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ এবং কানাডা ও মেক্সিকোর কয়েকটি অংশে ৪৪ হাজার একশ’র বেশি রোবট অর্ডার করেছে বিভিন্ন কোম্পানি। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সিং অটোমেশন’ বা ‘এ৩’র সংগৃহিত ডেটা অনুসারে, এটি আগের বছরের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি ও নতুন রেকর্ড।

ডেটা অনুযায়ী, এইসব মেশিনের সর্বমোট মূল্য গিয়ে ঠেকেছে দুইশ ৩৮ কোটি ডলারে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি।

“শ্রমিকের ঘাটতি মিটছে বলে মনে হচ্ছে না।” --বলেন এ৩’র প্রেসিডেন্ট জেফ বার্নস্টিন। ১৯৬৯ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বনিম্ন বেকারত্বের হারের মধ্যে কর্মী খুঁজতে লড়াই চালানো অনেক কোম্পানিই ‘অটোমেশন’কে একটি ঝটপট সমাধান হিসেবে বিবেচনা করছে।

বার্নস্টিন বলেন, বছরের শেষে অর্ডারের গতি কমে যাওয়ার বিষয়টি চোখে পড়েছে। এর ফলে প্রশ্ন উঠছে, ২০২৩ সালে এই পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে।

“চতুর্থ প্রান্তিক বড় প্রভাব পড়েছে অটোমোবিল শিল্পের।” --বলেন তিনি।

“স্বয়ংচালিত নয় এমন অর্ডারগুলোয় পতন দেখেছি আমরা।”

তিনি আরও যোগ করেন, মহামারী যুগের ভোক্তা আচরণ থেকে দূরে সরে যাওয়ার বিষয়টি সম্ভবত কোনো কোনো বিভাগে অর্ডার কমে যাওয়ায় ভূমিকা পালন করেছে।

“আপনারা দেখেছেন, অ্যামাজনের মতো কোম্পানি নতুন কারখানা তৈরি স্থগিত রেখেছে। এর মানে, এটি সম্ভবত বন্ধ হয়েছে গেছে অথবা নতুন স্বয়ংচালিত ব্যবস্থা কেনায় বিলম্ব ঘটছে।”

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরবরাহ চেইনের সমস্যার বিষয়টিও গত বছরের ফলাফলে ভূমিকা রাখতে পারে। বার্নস্টিন বলেন, রোবট নির্মাতারা কিছু সংখ্যক গ্রাহককে কোভিড ১৯ সংকটের সময় অতিরিক্ত অর্ডার দিতে দেখেছে, কেবল এটি নিশ্চিত করতে যে তারা নিজেদের প্রয়োজনীয় অংশ পাবে।

অটো খাত চালিত চাহিদা

গত বছরের অর্ধেকের বেশি অর্ডার এসেছে বিভিন্ন অটোমেকার ও তাদের সরবরাহকদের কাছ থেকে। আর তারাই দীর্ঘ সময় যাবত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কারখানার অটোমেশনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা দল ‘অ্যাটলাস পাবলিক পলিসি’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের শুরু থেকে ১৬ হাজার কোটি ডলার খরচে বিভিন্ন বিদ্যুচ্চালিত যানবাহন, ব্যাটারি ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যাটারির নতুন প্ল্যান্ট তৈরির ঘোষণা এসেছে।

গত বছর অর্ডার করা বেশিরভাগ রোবটই ব্যবহৃত হয়েছে কাঁচামাল সংশ্লিষ্ট ব্যবহারের জন্য। এই বিস্তৃত বিভাগের মধ্যে আছে বিভিন্ন কারখানা ও গুদামের ভেতর সকল ধরনের চলাচল ও পণ্য পরিচালনার মতো বিষয়গুলো।

উদাহরণ হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা রাজ্যের ক্রফোর্ডসভিল শহরে ‘ক্লোজার সিস্টেম ইন্টারন্যাশনাল’ নামের কোম্পানির তৈরি এক বিস্তৃত প্ল্যান্ট সম্প্রতি ‘অ্যাসেম্বলি লাইনের’ শেষে ‘বক্স প্যাকিং’ ও ‘সিল করার’ মতো কাজগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই করেছে। কোম্পানিটি কোমল পানীয়র বোতল ও খাবারের প্যাকেজের মতো জিনিসগুলোয় ব্যবহৃত বিভিন্ন ‘ক্যাপ’ তৈরি করে।

তালিকার পরবর্তী স্থানে আছে ‘অডিটরের’ চাকরী। ক্রফোর্ডসভিল প্ল্যান্টের বিভিন্ন মেশিন একটি মেশিনগানের চেয়ে দ্রুত নতুন ক্যাপ বের করতে পারে। ফলে, ‘অডিটর’ নামে পরিচিত কর্মীরা এখন লাইন বরাবর থাকা ছোট এক বুথে বসে ক্রমাগত পরীক্ষা করেন যে এর বিভিন্ন বিবরণী পূরণ হয়েছে কি না।

কোম্পানির বৈশ্বিক কার্যক্রম বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড বেনেট বলেন, পরিদর্শন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের জন্য শীঘ্রই ছোট রোবটগুলোকে বিভিন্ন বুথে ইনস্টল করা হবে।

“এর জন্য আমাদের মানুষ কমাতে হবে না।” --বলেন তিনি। এইসব কর্মীরা অন্যান্য কাজের দায়িত্ব পাবেন।

তিনি আরও বলেন, এইসব নতুন মেশিন মহামারী চলাকালীন বিভিন্ন ঘটনা এড়াতে সহায়তা করবে।

“কোভিডের সময়, আমরা কেবল প্ল্যান্টের ৩০ শতাংশ পরিচালনা করছিলাম। কারণ, সে সময় ঘণ্টায় ১৫ ডলারে কাজ করবেন, এমন কোনো কর্মী খুঁজে পাইনি আমরা।”