বাইডেনের অনুদানের শর্তে চিপ নির্মাতারা বলছেন, ‘সুবিধার না’

“বাজার কী করবে, তা কেউ জানে না। এই অনুদান অনেক ক্ষেত্রেই তাদের হাত-পা বেঁধে দেবে।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2023, 09:44 AM
Updated : 1 March 2023, 09:44 AM

যুক্তরাষ্ট্রে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন খাত ঢেলে সাজাতে বাইডেন প্রশাসন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তিন হাজার নয়শ কোটি ডলার অনুদান দেবে বলে ঘোষণা এসেছে আগেই। এবার ওই প্যাকেজ সংশ্লিষ্ট শর্ত প্রকাশের পর প্রযুক্তি খাতের অভিজ্ঞরা বলছেন, এর কিছু কিছু বিষয় অনুদানের আকর্ষণ কমিয়ে দিচ্ছে অনেকখানি।

অবশ্য, এইসব শর্তের কারণে কোম্পানিগুলো কারখানা বাড়ানোর পরিকল্পনা বাতিল করবে এমন কথা কোনো সূত্রই বলেননি। নানা ধরনের শর্তের মধ্যে এমনও আছে যে, অর্জিত বাড়তি মুনাফার একটি অংশ সরকারের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে, যেটি খরচ হবে কারখানার নির্মাণকর্মীদের শিশুকল্যাণে। আর এসব বিষয় নিয়ে ‘ইন্ডাস্ট্রি’ তেমন খুশি নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর মধ্যে মুনাফা ভাগাভাগির বিষয়টি সবচেয়ে বিতর্কিত। এই খাতের বিভিন্ন সূত্র বলছে, এই পদক্ষেপ অবাক করার মতো হলেও এটি কীভাবে বিভিন্ন কোম্পানির ওপর বর্তাবে, সেটি পরিষ্কার নয়। তবে, প্রতিটি কোম্পানিকেই মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলাদা আলাদা চুক্তি করতে হবে।

“এটা যদি তুলনামূলক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হয়, তবে (সরকার সম্ভবত) একটি আলোচনার পর্যায় খুঁজছে। আর এর কিছু সমালোচনা আছেও, যা এই কার্যক্রমকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলতে পারে।” – রয়টার্সকে বলেছে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের এক সূত্র। তবে তিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি  বিষয়টি নিয়ে স্পর্শকাতরতার কারণে।

এই খাতের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, এর মধ্যে কিছু নিয়ম প্রত্যাশিত ছিলই। যেমন, এমন আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া, যারা অনুদান পাওয়ার পর পাঁচ বছরের মধ্যে বাজার থেকে শেয়ার বাইব্যাক না করার শর্তে রাজী হবেন। তবে, এই শর্তও কোনো কোনো কোম্পানির জন্য কষ্টকর হয়ে যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

চিপ শিল্পের অস্থির বাজার পরিস্থিতিতে শেয়ার বাইব্যাক বিনিয়োগকারীদের খুশি রাখতে সাহায্য করেছে, যা দুই বছরে চিপ ঘাটতির মতো পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসায় সহায়ক হয়েছে।

“আমার ধারণা, এটি কোম্পানিগুলোর জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে।” --রয়টার্সকে বলেন চিপ শিল্পের আরেক নির্বাহী। তবে তিনিও নিজের পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ করেছেন।

“বাজার কী করবে, তা কেউ জানে না। এই অনুদান অনেক ক্ষেত্রেই তাদের হাত-পা বেঁধে দেবে।”

মঙ্গলবার নীতিমালা ঘোষণার সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রী জিনা এম রেইমন্ডো বলেন, তাদের নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে এই তহবিল যেন ভাল উপায়ে খরচ হয়, এমনভাবে যাতে শ্রমিকরাও উপকৃত হয়।

“আমাদের কার্যক্রমে, আমরা করদাতাদের ডলার রক্ষা, আমেরিকার কর্মশক্তির ক্ষমতা বাড়ানো ও মার্কিন ব্যবসাগুলোকে এমন প্ল্যাটফর্ম দিতে চাই যেখানে তারা সবচেয়ে ভাল কাজ করে। সেগুলো হলো উদ্ভাবন, পরিমাপ ও প্রতিযোগিতা।” --বলেন তিনি।

অ্যারিজোনার প্ল্যান্টের ওপর ভিত্তি করে আলোড়ন সৃষ্টি করা ‘তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি)’র মতো লাভজনক কোম্পানিগুলো মার্কিন অর্থায়নের জন্য আবেদন করবে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। ‘বাইব্যাক’ ও ‘প্রফিট-শেয়ারিং’য়ের মতো শর্তগুলোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলোর কাছে এটি মেনে চলা কঠিনই হবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।

“কোনো বিদেশী কোম্পানির জন্য নিজস্ব ব্যবসায় এই ধরনের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া বেশ জটিল।” --রয়টার্সকে বলেছেন এই শিল্পের তৃতীয় এক সূত্র।

এই প্রসঙ্গে রয়টার্স টিএসএমসি’র মন্তব্য জানতে চাইলে কোনো সাড়া দেয়নি কোম্পানিটি।

যেসব চিপ নির্মাতা কোম্পানি এরইমধ্যে নিজস্ব কারখানার কর্মীদের জন্য ‘চাইল্ড কেয়ার’ সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, তাদের কাছে নতুন প্ল্যান্টের নির্মাণ শ্রমিকদের একই সুবিধা দেওয়ার শর্ত ‘কিছুটা বিভ্রান্তির কারণ হলেও এগুলো বাস্তবায়নযোগ্য’ বলে দাবি করেছে এই শিল্পের প্রথম সূত্র।

“আমার শঙ্কা, এটি এই খাতের লোকজনের কাজের গতি কমিয়ে দিতে পারে।”

এর চেয়েও বড় সমস্যা হলো, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন চিপ প্ল্যান্ট তৈরিতে সম্ভবত খরচ বেড়ে যাবে। এরইমধ্যে দেশটিতে চিপ নির্মাণের খরচ তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরের মতো শিল্প কেন্দ্রগুলোর চেয়ে বেশি।