Published : 12 Dec 2023, 01:35 PM
মার্কিন আদালতে গুগলের বিরুদ্ধে আনা অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় জিতেছে জনপ্রিয় গেইম ফোর্টনাইটের নির্মাতা কোম্পানি এপিক গেইমস।
২০২০ সালে গেইম নির্মাতা কোম্পানিটির দায়ের করা মামলায় অভিযোগ ছিল, নিজস্ব অ্যাপ স্টোরকে অনৈতিকভাবে অগ্রাধিকার দিয়েছে সার্চ জায়ান্ট কোম্পানিটি, যার মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপ স্টোরগুলোর তুলনায় এ খাতে একচেটিয়া রাজত্ব করছে গুগল।
কয়েকশ কোটি ব্যবহারকারী গুগলের অ্যান্ড্রয়েড সফটওয়্যার চালিত স্মার্টফোন ব্যবহার করেন।
আদালতের সিদ্ধান্তে প্রতিক্রিয়ায় গুগল বলছে, তারা এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করবে।
“অন্যান্য শীর্ষ মোবাইল প্ল্যাটফর্মের চেয়ে ব্যবহারকারীদের বেশি সুবিধা ও স্বচ্ছতা দেয় গুগল প্লে ও অ্যান্ড্রয়েড।” --বলেন গুগলের জননীতি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলসন হোয়াইট।
“আমরা নিজেদের অ্যান্ড্রয়েড ব্যবসায়িক মডেলকে সমর্থন দিয়ে যাব। আর আমাদের ব্যবহারকারী, অংশীদার ও ছড়িয়ে থাকা অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেম নিয়ে কাজ করার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
এপিকের সিইও টিম সুইনি বলেন, এর প্রতিকারের কাজ শুরু হবে জানুয়ারি থেকে।
“গুগলের বিরুদ্ধে জয়! চার সপ্তাহের দীর্ঘ শুনানির পর সকল ক্ষেত্রেই গুগলের একচেটিয়া রাজত্বের প্রমাণ পেয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার জুরি।” --সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করেন সুইনি।
একমাস দীর্ঘ শুনানির পর সোমবার এ মামলার চূড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপন করেন দুই পক্ষের আইনজীবিরা।
আদালতের এক নথি অনুসারে, জুরি বোর্ড সর্বসম্মতিক্রমে এপিকের পক্ষে এ রায় দিয়েছে।
অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ নির্মাতাদের কাছ থেকে গুগলের ৩০ শতাংশ কমিশন কেটে নেওয়ার বিষয়টিকেও চ্যালেঞ্জ জানানো হয় এ মামলায়। এ ছাড়া, গুগল কীভাবে প্লে স্টোর ও নিজস্ব অর্থ পরিশোধ ব্যবস্থাকে সমন্বিত করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয় এতে। এর মানে, প্লে স্টোরে কোনো অ্যাপ রাখার ক্ষেত্রে প্লে স্টোর ও বিলিং পরিষেবা উভয়ই ব্যবহারের বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে অ্যাপ নির্মাতার।
বিবিসি বলছে, এ রায়ের মাধ্যমে নিজস্ব অ্যাপের সরবরাহ ও অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা সম্পর্কে আরও বেশি স্বচ্ছতা পাবেন অ্যাপ নির্মাতারা।
গুগল নিজ অবস্থানে অনড় থেকে বলছে, উল্লিখিত কমিশন এ খাতে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। আর এর বদলে, লাইকের রিচ, লেনদেনের নিরাপত্তা ও ম্যালওয়্যার থেকে সুরক্ষার মতো বাড়তি সুবিধা দেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেছে কোম্পানিটি।
এ রায় বহাল থাকলে, অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে আরও বেশি সংখ্যক অ্যাপ স্টোরকে সুযোগ দিতে বাধ্য হবে গুগল। ফলে, অ্যাপ থেকে কেনাকাটায় বড় অঙ্কের অর্থ হারাবে কোম্পানিটি।
গুগল প্লে স্টোর কত বড়?
গুগল প্লে স্টোর বিশ্বের সবচেয়ে বড় অ্যাপ স্টোরগুলোর একটি, যার প্রতিদ্বন্দ্বীতা সরাসরি অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরের সঙ্গে।
এপিক গেইমস বলছে, বৈশ্বিকভাবে ৭০ শতাংশ স্মার্টফোনই অ্যান্ড্রয়েড চালিত, যার মধ্যে ৯৫ শতাংশ অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপই ডিভাইসে আসে গুগল প্লে স্টোরের মাধ্যমে।
নিজেদের সার্চ ব্যবসার মতো প্লে স্টোরের ব্যবসা এতটা লাভজনক না হলেও, এর মাধ্যমে বিশ্বের কয়েকশ কোটি মোবাইল ও ট্যাবলেটে প্রবেশাধিকার পায় গুগল।
মামলার নথিতে এপিক বলেছে, গুগল ‘প্রতিযোগিতা বিরোধী গোপন চুক্তির জাল’ ছড়িয়ে ‘উদ্ভাবন ও ব্যবহারকারীর ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখে’।
“শুনানি চলার সময় আমরা এমন প্রমাণও দেখেছি, যেখানে গুগল নির্মাতাদের অ্যাপ সরবরাহের প্রচেষ্টা নস্যাৎ করতে বিকল্প অ্যাপ স্টোরগুলোকে কয়েকশ কোটি ডলার অর্থ পরিশোধ করতে চেয়েছে। পাশাপাশি, অ্যাপ স্টোরগুলোকে বাদ দিতে ডিভাইস নির্মাতাদেরও অত্যন্ত লাভজনক চুক্তির প্রলোভন দেখিয়েছে কোম্পানিটি।” --রায়ের পর দেওয়া বিবৃতিতে বলেছে এপিক গেইমস।
এদিকে, অ্যাপ নির্মাতা হিসাবে চুক্তি খেলাপের অভিযোগ তুলে এপিকের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেছে গুগল।
এর আগেও বেশ কয়েকটি অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার মুখে পড়েছে গুগল, যেখানে এপিকের মামলার শুরুর আগে সার্চ জায়ান্ট কোম্পানিটির বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ তুলেছিল ডেটিং অ্যাপ টিন্ডারের মালিক কোম্পানি ‘ম্যাচ’।
২০২০ সালে অ্যাপলের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা করেছিল এপিক। তবে, ২০২১ সালের এপ্রিলে অ্যাপলের পক্ষে রায় দেন মার্কিন এক বিচারক।
“মামলায় দেখানো প্রমাণ থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, স্মার্টফোনের ওপর অ্যাপল ও গুগলের ‘লাগাম টেনে ধরার’ বিষয়টি সুরাহা করতে নতুন নীতিমালা ও আইন অত্যন্ত জরুরী।” --বিবৃতিতে বলেছে এপিক গেইমস।