সর্বশেষ প্রান্তিকে কোম্পানির আইফোন বিক্রি কমেছে সম্ভবত দুই শতাংশের বেশি। ওই তুলনায়, এক বছর আগেও তিন শতাংশ বিক্রি বেড়েছিল আইফোনের।
Published : 02 Aug 2023, 05:03 PM
অর্থনৈতিক মন্দার কারণে গ্রাহকরা আইফোনের নতুন মডেল কেনা কমিয়ে দেওয়ায় এর প্রভাব পড়তে পারে কোম্পানির এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের হিসাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে কোম্পানি কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
বৃহস্পতিবারে নিজেদের প্রান্তিকের আয়ের হিসাব শেষ করবে বিশ্বের সবচেয়ে দামী প্রযুক্তি কোম্পানিটি। বাজার বিশ্লেষক কোম্পানি ‘রিফিনিটিভ’-এর তথ্য অনুসারে, এতে কোম্পানির সামগ্রিক প্রান্তিক আয়ে এক দশমিক ছয় শতাংশ হ্রাস দেখা যেতে পারে, যা ২০১৬ সালের পর থেকে তৃতীয় প্রান্তিকের আয়ে ‘সবচেয়ে বড় পতনে’র ঘটনা।
সফটওয়্যার কোম্পানি ‘ভিসিবল আলফা’র ২৪ বিশ্লেষকের জরিপ অনুসারে, গেল প্রান্তিকে কোম্পানির আইফোন বিক্রি কমেছে সম্ভবত দুই শতাংশের বেশি। ওই তুলনায়, এক বছর আগেও তিন শতাংশ বিক্রি বেড়েছিল আইফোনের। আর মার্চে শেষ হওয়া প্রান্তিকে বৃদ্ধির হার ছিল দেড় শতাংশ।
এই প্রান্তিকে মেটা, অ্যালফাবেট ও মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিগুলোর আয়ও কমতে পারে। এর আগে নিজেদের ক্লাউড ব্যবসা ও বিজ্ঞাপন বিক্রির খাত থেকে আয় বাড়তে দেখেছিল কোম্পানিগুলো।
“অ্যাপল এই সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রবণতার বাইরে নয়। তবে, তারা আরও কিছু সময় (স্মার্টফোন খাতের) গতিবিধি নির্ধারণ করতে থাকবে।” --বলেন বিশ্লেষক কোম্পানি ‘টেকঅ্যানালাইসিস রিসার্চ’-এর প্রতিষ্ঠাতা বব ও’ডনেল।
রয়টার্স বলছে, আগামী মাসে নতুন আইফোন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আসতে পারে। আর এর কয়েকটি মডেলে থাকতে পারে বৈশ্বিকভাবে ব্যবহৃত ‘ইউএসবি-সি’ পোর্ট। বিশ্লেষকদের অনুমান বলছে, বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের আইফোন বিক্রিতে এটি ‘ছোট ধাক্কা’ দিতে পারে।
অ্যাপল সাধারণত নিজস্ব প্রান্তিকের হিসাব প্রকাশ করে না। তবে বিশ্লেষকরা আশা করছেন, নিজেদের আসন্ন পণ্যগুলোর বিকাশে কীভাবে এআই ব্যবহৃত হয়েছে, সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে পারে কোম্পানিটি।
অ্যালফাবেট ও মাইক্রোসফটের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের বিপরীতে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন আয়োজনে ‘এআই’ বিষয়ক প্রচলিত শব্দগুলো এড়িয়ে গেছে অ্যাপল। গত মাসে মার্কিন বাণিজ্য প্রকাশনা ব্লুমবার্গ প্রতিবেদনে বলেছে, অ্যাপল গোপনে নিজস্ব এআই কাঠামো বানাচ্ছে, যার নাম ‘আয়াক্স’।
“আমরা আশা করছি, অ্যাপল নিজেদের আপডেট করা মন্তব্যে নিজেদের এআই লক্ষ্যমাত্রার বিষয়টিতে মনযোগ দেবে।” --এক গবেষণাপত্রে লেখেন আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি ‘ওয়েল ফার্গো’র বিশ্লেষকরা। তারা আরও যোগ করেন, এআই প্রযুক্তি নিয়ে যে কোনো মন্তব্যই কোম্পানির শেয়ারমূল্য বাড়িয়ে দিতে পারে।
রয়টার্স বলছে, এই বছর এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশের বেশি শেয়ারমূল্য বেড়েছে অ্যাপলের। ওই তুলনায় প্রযুক্তি সূচক ‘নাসডাক কম্পোজিট’-এর তথ্য অনুসারে, কোম্পানির শেয়ারমূল্য বেড়েছে প্রায় ৩৭ শতাংশ।
আইফোন বিক্রিতে পতন
বিশ্লেষকরা বলছেন, আইফোন বিক্রি কমে যাওয়ার বেশিরভাগই ঘটতে পারে আমেরিকা মহাদেশীয় অঞ্চলে। আর কোম্পানির আয় কমতে পারে ছয় শতাংশ পর্যন্ত।
অ্যাপলের তৃতীয় বৃহত্তম বাজার চীনে বিক্রি একই থাকবে কারণ দেশটি অসম এক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে, নিজেদের অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ভালো ফলাফল দেখিয়েছে কোম্পানিটি।
বাজার বিশ্লেষক কোম্পানি ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেটা কর্পোরেশন’-এর তথ্য অনুসারে, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সামগ্রিকভাবে চীনে স্মার্টফোনের শিপমেন্ট কমেছে দুই দশমিক এক শতাংশ।
“বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী মনে করেন, চীনের নরম পন্থা কোম্পানির সংখ্যা ও বাড়তি মন্তব্যের বেলায় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তবে, দেশটিতে অ্যাপলের শক্ত অবস্থান থাকায় কোম্পানিটি আইফোন বিক্রিতে সামান্য হ্রাস দেখতে পাবে।” --বলেন বিনিয়োগ কোম্পানি ‘পাইপার স্যান্ডলার’-এর বিশ্লেষকরা।
“চীনে কোম্পানির পণ্য বিক্রিতে দুর্বলতা দেখা দিলে হয়ত ভারতেও বিক্রির গতি কমে আসবে।”
রিফিনিটিভ-এর তথ্য অনুসারে, কোম্পানির ম্যাক ও আইপ্যাড বিক্রি কমতে পারে যথাক্রমে ১০ দশমিক ছয় শতাংশ ও ১১ দশমিক দুই শতাংশ।
বিশ্লেষকদের একটি অংশ বলছে, বিজ্ঞাপনী বাজারে উত্থান দেখা দেওয়ায় লাভবান হতে পারে অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে থাকা বিভিন্ন অডিও এবং ভিডিও স্ট্রিমিং সেবাদাতা।
এই ব্যবসায়িক খাত থেকে অ্যাপলের সামগ্রিক আয়ের এক চতুর্থাংশ আসে। এদিকে আশা করা হচ্ছে, কোম্পানির ‘আইক্লাউড’ গ্রাহক সেবার দাম বেড়ে যাওয়ায় এই খাতের আয়ে আরও পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ বৃদ্ধি দেখা যাবে। তবে, আগের তুলনায় তিন চতুর্থাংশ গতিতে অগ্রসর হচ্ছে এই খাত।