“এর মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আমরা এরইমধ্যে সংগীতের যেসব সুবিধা সম্পর্কে জানি, তার পরিসর আমাদের ধারণার চেয়েও বড়।”
Published : 29 Jan 2024, 05:13 PM
যে কোনো ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজানো বা গান গাওয়া বৃদ্ধ বয়সে মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে — এমন পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের গবেষকরা।
গবেষণায় উঠে এসেছে, সংগীতচর্চা ও নিয়মিত বই পড়া মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি ভাল রাখতে ও জীবনের বিভিন্ন জটিল কাজ সমাধানের ক্ষমতা বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে।
‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ জেরিয়াট্রিক সাইকিয়াট্রি’-তে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে লেখকরা বলেছেন, মস্তিষ্ক ঠিক রাখার জন্য সংগীতকে জীবনধারার অংশ হিসাবে বিবেচনা করা উচিৎ।
চল্লিশ বছরের বেশি বয়সী এক হাজার একশ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী নিয়ে গবেষণাটি চালানো হয়। তাদের গড় বয়স ছিল ৬৮’র বেশি।
এক বড় গবেষণার অংশ হিসাবে বয়স্ক ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘এক্সেটার ইউনিভার্সিটি’র বিজ্ঞানীরা, যেখানে মস্তিষ্কের বয়স কীভাবে বাড়ে ও কেন মানুষের ডিমেনশিয়া হয়, সে বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করেছেন তারা।
এ গবেষণায় বয়স্কদের ওপর বাদ্যযন্ত্র বাজানো, গান গাওয়া, বই পড়া ও গান শোনার প্রভাব এবং বাদ্যযন্ত্রের সম্ভাব্য সুবিধা পরীক্ষা করেছেন গবেষকেরা।
গবেষকরা এ পরীক্ষায় দুই ধরনের ব্যক্তির ডেটা তুলনা করেছেন। এর মধ্যে এক পক্ষ জীবনে কোনো না কোনো সময় বা কোনোভাবে সংগীতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর অন্য পক্ষে যারা ছিলেন, তারা কখনওই গান করেননি।
ফলাফলে দেখা যায়, যারা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছেন, তারা মানসিকভাবে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছিলেন। আর এটা সম্ভবত বাদ্যযন্ত্র বাজানোর মাধ্যমে সৃষ্ট ‘একাধিক জ্ঞানভিত্তিক চাহিদা’র কারণে হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
এ ক্ষেত্রে পিয়ানো বা কিবোর্ড বাজানো বিশেষভাবে সুবিধাজনক – বলছেন গবেষকরা। এ ছাড়া, পিতল ও কাঠের তৈরি বায়বীয় বাদ্যযন্ত্রগুলোও ভাল ফলাফল দেখিয়েছে।
তবে কেবল গান শোনাই স্বাস্থ্যের কগনিটিভ উন্নতিতে সহায়ক, বিষয়টি এমন নয়।
গবেষকরা বলছেন, গান গাওয়ার মাধ্যমে যে সুবিধা মেলে, তার আংশিক কারণ হতে পারে গায়ক বা সংশ্লিষ্ট কমিউনিটিতে প্রচলিত সামাজিক দিকগুলোও।
“যেহেতু এ গবেষণায় মনোযোগ ছিল আমাদের মস্তিষ্কের সংবেদনশীল বিষয়াদিতে, তাই আমরা মস্তিষ্কের কার্যাবলীর স্বতন্ত্র দিকগুলো খুঁজে পেয়েছি। যেমন– স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি, দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি বা সমস্যা সমাধানে সংগীতের প্রভাব কতটা কার্যকরী হতে পারে, এমন বিষয়গুলো।” — বিবিসিকে বলেন গবেষণার মূল লেখক অধ্যাপক অ্যান করবেট।
“এর মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আমরা এরইমধ্যে সংগীতের যেসব সুবিধা সম্পর্কে জানি, তার পরিসর আমাদের ধারণার চেয়েও বড়।”
“বিশেষ করে যখন কোনো বাদ্যযন্ত্র আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যে বড় প্রভাব ফেলে – সে বিষয়ের পাশাপাশি, যারা বৃদ্ধ বয়সে নিয়মিত বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে থাকেন তারাও এর বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন।”
জনস্বাস্থে প্রভাব
এ গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত সংগীতচর্চা করেন, তাদের সংখ্যা মনে রাখার ক্ষমতা বা স্মৃতিশক্তি তুলনামূলক ভালো।
অধ্যাপক করবেট বলেছেন, “শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মতোই আমাদের মস্তিষ্কও সাধারণ পেশী, যেটির নিয়মিত ব্যায়াম প্রয়োজন। আর নতুন ভাষা শেখার মতোই চ্যালেঞ্জিং বিষয় হল সংগীতচর্চা।”
তবে প্রথমবারের মতো যেসব বয়স্ক মানুষের সংগীতচর্চার শখ ছিল তাদের সম্ভাব্য উপকারকে এ গবেষণার আওতায় আনেননি গবেষকরা। তবে করবেট বিশ্বাস করেন, বর্তমান প্রমাণের ভিত্তিতে এটি ‘খুব উপকারী’ হবে।
করবেটের মতে, এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন ছিল। কারণ সংগীত শিক্ষার প্রচার জনস্বাস্থ্য বার্তার একটি ‘মূল্যবান’ অংশ হতে পারে, যা পরবর্তী জীবনে বয়স্ক বা প্রাপ্তবয়স্কদের সংগীতে ফিরে যাওয়ায় উৎসাহ দেবে।