অভিযানের চার নভোচারী যথাক্রমে ক্রিস্টিনা হ্যামক কোচ, জেরেমি হ্যানসেন, ভিক্টর গ্লোভার ও রিড ওয়াইসম্যান। সব ঠিকঠাক থাকলে এই অভিযান হবে ২০২৪ সালে।
Published : 04 Apr 2023, 02:51 PM
আর্টেমিস প্রকল্পের অংশ হিসেবে আর্টেমিস ২ চন্দ্রাভিযানের প্রথম চার নভোচারীর নাম ঘোষণা করেছে নাসা।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার পরিকল্পিত এই অভিযানের চার নভোচারী যথাক্রমে ক্রিস্টিনা হ্যামক কোচ, জেরেমি হ্যানসেন, ভিক্টর গ্লোভার ও রিড ওয়াইসম্যান।
চন্দ্রাভিযানের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমানো প্রথম নারী হিসেবে মিশনের বিশেষজ্ঞের দায়িত্ব পালন করবেন ক্রিস্টিনা। একই দায়িত্বে থাকবেন কানাডীয় নভোচারী জেরেমিও। এমন অভিযানে যাওয়া প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নভোচারী হিসেবে মিশন পাইলটের দায়িত্ব পালন করবেন ভিক্টর। আর ওয়াইসম্যান মিশনের কমান্ডারের দায়িত্বে থাকবেন বলে নিজেদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে নাসা।
মিশনের সদস্যদের কেউ কেউ এরইমধ্যে বিভিন্ন যুগান্তকারী মহাকাশ মিশন পরিচালনা করেছেন। উদাহরণ হিসেবে, কোনো নারীর মহাকাশে দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সময় কাটানোর ও প্রথম নারী হিসেবে স্পেসওয়াকে অংশ নেওয়ার রেকর্ড ক্রিস্টিনার দখলে।
এই চার নভোচারীকে বাছাই করেন নাসার ফ্লাইট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নরম্যান ডি নাইট। সোমবারের আয়োজনে নাসার পরিচালক বিল নেলসনের সঙ্গে নতুন দল ঘোষণাতেও তিনি ছিলেন।
নাসা বলছে, তারা এমন এক প্রকল্পের নভোচারী হতে যাচ্ছেন, যাদের শেষ পর্যন্ত চাঁদে অবতরণের সম্ভাবনা আছে। আর একে পরবর্তীতে মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহারের কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
আর্টেমিস ২ মিশনের উদ্দেশ্য চাঁদের আশপাশ ও পেছনে ১০ দিনে ২৩ লাখ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘আকাশযাত্রা’। আর এটি পরীক্ষা করে দেখা যে ওরিয়ন ক্যাপসুলের সকল জীবনসহায়ক যন্ত্র ও অন্যান্য ব্যবস্থা গভীর মহাকাশের নভোচারীদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না।
সব ঠিকঠাক থাকলে এই অভিযান হবে ২০২৪ সালে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, আর্টেমিস ২ মিশনটি পৃথিবীতে ফিরে আসার আগে চাঁদের দুরবর্তী দিকে প্রায় ১০ হাজার তিনশ কিলোমিটার এগিয়ে যাবে। আর সেটি সম্ভব হলে অ্যাপোলো ১৭ মিশনের রেকর্ডও ভাঙবে এটি। এখন পর্যন্ত চাঁদের সবচেয়ে কাছ ঘেঁষে যাওয়ার রেকর্ড ওই অ্যাপোলো মিশনেরই। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে নভোচারী জিন সারনান ও হ্যারিসন স্মিটকে চন্দ্রপৃষ্ঠে নিয়ে গিয়েছিল নাসার সর্বশেষ ওই অ্যাপোলো অভিযান।
১৯৬৯ সালে নিল আর্মস্ট্রং ও এডউইন ‘বাজ’ অলড্রিনের অ্যাপোলো ১১ মিশন দিয়ে শুরু করে অ্যাপোলো ১৭ পর্যন্ত মোট ছয়টি মিশনে মোট ১২ জন নভোচারী চাঁদে পাড়ি জমিয়েছেন।
আর্টেমিস ২ অভিযানের মাধ্যমে মানুষ পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে পৌঁছানোর রেকর্ডও করবে যা প্রায় তিন লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটার। সেই তুলনায় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে প্রচলিত নিম্ন কক্ষপথীয় অভিযানগুলোর দূরত্ব প্রায় চারশ ২০ কিলোমিটার।
নাসার দুই স্তরবিশিষ্ট ‘স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস) রকেটের সহায়তায় পৃথিবীর কক্ষপথের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে যাওয়া আর্টেমিস ২ মিশনের সদস্যরা ওরিয়ন মহাকাশযানের বিভিন্ন ম্যানুয়াল কৌশল অনুশীলন করবেন। পরবর্তীতে এটি নিয়ে আরও পরীক্ষার উদ্দেশ্যে ও চন্দ্রমিশনের ‘ফ্লাইবাই’ অংশ হিসেবে ক্যাপসুলটির নিয়ন্ত্রণ পুনরায় ‘গ্রাউন্ড কন্ট্রোলে’ ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
যাত্রাটি চাঁদের আশপাশে ওরিয়নের পরিক্রমণের মাধ্যমে শেষ হবে। পরবর্তীতে পৃথিবী ও চাঁদ উভয়ের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ব্যবহার করে মহাকাশযানকে চালকমুক্ত ফ্লাইটে ফেরত পাঠানো হবে, যেখানে সময় লাগতে পারে চার দিন। আর সমুদ্রে অবতরণের মাধ্যমে যাত্রাটি শেষ হবে।
আর্টেমিস ২ সফল হলে পরবর্তী বছরগুলোয় নভোচারীদের প্রথম চাঁদে অবতরণের উদ্দেশ্যে আর্টেমিস ৩ অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করছে নাসা, যেটিতে একজন নারী নভোচারী রাখার পরিকল্পনাও নাসার আছে। পরবর্তীতে, বছরে অন্তত একবার ক্রু’সহ মিশন পরিচালনা করতে পারে সংস্থাটি।
মার্কিন সোভিয়েত স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন শুরু হওয়া অ্যাপোলো প্রকল্পের সঙ্গে তুলনা করলে আর্টেমিস মিশনের ভিত্তি তুলনামূলক বিস্তৃত, যেখানে ইলন মাস্কের বাণিজ্যিক রকেট কোম্পানি স্পেসএক্সের পাশাপাশি কানাডা, ইউরোপ ও জাপানের সরকারী মহাকাশ সংস্থার মতো বাণিজ্যিক অংশীদাররা তাদের তালিকায় রয়েছে।
পাশাপাশি, কয়েক দশক ধরে নিজস্ব ‘স্পেস শাটল’ ও মহাকাশ স্টেশনের ওপর মনযোগ দেওয়ার পর পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথের বাইরে প্রথম মানুষ পাঠানোয় নাসার উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিষয়টিও চিহ্নিত করে অভিযানটি।