মার্কিন জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো অনলাইনে যৌন হয়রানি থেকে শিশুদের রক্ষায় যথেষ্ট কাজ করছে না।
Published : 31 Jan 2024, 07:13 PM
অনলাইনে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে বাড়তে থাকা উদ্বেগ নিয়ে মার্কিন হাউজ কমিটির সামনে সাক্ষ্য দেবেন মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ ও ‘এক্স’-এর সিইও লিন্ডা ইয়াকারিনো’সহ প্রযুক্তির খাতের শীর্ষ কর্তারা।
মার্কিন অঙ্গরাজ্য ওয়াশিংটনে বুধবার তাদের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
মার্কিন জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো অনলাইনে যৌন হয়রানি থেকে শিশুদের রক্ষায় যথেষ্ট কাজ করছে না। তারা আরও কঠোর আইন আনতে চাইছেন। পাশাপাশি, এখন পর্যন্ত নেওয়া পদক্ষেপ বিষয়ে নির্বাহীদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা দাবি করছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেনেট জুডিশিয়ারি কমিটি’র এ শুনানিতে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটক, ডিসকর্ড, ও স্ন্যাপচ্যাট প্রধানদেরও।
এ শুনানিতে যোগ দিতে সম্মত হওয়ার আগে একটি সমন পেয়েছেন এক্স-এর সিইও লিন্ডা ইয়াকারিনো, ডিসকর্ড প্রধান জেসন সাইট্রন, ও স্ন্যাপের প্রধান ইভান স্পিগেল।
এ ছাড়া, শুনানিতে স্বেচ্ছায় সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়েছেন মেটার মার্ক জাকারবার্গ ও টিকটকের প্রধান নির্বাহী শৌ জি চিউও।
প্যানেলের ডেমোক্র্যাটিক অংশের চেয়ারম্যান ডিক ডার্বিন ও রিপাবলিকান অংশের প্রধান লিন্ডজি গ্রেহাম এ পরিকল্পনা ঘোষণার সময় বলেন, ‘মা-বাবা ও শিশুরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ দেখতে চান।’
এর আগে মেটার এক সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মী মার্কিন কংগ্রেসে বলেছিলেন, “তিনি বিশ্বাস করেন, ইনস্টাগ্রাম কিশোর-কিশোরীদের যৌন হয়রানি থেকে রক্ষায় যথেষ্ট কাজ করছে না।” এর ঠিক তিন মাস পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শুনানিটি।
সে সময় মেটা বলেছিল, “কিশোর-কিশোরীদের অনলাইনে নিরাপদ পরিবেশ দিতে তারা ৩০টিরও বেশি নতুন টুল বানিয়েছে।”
অনলাইন ঝুঁকি
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই একই বিষয়ে শুনানি ডেকেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেনেট জুডিশিয়ারি কমিটি, যেখানে কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতার বিষয়ে একমত হয়েছিলেন শুনানিতে অংশ নেওয়া সাক্ষী ও আইনজ্ঞরা।
এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ‘কিডস অনলাইন সেইফটি অ্যাক্ট’ (কেওএসএ)’ এর মতো বেশ কয়েকটি বিল উত্থাপন করেছেন আইন প্রণেতারা, যা সম্প্রতি মেসেজিং সেবা স্ন্যাপচ্যাটের সমর্থনও পেয়েছিল।
এআই ব্যবহার করে তৈরি নকল ছবি’সহ অনলাইনে শিশুদের নগ্ন ছবি শেয়ার করার মতো বিষয়াদি নিয়ে কমিটি সম্ভবত বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন বলে উঠে এসেছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে।
মার্কিন আইনপ্রণেতারা বলেছেন, এ ধরনের ছবি দ্রতই ছড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি, শুনানির কারণ হিসাবে বিভিন্ন গোপন সূত্রের দেওয়া প্রমাণ ও শিশু নির্যাতন থেকে বেঁচে যাওয়া শিশুদের সাক্ষ্যের উদ্ধৃতি দিয়েছেন তারা।
যেসব শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানি শিশু-কিশোরদের অ্যাকাউন্ট নিয়ে মামলার মুখে পড়েছে, তারা বলেছে, ‘সমস্যাটি সমাধানে তারা কাজ করছে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে এ ধরনের কনটেন্ট শনাক্ত করে, শিশু সুরক্ষা সংস্থা ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়েটেড চিলড্রেন ইন ইউএস’-এর অভিযোগ জানাতে সহায়তার উদ্দেশ্যে বেশ কিছু টুল বানিয়েছে মাইক্রোসফট ও গুগল।
পাশাপাশি, অনলাইনে শিশু নিরাপত্তা বাড়াতে বেশ কিছু পরিবর্তনও এনেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।
উদাহরণ হিসেবে, অনেকে অভিভাবকদের হাতে বাড়তি নিয়ন্ত্রণ দিয়েছে, যার মাধ্যমে শিশুদের অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমনকি নিজের সন্তানরা সামাজিক মাধ্যমে কতটা সময় ব্যয় করছে সেটিও দেখতে পান অভিভাবকরা।
কিছু টুল রয়েছে যা শিশুদের কিছুক্ষণ পরে প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার বন্ধ করার কথা মনে করিয়ে দেয়। এ ছাড়া, অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে, ক্ষতিকারক কনটেন্ট (যেমন নিজের ক্ষতি করা) লুকিয়ে রাখা ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য শিশুদের সরাসরি বার্তা পাঠানোর সুবিধা বন্ধের মতো বিষয়গুলো৷
তবে, এমন পদক্ষেপে মার্কিন রাজনীতিবিদ বা জনগণের সমালোচনা বন্ধ হয়নি। বিবিসি লিখেছে, বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে সম্ভবত এ সত্যই মনে করিয়ে দিতে যাচ্ছে এ শুনানি।