চ্যাটজিপিটি: গুগলের নতুন মাথাব্যথা

গুগলের এক কর্মকর্তা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে চ্যাটজিপিটির নাম উল্লেখ না করে বলেছেন, এআই চ্যাটবটগুলো কার্যত সার্চ জায়ান্ট গুগলের ব্যবসার পুরোটাই গিলে খেতে পারে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Dec 2022, 11:07 AM
Updated : 23 Dec 2022, 11:07 AM

সার্চ রেজাল্টে সীমাহীন পেইজের লিংক দেখানোর বদলে দ্রুতগতিতে সরাসরি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে হালের আলোচিত এআই চ্যাটবট ‘চ্যাটজিপিটি’; আর তাতেই ‘মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার দশা’ হয়েছে সার্চ জায়ান্ট গুগলের।

নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চ্যাটজিপিটি ‘হুমকির’ উত্তর দিতে ইতোমধ্যে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ কয়েকটি দলের কাজ বন্ধ করে তাদের নতুন কাজে লাগিয়েছে গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেট সিইও সুন্দর পিচাই।

গুগলের এক কর্মকর্তা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে চ্যাটজিপিটির নাম উল্লেখ না করে বলেছেন, এআই চ্যাটবটগুলো কার্যত সার্চ জায়ান্ট গুগলের ব্যবসার পুরোটাই গিলে খেতে পারে। গুগলের আয়ের একটা বড় অংশ আসে সার্চ রেজাল্টে দেখানো বিজ্ঞাপন আর ই-কমার্স সাইটের প্রচার থেকে।

গুগলের এই ব্যবসায়িক মডেলকে রাতারাতি বাহুল্যে পরিণত করতে পারে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া চ্যাটজিপিটির মত এআইগুলো। কারণ বিজ্ঞাপনের কোনো ঝক্কি ঝামেলা নেই এআই প্ল্যাটফর্মে, ব্যবহারকারী তার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক তথ্য-উপাত্ত সরাসরি জানতে পারছেন এআইয়ের কাছ থেকে।

চ্যাটজিপিটির এই সাফ্যলে গুগল এতটাই অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়েছে যে, ‘গুগলের এআই কৌশল’ নির্ধারণের জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

সুন্দর পিচাই যে চ্যাটজিপিটির হুমকি সামাল দিতে তৎপর হতে বলেছেন– কোম্পানির অভ্যন্তরীণ মেমো দেখে ও অডিও রেকর্ডিং শুনে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। তবে তাদের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি গুগল কর্তৃপক্ষ।

অনলাইনে থাকা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আড্ডার ছলে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সক্ষমতা আছে চ্যাটজিপিটির। অন্যদিকে ব্যবহারকারীর প্রশ্ন বা অনুসন্ধানের উত্তর খুঁজতে ইন্টারনেট সম্ভাব্য উত্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওয়েবপেইজের লিংক খুঁজে দেয় গুগল। কিন্তু চ্যাটজিপিটি প্রশ্ন বুঝে সরাসরি উত্তর লিখে দিতে পারে।

নিজস্ব এআই প্রযুক্তি নির্মাণ অব্যাহত রাখলেও গুগল সে প্রযুক্তি জনসম্মুখে আনছে ধীর গতিতে। এক্ষেত্রে সামাজিক অবকাঠামোর ওপর এআই প্রযুক্তির বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা করছে গুগল– কোম্পানির অভ্যন্তরীণ মেমো দেখে তেমনটাই জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

এআই প্রযুক্তি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে গুগলের দ্বিধার আরেকটি কারণ হচ্ছে, অনলাইনের তথ্য-উপাত্তের সবই কোনো না কোনো মানুষের লেখা; এর ফলে জাতিবিদ্বেষ, পক্ষপাত এবং ভুয়া তথ্যের মত নেতিবাচক বিষয়গুলো এআইয়ের প্রশিক্ষণে মিশে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

ঠিক একই কারণে ২০১৬ সালে বাজারে অভিষেকের কয়েক দিনের মাথায় নিজস্ব এআই চ্যাটবট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিল উইন্ডোজ নির্মাতা মাইক্রোসফট। এআই চ্যাটবট নিয়ে একই পরিস্থিতিতে পড়েছিল ফেইসবুকের মূল কোম্পানি মেটাও।

গুগলের বার্ষিক আয়ের বড় অংশ আসে বিজ্ঞাপন এবং ই-কমার্স পণ্যের বিক্রি থেকে। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে গুগলের আয়ের ৮০ শতাংশ এসেছে এই ব্যাবসা কৌশলের সুবাদে।

কিন্তু এআই প্রযুক্তি ওয়েবপেইজের লিংক এবং কোডের বদলে মানুষের ভাষার ওপর নির্ভর করায় এ প্রযুক্তির সঙ্গে বিজ্ঞাপনের সমন্বয় বেশ জটিল কাজ বলে জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট।

শুধু তাই নয়, অনলাইনের তথ্যভাণ্ডার হাতড়ে উত্তর বানিয়ে দেওয়াও সাশ্রয়ী কার্যপ্রনালী নয়। এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়েই আছে ওপেনএআই-এর নির্মিত এই চ্যাটবট। ব্যবহারকারীর চাপে এর সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে কয়েকবার। তারপরও এআই চ্যাটবটটির পেছনে ওপেন এআই প্রতিমাসে ৩০ লাখ ডলার খরচ করছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।