নতুন এ উপাদান কার্বন ডাই অক্সাইড রূপান্তর থেকে শুরু করে পানি বিশুদ্ধকরণ ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’সহ অনেক কাজে সহায়ক হতে পারে বলে দাবি গবেষকদের।
Published : 17 Apr 2024, 06:17 PM
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা অবশেষে ‘গোল্ডিন’ তৈরি করতে পেরেছেন— সম্ভাব্যভাবে এটি যুগান্তকারী এক নতুন উপাদান হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ‘গোল্ডিন’ মূলত স্বর্ণের একটি পাতলা সংস্করণ।
গবেষণাটির নেপথ্যে ছিল গ্রাফিনের সফল উৎপাদন, যা একটি একক স্তরের গ্রাফাইট পরমাণু দিয়ে তৈরি। উপাদানটি এরইমধ্যে ‘মিরাকল ম্যাটিরিয়াল’ নামে পরিচিতি পেয়েছে, যা আশ্চর্যজনকভাবে অনেক শক্তিশালী ও এর তাপ ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন ক্ষমতা তামার চেয়েও ভাল।
নতুন আবিষ্কৃত ‘গোল্ডিন’ ঠিক এই নীতি মেনেই তৈরি হয়েছে, যেখানে গবেষকরা কেবল একটি পরমাণুর সমান পুরু স্তরে স্বর্ণ ছড়িয়ে দিচ্ছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রাফিনের মতোই এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন নতুন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, যা পরবর্তীতে বড় সাফল্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইন্ডিপেনডেন্ট।
নতুন এ উপাদান কার্বন ডাই অক্সাইড রূপান্তর থেকে শুরু করে পানি বিশুদ্ধকরণ ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’সহ অনেক কাজে সহায়ক হতে পারে বলে দাবি গবেষকদের। এমনকি প্রচলিত যেসব প্রযুক্তি স্বর্ণের মতো উপাদানের ওপর নির্ভর করে থাকে, সেগুলোতেও স্বর্ণের ব্যবহার কমিয়ে আনা যেতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, স্বর্ণ কেবল এমন বেশ কিছু উপাদানের একটি। তবে, এই একই প্রক্রিয়া অন্যান্য ধাতুতে ব্যবহার করা যেতে পারে কি না, তা বুঝে উঠতে এখনও কাজ চলছে।
“আপনি যদি কোনও উপাদানকে অত্যন্ত পাতলা করে তৈরি করেন, তবে অসাধারণ কিছু ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এর উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, গ্রাফিন। এমনকি স্বর্ণের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে,” বলেছেন ‘লিংকোপিং ইউনিভার্সিটি’র ‘ম্যাটিরিয়ালস ডিজাইন’ বিভাগের গবেষক শান কাশিওয়ায়া।
“স্বর্ণ যে সাধারণত ধাতু হয়ে থাকে, সে বিষয়টি সবারই জানা। তবে এটি যদি একক পরমাণুর স্তরের সমান পুরু হয়, তবে তা অর্ধপরিবাহী হয়ে উঠতে পারে।”
বেশ কয়েক বছর ধরেই এ ধরনের পাতলা স্বর্ণ তৈরির চেষ্টা করে আসছেন গবেষকরা। তবে, ধাতু জমে যাওয়ার প্রবণতার কারণে সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। জাপানি কারিগরদের থেকে অনুপ্রাণিত এক শতাব্দী পুরোনো এক কৌশলের সহায়তায় অবশেষে সাফল্য পেয়েছেন তারা।
এর সঙ্গে খানিকটা ভাগ্যও জড়িয়ে আছে, যেখানে নতুন উপাদানটির মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে টাইটেনিয়াম ও কার্বনের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে স্বর্ণের মিশ্রণ, যার খোঁজ মিলেছে অন্য একটি উপাদান খুঁজতে গিয়ে।
“আমরা পুরোপুরি ভিন্ন উদ্দেশ্যের কথা মাথায় রেখে উপাদানটি বানিয়েছি। আমরা মূলত ‘টাইটেনিয়াম সিলিকন কার্বাইড’ নামের বৈদ্যুতিক পরিবাহী সিরামিক নিয়ে কাজটি শুরু করেছিলাম, যেখানে সিলিকন থাকে বিভিন্ন পাতলা স্তরে,” বলেছেন লিংকপিং ইউনিভার্সিটি’র ‘থিন ফিল্ম ফিজিক্স’ বিভাগের অধ্যাপক লার্স হাল্টম্যান।
“এ ধারণার পরবর্তী ধাপ ছিল, সংযোগ তৈরির জন্য স্বর্ণের প্রলেপ দিয়ে উপাদানটি ঢেকে দেওয়া। তবে, আমরা যখন একে উচ্চ তাপমাত্রায় রাখি, তখন মূল উপাদানে সিলিকনের স্তরের জায়গা নিয়েছিল স্বর্ণ।”
বেশ কয়েক বছর ধরেই উপাদানটি নিয়ে কাজ করছিলেন গবেষকরা, যেখানে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে ‘ইন্টারক্যালেশন’ নামের এক প্রক্রিয়া। তবে, এতদিন এর থেকে স্বর্ণ বের করতে পারেনি তারা।
এরপর গবেষকরা জাপানি কারিগরদের একটি পদ্ধতি অনুসরণ করেন, যেটি ‘মুরাকামি’স রিএজেন্ট’ নামে পরিচিত। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপাদান থেকে কার্বন সরিয়ে ফেলা হয়, যাতে এর রং বদলানো যায়। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, ইস্পাত।
এ ছাড়া, উপাদান থেকে স্বর্ণ বের করে আনার ক্ষেত্রে ওই একই পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তনও এনেছিলেন গবেষকরা।
এ গবেষণার ফলাফল ব্যাখ্যা করা হয়েছে ‘সিন্থেসিস অফ গোল্ডেন কম্প্রিসিং সিংগল-অ্যাটম লেয়ার গোল্ড’ শীর্ষক নতুন এক নিবন্ধে, যা প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার সিন্থেসিস’-এ।