মাত্র তিনশ ডলারের পুরস্কার জেতা শিল্পকর্ম সামনে ঠেলে দিয়েছে মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন- এআই দিয়েই যদি শিল্প হয়, তবে সাধ্যসাধনা করে শিল্পী হওয়ার দরকার কী?
Published : 05 Sep 2022, 05:56 PM
প্রথম আর্ট কম্পিটিশনে অংশ নিয়েই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন গেইম নির্মাতা জেসন অ্যালেন। প্রথম পুরস্কার জিতেছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে তার তৈরি একটি ছবি। প্রশ্ন উঠেছে, এআই দিয়েই যদি শিল্প হয়, তবে সাধ্যসাধনা করে শিল্পী হওয়ার মানে কী?
অগাস্ট মাসে ‘কলোরাডো স্টেট ফেয়ার ফাইন আর্টস কম্পিটিশন’-এর উদীয়মান শিল্পীদের বিভাগে ‘ডিজিটাল আর্ট/ডিজিটালি ম্যানিপুলেটেড ফটোগ্রাফি’ শ্রেণিতে প্রথম পুরস্কার জিতেছেন ৩৯ বছর বয়সী জেসন অ্যালেন। কিন্তু, ‘স্পেস ওপেরা থিয়েটার’ শিরোনামের চিত্রকর্মটি তৈরিতে এআই সিস্টেম ‘মিডজার্নি’র সহযোগিতা নিয়েছিলেন তিনি। ব্যবহারকারী কমান্ড লিখে দিলে তার ভিত্তিতে ছবি বানাতে পারে এই এআই সিস্টেমটি।
মিডজার্নির সহযোগিতা নিয়ে বানানো চিত্রকর্ম দিয়ে কলোরাডোর আর্ট কম্পিটিশনে তিনশ ডলারের প্রথম পুরস্কার জেতার পর অ্যালেন মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, “আমি এ ছবিতে মুগ্ধ। আমি এটা ভালোবাসি এবং আমি মনে করি সবারই এটা দেখা উচিত।”
সমালোচকরা বলছেন, রেনেসাঁ আর স্টিমপাংক ধাঁচের উপস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে অ্যালেনের ছবি, পরবাস্তবতার অনুভূতি সৃষ্টি করছে দর্শকের মনে। প্রতিযোগিতায় এমন ‘এআই জেনারেটেড’ চিত্রকর্ম ছিল তিনটি। সবমিলিয়ে ১১জন শিল্পী ১৮টি ছবি জমা দিয়েছিলেন উদীয়মান শিল্পী বিভাগে।
প্রতিযোগিতার এ বিভাগটির সংজ্ঞাতেই বলা ছিল ‘ডিজিটাল আর্ট’ হচ্ছে এমন শিল্পকর্ম যার সৃষ্টিতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়েছেন শিল্পী।
বাজারের একমাত্র এআই ইমেজ জেনারেটর নয় ‘মিডজার্নি’, আরও আছে গুগল রিসার্চের ‘ইমাজেন’ এবং ওপেন এআইয়ের ‘ডাল-ই টু’। ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সেবা ডিসকর্ডের মাধ্যমে মিডজার্নি ব্যবহার করতে পারেন যে কেউ। ‘ডাল-ই টু’ ব্যবহার করতে বিশেষ আমন্ত্রণপত্র পেতে হয় আগ্রহী ব্যক্তিকে। আর ‘ইমাজেন’-কে এখনও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়নি গুগল।
শিল্পকর্ম সৃষ্টিতে এ নতুন ‘টুল’গুলোর আবির্ভাব, এদের সৃষ্টির প্রক্রিয়া, এবং কিছু ক্ষেত্রে এআইগুলোর নির্মাতারা এ প্রযুক্তিকে জনসাধারণের কাছ থেকে আড়াল করে রাখতে চাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, এই এআইগুলো কি আদৌ শিল্পকর্ম তৈরি করতে পারে বা মানুষকে শিল্পকর্ম তৈরিতে সহযোগিতা করতে পারে?
অ্যালেন ডিসকর্ডের মিডজার্নির সার্ভারে প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার জেতার খবর জানিয়েছেন ২৫ অগাস্ট। এরপরেই খেপেছেন শিল্পীরা।
“এটা একেবারেই ভালো হচ্ছে না কারণ ঠিক এ কারণেই আমরা রোবটদের অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে দেই না,”-- টুইট করেছেন এক শিল্পী।
“এটা হচ্ছে কয়েকটা বাটন চেপে ডিজিটাল শিল্পকর্ম বানানোর আক্ষরিক উদাহরণ। এআইয়ের শিল্পকর্ম হচ্ছে ডিজিটাল দুনিয়ার ‘দেয়ালের সঙ্গে স্কচটেপ দিয়ে লাগানো কলা’-- টুইট করেছেন আরেক ব্যবহারকারী।
অ্যালেন চিত্রকর্ম তৈরিতে রঙ তুলি ব্যবহার না করলেও কাজের কোনো কমতি ছিল না বলে জানিয়েছে সিএনএন। “বিষয়টা মোটেই কিছু শব্দ জুড়ে দিয়ে প্রতিযোগিতা জেতার মতো ছিল না,”--বলেন ওই গেইম নির্মাতা। প্রতিযোগিতায় জমা দেওয়া তিনটি ছবি তৈরি করতে ৮০ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছিল বলে জানিয়েছে অ্যালেন।
প্রথমে ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের পোশাক আর স্পেসস্যুটের হেলমেট মাথায় নারীদের ছবি তৈরি চেষ্টা করেন অ্যালেন। কার্যত ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের সঙ্গে মহাকাশের নভোচারীদের দৃশ্যায়নের মিশেল করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। শেষ তিনটি ছবির আগে আরও নয়শ সংস্করণ তৈরি করেছিলেন অ্যালেন।
পরে ফটোশপে ছবিগুলোকে আরও প্রসেস করেন তিনি। তারপর ছবির রেজুলিউশন বাড়াতে গিগাপিক্সেল এআই নামের আরেকটি সফটওয়্যার ব্যবহার করেন।
তবে, তার ছবির কারণে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তাকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখছেন অ্যালেন। “প্রযুক্তি বা তার পেছনের মানুষগুলোকে ঘৃণা করার বদলে আমাদের এটা বোঝা উচিত যে এটি খুবই শক্তিশালী একটি টুল,” বলেন তিনি।