ক্রিপ্টোর দুর্দিন, স্বস্তি মিলছে না বিটকয়েন মাইনারদের

২০১২ সালে হাত খুলে কামাই করলেও ২০২২ সালে এসে আগের বছরের অর্ধেক মুনাফাও পাচ্ছেন না বিটকয়েন মাইনাররা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2022, 09:34 AM
Updated : 27 Sept 2022, 09:34 AM

বছরের শুরু থেকেই বিপাকে আছেন ক্রিপ্টো মুদ্রার মাইনাররা; বাজারের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুদ্রা ইথার ‘মার্জ’ প্রক্রিয়ার কারণে তুলনামূলক স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরলেও নিম্নমুখী বাজারে স্বস্তি মিলছে না বিটকয়েনের।

২০২১ সালের পুরোটাই ছিল ক্রিপ্টো মুদ্রার বছর। বাজারে নতুন কয়েন বেচে ব্যাপক হারে কামাই করেছেন মাইনাররা। কিন্তু ২০২২ সালে এসে তাদের আগের বছরের অর্ধেক লাভও উঠছে না।

ব্লকচেইন ডটকমের ডেটার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, এ বছরে বিদ্যুৎ ও শক্তি উৎপাদন খাতে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার বিরূপ প্রভাব আর ‘ক্রিপ্টো উইন্টার’-এর দৃশ্যপটে বিশ্ববাজারে বিটকয়েন মাইনারদের দৈনিক আয় নেমে এসেছে এক কোটি ৭২ লাখ ডলারে; যা গত বছরের নভেম্বর মাসের তুলনায় ৭২ শতাংশ কম।

গত বছরের নভেম্বর মাসে সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড করেছিল বিটকয়েন; ওই সময়ে বিশ্ববাজার থেকে প্রতিদিন ছয় কোটি ২০ লাখ ডলার করে কামাচ্ছিলেন মাইনাররা।

ক্রিপ্টো মুদ্রার বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ব্লকওয়্যার সলুশনসের প্রধান ডেটা বিশ্লেষক জো বার্নেট রয়টার্সকে বলেন, “আয়ের হার ক্রমাগত কমতে দেখছেন মাইনাররা- বিটকয়েনের দাম কমছে, মাইনিং প্রক্রিয়ায় জটিলতা বেড়েছে এবং বিদ্যুতের খরচও আকাশচুম্বী হয়েছে।”

এর ফলে, মাইনিংয়ের জন্য যারা ব্যয়বহুল কম্পিউটার সেটআপ দাঁড় করিয়েছিলেন তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।

গত বছরের নভেম্বর মাসে বিটকয়েনের দাম উঠেছিল সর্বোচ্চ ৬৯ হাজার ডলারে। এ বছরের শুরু থেকে দাম পড়েছে বাজারের শীর্ষ মুদ্রাটির; অগাস্ট মাসে দাম কিছুটা বেড়ে ২৫ হাজার ডলারে উঠলেও সর্বশেষ ১৯ হাজার ডলারের আশপাশে রয়েছে প্রতিটি বিটকয়েনের দাম।

অন্যদিকে মাইনারদের সংখ্যা বাড়ায় যে পাজলের সমাধান করে নতুন কয়েনের টোকেন কামাতে হয়, তার জটিলতাও বেড়েছে। অর্থাৎ নতুন কয়েনের জন্য মাইনারদের সময় ও কম্পিউটারের সক্ষমতা দুটোই বেশি লাগছে।

এই দুরবস্থা আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে রয়টার্স। এ বছর শেয়ার বাজারে ‘ম্যারাথন ডিজিটাল’, ‘রায়ট ব্লকচেইন’ এবং ‘ভাল্কিরি বিটকয়েন মাইনার্স’-এর মত মাইনিং কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর পড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি।

অন্যদিকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়েই নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে ক্রিপ্টো মাইনিংয়ের ডেটা সেন্টার পরিচালক কোম্পানি ‘কম্পিউট নর্থ’।

তার মানে এই নয় যে বিটকয়েন মাইনিংয়ের দিন ফুরিয়ে এসেছে। রয়টার্স বলছে, শেষ বিটকয়েন ২১৪০ সাল নাগাদ মাইনিং হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে মাইনিংকে দীর্ঘমেয়াদী পেশা হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

“বাজারের অবস্থা যখন বেহাল, তখনই প্রবেশের সেরা সময়। আগে যে মাইনিং রিগের খরচ ছিল ১০ হাজার ডলার, সেটি এখন ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ কম দামে কিনতে পারবেন আপনি,”বলছেন শ্যাজমাইনিংয়ের প্রধান নির্বাহী উইলিয়াম সামোশজেগি। নবায়নযোগ্য শক্তি নির্ভর বিটকয়েন মাইনিং প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনা করেছে তার কোম্পানি।

মাইনাররা নতুন মাইনিং রিগ কেনাও কমিয়ে দিয়েছেন এবং এর ফলে নির্মাতারাও দাম কমাতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। জানুয়ারি মাসেই ‘এস১৯জে প্রো’ রিগের দাম ছিল ১০ হাজার একশ ডলার। সেপ্টেম্বর মাসে কম্পিউটার সেটাপটির দাম নেমে এসেছে তিন হাজার দুইশ ডলারে।

এ পরিস্থিতিতে মাইনারদের বিদ্যুৎ খরচ এবং জলবায়ুর ওপর এর প্রভাব কেন্দ্রীক নীতিমালার ওপর কাছ থেকে নজর রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ক্রিপ্টো খাতে বিনিয়োগের প্ল্যাটফর্ম ‘বিটকয়েন আইআরএ’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ক্রিস ক্লাইন।