এআইয়ের মাধ্যমে সংগীত বানাতে গিয়ে ১৯৫০-এর দশকের উপস্থিতিও খুঁজে পাওয়া গেছে। এখন বিভিন্ন রোবটও ডিজিটাল পপ তারকা হিসাবে সংগীত বানাচ্ছে।
Published : 02 Feb 2024, 03:27 PM
বর্তমানে এআই প্রযুক্তির যুগে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটে গেছে। অনেক কাজই এখন এআইয়ের কারণে অনেক বেশি দ্রুত ও নিখুঁতভাবে করা সম্ভব হচ্ছে। এমনকি বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে সংগীতের জগতেও।
সম্প্রতি এআই টুল নিয়ে নিজস্ব রেকর্ডিং কক্ষে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়েছেন ‘কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন’-এর একদল গবেষক, যেটিকে তারা সংগীতের ‘নতুন ভার্চুয়াল জগৎ’ বলে সম্বোধন করছেন।
কম্পিউটেশনাল ক্রিয়েটিভিটি ও জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি মধ্যে মেলবন্ধন ঘটানোর লক্ষ্যে ৩০ জনেরও বেশি ডক্টরাল শিক্ষার্থীর সঙ্গে কাজ করেছেন ইউনিভার্সিটির ‘ডিজিটাল মিডিয়া’ বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ড. ম্যাথিউ বার্থেট।
তাদের মধ্যে অন্যতম শিক্ষার্থী ছিলেন আন্দ্রেয়া মার্তোনেল্লি ও ম্যাক্স গ্রাফ, যারা এমন এক ‘ফিউচারিস্টিক স্টুডিও‘ বানিয়েছেন, যেখানে সংগীতকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে মেলবন্ধন করা হয়েছে।
“এটি বর্ধিত বাস্তবতার মতো’। আমরা যে বাস্তবতায় থাকি, তা প্রসারিত করার একটি উপায় এটি,” নিজের ভার্চুয়াল যন্ত্র ‘নেটজ’ দেখানোর সময় রয়টার্সকে এমনটিই বলেছেন ম্যাক্স গ্রাফ।
‘নেটজ’কে মূলত একটি অগমেন্টেড রিয়ালিটি হেডসেটের মাধ্যমে বাজানো হয়, যা নোট বা কর্ড সংশ্লিষ্ট আউটপুট তৈরিতে সহায়ক।
অন্যদিকে, আন্দ্রেয়া মার্তোনেল্লি বাজিয়েছেন এআই সেন্সরযুক্ত উন্নত গিটার ‘এইচআইটিআর’, যা ড্রাম ও সিন্থেসাইজারের শব্দ তৈরির জন্য মার্তোনেল্লির গতিবিধি অনুসরণ করে থাকে।
এআইয়ের মাধ্যমে সংগীত বানাতে গিয়ে ১৯৫০-এর দশকের উপস্থিতিও খুঁজে পাওয়া গেছে। তবে জেনারেটিভ এআইয়ের সাম্প্রতিক যুগান্তকারী অগ্রগতিতে এখন বিভিন্ন রোবটও ডিজিটাল পপ তারকা হিসাবে সংগীত বানাচ্ছে। আর এটা সংগীত শিল্পের প্রতি মানুষের মতামতেও পার্থক্য তৈরি করছে।
গত বছর চ্যাটজিপিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সিস্টেমের মাধ্যমে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এআই প্রযুক্তি, যেখানে কোনো গানের শব্দ, পুরো গান দিয়ে একেবারে নতুন কনটেন্ট তৈরি করা যায়। এরপরও শিল্পীরা প্রায়ই নিজেদের শব্দকে আরও উন্নত করার সহজ উপায় হিসেবে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে বলে উঠে এসেছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।
যুক্তরাজ্যের রক গায়ক ও গীতিকার ‘ইউংব্লুড’ রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন এআই তার সংগীতকে ‘নতুন স্তরে’ নিয়ে যেতে সহায়ক হতে পারে। তবে, অন্যান্য সংগীতশিল্পীর দুশ্চিন্তার বিষয় হলো এআই আদতে এ পথে কত দূর পর্যন্ত এগোবে।
“আমি বিশ্বাস করি, একটি গান লিখে দিতে যদি কারো এআইয়ের দরকার হয়, বিশেষ করে বিভিন্ন উপমা তৈরির ক্ষেত্রে, সেটি মোটেও ভালো কিছু নয়,” বলেছেন অলটানেটিভ রক জুটি নোভা টুইনস-এর এমি লাভ।
পাশাপাশি শিল্পীদের কণ্ঠ কৃত্রিমভাবে তৈরি করার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, এখন প্রয়াত শিল্পীদের কণ্ঠস্বরও ব্যবহার করা হচ্ছে, এমনকি ‘তারা এখন জীবিত না থাকলেও’।
গত নভেম্বরে প্রকাশ পেয়েছে জনপ্রিয় ব্রিটিশ রক ব্যান্ড ‘বিটলস’-এর শেষ গান ‘নাও অ্যান্ড দেন’, যেখানে জন লেননের পুরোনো এক রেকর্ডিং থেকে এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তার কন্ঠস্বর নতুন করে তুলে ধরা হয়।
সে সময় ‘ওয়ার্নার মিউজিক’ বলেছিল, এআই ব্যবহার করে জন লেননের কণ্ঠ তৈরির পাশাপাশি প্রয়াত ফরাসি গায়িকা এডিথ পিয়াফের কণ্ঠস্বরও ফিরিয়ে আনা হয়েছে এ প্রযুক্তির মাধ্যমে।
প্রযুক্তির বাজারে বিভিন্ন লেবেল ও স্ট্রিমিং কোম্পানির পদচারনার বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এআই আইনি ও নৈতিক উদ্বেগগুলোকে জাগিয়ে তুলছে।
“বেআইনি উপায়ে জেনারেটিভ এআইয়ের মাধ্যমে গান বানালে তা এর অপার সম্ভাবনাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে,” বলেছেন ‘ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ দ্য ফোনোগ্রাফিক ইন্ডাস্ট্রি’র বৈশ্বিক নীতি বিভাগের পরিচালক আব্বাস লাইটওয়ালা।
এদিকে, জেনারেটিভ এআইয়ের নিয়ন্ত্রণ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।
“আমার ধারণা মিউজিক প্রোডাকশন চেইনে জায়গা করে নিতে পারে এআই প্রযুক্তি। আবার যদি এটি সঠিক পথে পরিচালিত হয়, তখন এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে যে সঙ্গীতজ্ঞ ও পারফর্মাররাও যেন এর সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন,” বলেন ড. বার্থেট৷
“তবে এমন পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে, যেখানে এআইয়ের মাধ্যমে সংগীত বা নতুন ভার্চুয়াল জগৎ তৈরির কাজ হচ্ছে, যা এখনও বাস্তবে রূপ নেয়নি।”