নতুন থ্রাস্টারে কোম্পানি অধিগ্রহণের সুফল পাচ্ছে স্পেসএক্স

“ক্রিপ্টন খুবই বিরল হওয়ায় আর্গনে রূপান্তরের প্রক্রিয়া জটিল হলেও এটার প্রয়োজন ছিল।” --টুইটারে বলেন স্পেসএক্স সিইও ইলন মাস্ক।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2023, 12:00 PM
Updated : 5 March 2023, 12:00 PM

স্টারলিংকের নতুন শ্রেণির স্যাটেলাইটে গত বছরের এক কোম্পানি অধিগ্রহণের সুফল পাচ্ছে ইলন মাস্ক মালিকানাধীন রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স।

এই সপ্তাহের শুরুতে স্টারলিংকের ‘ভি২ মিনি’ স্যাটেলাইটে ব্যবহৃত নতুন ‘আর্গন হল’ থ্রাস্টার সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে এই রকেট নির্মাতা কোম্পানি। এই থ্রাস্টার উদ্ভাবন করেছে কোম্পানির ২০২১ সালে অধিগ্রহণ করা স্যাটেলাইট নির্মাতা ‘সোয়ার্ম টেকনোলজিস’। বিভিন্ন ‘আইওটি’ ডিভাইসের জন্য অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির স্যাটেলাইট তৈরি ও পরিচালনার কাজ করে থাকে কোম্পানিটি।

প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকক্রাঞ্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুলাইয়ে সম্পন্ন হওয়া এই চুক্তি, স্পেসএক্স-এর ‘খুবই বিরল’ এক পদক্ষেপ। এখন পর্যন্ত স্পেসএক্স-এর ২১ বছরের ইতিহাসে এটিই একমাত্র অধিগ্রহণ।

স্পেসএক্স-এর অধিগ্রহণের সময় সোয়ার্ম একেবারেই নতুন একটি কোম্পানি ছিল। সে সময় এই স্টার্টআপে কেবল ৩০ জন কর্মী, একশ ২০টি ‘স্যান্ডউইচ’ আকারের স্যাটেলাইট ও এর আগের বছর চালু করা একটি ফ্ল্যাগশিপ পণ্য ছিল। 

তবে মহাকাশ শিল্পে মেধাকে সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করায় এখন দেখা যাচ্ছে, এই কোম্পানি অধিগ্রহণ করে ব্যপকভাবে লাভবান হয়েছে স্পেসএক্স।

সোয়ার্মের দুই সহ-প্রতিষ্ঠাতা সারা স্পাঙ্গেলো ও বেনজামিন লংমিয়ের দায়িত্ব পান স্পেসএক্স-এর স্যাটেলাইট প্রকৌশল বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে। আর দুজনই স্টারলিংকের ‘ডিরেক্ট টু সেল’ দলের অংশ, যা বিশ্বের বিভিন্ন স্মার্টফোনে স্যাটেলাইট সংযোগ চালুর লক্ষ্যে কাজ করছে।

তবে নিজের লিংকডইন প্রোফাইলে লংমিয়ের উল্লেখ করেন, তিনি স্টারলিংকের বিদ্যুৎ পরিচালনা দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই সপ্তাহে ঘোষিত নতুন আর্গন হল স্যাটেলাইট তৈরির পেছনে কাজ করেছে দলটি।

টেকক্রাঞ্চ বলছে, ‘হল’ থ্রাস্টার নিজেই আসলে নতুন কিছু নয়। এই নামের মাধ্যমে কয়েক দশক পুরোনো ‘প্রোপালশন’ প্রযুক্তিকে বোঝায়। বিভিন্ন হল থ্রাস্টার মূলত প্রপেলান্ট আয়নিত করতে ও প্লাজমা তৈরির উদ্দেশ্যে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করে।

প্রোপেলান্টের মধ্যে সত্যিকারের উদ্ভাবন হলো ‘আর্গন’। নিজের প্রাচুর্যের কারণে এটি ‘জেনন’ (হল থ্রাস্টারে ব্যবহৃত সবচেয়ে সাধারণ ও দামী প্রপেলান্ট) ও ‘ক্রিপ্টন’ (স্টারলিংকের ভি১ ও ভি ১.৫ স্যাটেলাইটে স্পেসএক্স’র ব্যবহৃত প্রপেলান্ট)-এর চেয়ে ব্যপক সাশ্রয়ী।

“ক্রিপ্টন খুবই বিরল হওয়ায় আর্গনে রূপান্তরের প্রক্রিয়া জটিল হলেও এটার প্রয়োজন ছিল।” --টুইটারে বলেন স্পেসএক্স সিইও ইলন মাস্ক।

অনলাইনে শেয়ার করা তথ্য বলছে, নতুন শ্রেণির থ্রাস্টার দুই দশমিক চারগুণ জ্বালানী তৈরির পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট ধাক্কায় (উৎপাদিত থ্রাস্টের বিপরীতে ইউনিট কতটা দক্ষতার সঙ্গে প্রপেলান্ট ব্যবহার করে সেটির পরিমাপ) আগের স্টারলিংক থ্রাস্টারের চেয়ে দেড় গুণ ধাক্কা তৈরি করতে পারে।

২০১১ সালের শুরুতে আর্গন গ্যাস ব্যবহার করে এমন বৈদ্যুতিক প্রপালশন সিস্টেম সংশ্লিষ্ট এক প্রযুক্তি গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ছিলেন লংমিয়ের। আর থ্রাস্টারে আর্গন ও জেনন’কে প্রোপেলান্ট হিসেবে ব্যবহার নিয়ে প্রকাশিত অন্যান্য গবেষণাপত্রেরও সহ-লেখক ছিলেন তিনি।

টুইটারে লংমিয়ের বলেন, এটি কক্ষপথে থ্রাস্টারের অনুমোদন থেকে পাঁচশ ৫৬ দিন দূরে ছিল। এর মানে, সোয়ার্ম অধিগ্রহণের পরপরই অর্থাৎ ২০২১ সালের অগাস্টের শেষেই থ্রাস্টার নিয়ে কাজ শুরু করেছে স্পেসএক্স। এই প্রসঙ্গে টেকক্রাঞ্চ লংমিয়েরের মন্তব্য জানতে চাইলেও তিনি সাড়া দেননি।