‘ক্ষতওয়ালা’ এই তারাটি গ্রহ ধ্বংস করে

‘ডব্লিউডি০৮১৬-৩১০’ নামে পরিচিত এ তারায় ধাতুর ঘনত্ব অনেক বেশি, যা এর পৃষ্ঠে লেগে আছে। একসময় সূর্যের মতোই বড় ছিল এটি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2024, 09:22 AM
Updated : 28 Feb 2024, 09:22 AM

সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এমন এক ‘ক্ষতচিহ্নওয়ালা’ তারা খুঁজে পেয়েছেন, যা এর আশপাশের গ্রহগুলোকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে।

কোনও তারার আয়ু শেষ হয়ে গেলে সেটি এর আশপাশের গ্রহ ও গ্রহাণুগুলোকে গিলে খেয়ে একটি ‘সাদা বামনে’ পরিণত হতে পারে। এ নিয়ে প্রথমবারের মতো অনুসন্ধান চালিয়ে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন, এমন প্রক্রিয়ায় তারা’র ওপর এক বিশেষ ধরনের স্থায়ী ‘ক্ষতচিহ্ন’ তৈরি হতে পারে।

একে ‘সূর্যের আয়ু শেষ হওয়ার পর সৌরজগৎ গিলে খাওয়ার’ সঙ্গে তুলনা করেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট, যেখানে পৃথিবী’সহ সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ গিলে খাওয়ার পর নক্ষত্রটিতে একটি ‘ক্ষতচিহ্ন’ তৈরি হবে।

“আমাদের সূর্যের মতো তারাগুলো ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়ে যে সাদা বামন হয়, তা এখন জানা তথ্য। তবে এখন আমরা জানতে পেরেছি, এই প্রক্রিয়ায় মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে তারার চৌম্বকক্ষেত্র, যার ফলে সাদা বামনের পৃষ্ঠে একটি ‘ক্ষতচিহ্নের’ দেখা মেলে,” বলেছেন যুক্তরাজ্যের উত্তর আয়ারল্যান্ডের ‘আরমাঘ অবজারভেটরি অ্যান্ড প্ল্যানেটরিয়াম’-এর জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও নতুন এ গবেষণার প্রধান লেখক স্টেফানো ব্যাগনুলো।

‘ডব্লিউডি০৮১৬-৩১০’ নামে পরিচিত এ তারায় ধাতুর ঘনত্ব অনেক বেশি, যা এর পৃষ্ঠে লেগে আছে। একসময় সূর্যের মতোই বড় ছিল এটি। তবে, এখন এর আকৃতি সংকুচিত হয়ে পৃথিবীর প্রায় সমানে গিয়ে পৌঁছেছে।

গবেষকরা বলেছেন, এইসব ধাতু একসময় বিভিন্ন এমন গ্রহের আদি অবস্থা ছিল, যেগুলো কখনওই পৃথিবীর আকারে পৌঁছাতে পারেনি।

“আমরা এর নমুনা পরীক্ষায় পেয়েছি, এইসব ধাতুর উৎপত্তি কোনও গ্রহের খণ্ড থেকে। আর এর আকার সম্ভবত আকাশের উজ্জ্বলতম গ্রহাণু ‘ভেস্তা’র সমান বা এর চেয়েও আকারে বড় হতে পারে, যা প্রায় ৫০০ কিলোমিটার আকার নিয়ে সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহাণু হিসেবে রয়েছে।” – বলেছেন যুক্তরাজ্যের ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন’-এর অধ্যাপক ও এ গবেষণার সহ-লেখক জে ফারিহি।

ধারণা করা হচ্ছে, ধাতুগুলো তারার পৃষ্ঠজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট অংশে অবস্থান করছে। আর এই অংশটি গ্রহের চৌম্বকীয় মেরুগুলোর যে কোনো একদিকে আছে বলে ধারণা প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, চৌম্বকক্ষেত্র ধাতুগুলোকে তারার দিকে টেনে নিয়ে এর ওপর ক্ষতচিহ্ন সৃষ্টি করে।

“তবে চমকপ্রদ বিষয় হল, তাত্ত্বিকভাবে এ ধাতু তারার পৃষ্ঠে সমানভাবে মেশেনি। এর বদলে, ক্ষতচিহ্নটি গ্রহের ঘনীভূত অংশের ধাতু ছিল। আর একে ধারণ করেছে ওই একই চৌম্বকক্ষেত্র, যেটি আঘাতসৃষ্টকারী টুকরোগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে,” বলেছেন কানাডার ‘ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক ও এ গবেষণার সহ-লেখক জন ল্যান্ডস্ট্রিট, যিনি ‘আরমাঘ অবজারভেটরি অ্যান্ড প্ল্যানেটরিয়াম’-এর একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবেও কাজ করছেন।

“এর আগে কখনওই এমন কিছু দেখা যায়নি।”

এ গবেষণার বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে ‘ডিসকভারি অফ ম্যাগনেটিকালি গাইডেড মেটাল অ্যাকরেনশন অনটু এ পল্যুটেড হোয়াইট ডোয়ার্ফ’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে, যা প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ।