গবেষণা: ঘৃণার ‘ব্যাপক ফলন’ ইলন মাস্কের টুইটারে

এই গবেষণার কেইস স্টাডি হিসেবে, ১৯ নভেম্বরের কলোরাডো স্প্রিংস হামলা নিয়ে ‘এলজিবিটিকিউ+ বিরোধী’ বিভিন্ন টুইট খুঁজে দেখেন গবেষকরা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2022, 09:53 AM
Updated : 3 Dec 2022, 09:53 AM

ইলন মাস্কের টুইটার অধিগ্রহনের পর থেকে প্ল্যাটফর্মটিতে ব্যপক হারে বেড়েছে আপত্তিকর ভাষার ব্যবহার। বিষয়টি উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়।

অক্টোবরের শেষে চার হাজার চারশ কোটি ডলারে সামাজিক প্ল্যাটফর্মটি কেনার পর কোম্পানির আট হাজার কর্মীর প্রায় অর্ধেকই ছাঁটাই করেন মাস্ক।

শুক্রবার, প্ল্যাটফর্মটিতে ঘৃণামূলক বক্তব্য বেড়ে যাওয়া নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ‘সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হেইট (সিসিডিএইচ)’।

ওই অনুসন্ধানে উঠে আসে ২০২২ সালে মাস্কের অধিগ্রহনের আগে ও পরে প্রতিদিনের গড় হিসাবে টুইটারে-

  • ‘নিগার’ শব্দের দৈনিক ব্যবহার বেড়েছে তিন গুণ।

  • ‘কান্ট’ শব্দের দৈনিক ব্যবহার বেড়েছে ৩৩ শতাংশ।

  • ‘ফ্যাগট’ শব্দটির ব্যবহার বেড়েছে ৫৮ শতাংশ।

  • ‘ট্রানসি’ শব্দের ব্যবহার বেড়েছে ৬২ শতাংশ।

টুইটার দলকে অভিনন্দন জানিয়ে মাস্কের টুইটের মাত্র কয়েকদিন পরেই এই খবর এলো। ওই টুইটে তিনি উল্টো দাবি করেছিলেন, আগের তুলনায় প্ল্যাটফর্মটিতে ঘৃণাবাচক বক্তব্য কমেছে এক-তৃতীয়াংশ।

১৮ নভেম্বর তিনি আরও দাবি করেন, টুইটারের নতুন নীতি ‘বাক স্বাধীনতার সমর্থক হলেও ‘নাগালে পৌঁছানোর স্বাধীনতা নয়’।

“ঘৃণাবাচক টুইটে বুস্ট ও মনিটাইজ না করার সর্বোচ্চ পদক্ষেপ থাকবে। ফলে, কোনো বিজ্ঞাপনী বা অন্যান্য আয় আসবে না।”

“বিশেষভাবে না খুঁজলে আপনি ওই টুইটের দেখাও পাবেন না।”

প্ল্যাটফর্মে ‘গালি দেওয়া’ টুইটের গড় সম্পৃক্ততাও বেড়ে গেছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

ব্যাপকভাবে প্রচলিত নারী-পুরুষ সম্পর্কের বাইরের লোকজন ‘এলজিবিটিকিউ’ নামে পরিচিত; যার পূর্ণ রূপ ‘লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার অ্যান্ড কুইয়ার’।

মাস্কের অধিগ্রহনের দুই সপ্তাহ আগে, ‘নিগার’, ‘ট্রানসি’ বা ‘ফ্যাগট’ ব্যবহৃত টুইটের রিপ্লাই, রিটুইট ও লাইকের গড় সংখ্যা ছিল ১৩ দশমিক তিন। তবে, অধিগ্রহনের পর এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৪৯-এ, যা আগের তুলনায় পৌনে তিনশ শতাংশ বেশি!

সে সময় কোম্পানির নিরাপত্তা প্রধান ইয়োয়েল রথ বলেছিলেন, সম্মুখসারীর কর্মীদের ওপর এর ‘সবচেয়ে কম প্রভাব’ পড়েছে। তবে, গত সপ্তাহে পদত্যাগের পর এই সুর পাল্টে তিনি বলেন, মাস্কের অধীনে টুইটার নিরাপদ নয়।

এর কেইস স্টাডি হিসেবে, ১৯ নভেম্বরের কলোরাডো স্প্রিংস হামলা নিয়ে ‘এলজিবিটিকিউ+ বিরোধী’ বিভিন্ন টুইট খুঁজে দেখেন গবেষকরা। ওই ঘটনায় এক ‘এলজিবিটিকিউ’ ক্লাবে পাঁচজন ব্যক্তি নিহত হন।

ব্যাপকভাবে প্রচলিত নারী-পুরুষ সম্পর্কের বাইরের লোকজন ‘এলজিবিটিকিউ’ নামে পরিচিত; যার পূর্ণ রূপ ‘লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার অ্যান্ড কুইয়ার’। এই তালিকার বাইরে আরও সম্পর্কের ধরন বুঝাতে এতে পরে যোগ চিহ্ন যুক্ত হয়। এই শ্রেণিভুক্তরা নিজেদের ‘নন-বাইনারি’ বলে পরিচয় দেন।

মাস্কের টুইটার দখলের তিন মাস আগে, গড় হিসাবে প্রতি মাসে দুই লাখ ২২ হাজার সাতশজন ফলোয়ার পেয়েছে এই ধরনের ভাষা সর্বাধিক ব্যবহার করা ১০টি অ্যাকাউন্ট।

মাস্কের অধিগ্রহনের মাসে, ওই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় নয় লাখ ৪৪ হাজার দুইশ পাঁচজন ফলোয়ারে, যা আগের চেয়ে তিনশ ২০ শতাংশ বেশি।

মাস্কের নেতৃত্ব কীভাবে টুইটারকে বদলে ফেলছে, তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ার মতো তথ্য-উপাত্ত এবারই মিলল এমন নয়।

কোভিডের ভুল তথ্য সম্পর্কিত নীতিমালা বন্ধের কারণে হয়তো ভ্যাক্সিন বিরোধীদের তুলনামূলক বেশি স্বাধীনতা দেবে বলে উল্লেখ রয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে।

এদিকে, মাস্কের ‘সাধারণ ক্ষমার’ ঘোষণা সেইসব অ্যাকাউন্টকে প্ল্যাটফর্মটিতে ফেরার সুযোগ দেবে, যারা এর আগে টুইটারের নীতিমালা ভঙ্গের দায়ে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। এর মধ্যে আছে বিভিন্ন শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী, নারীবিদ্বেষী ও চরম ডানপন্থী ষড়যন্ত্রতত্ত্ববাদীর অ্যাকাউন্ট।

“এই ধরনের ব্যবহারকারী ব্যপক হারে বৃদ্ধি পেলেও, প্ল্যাটফর্মে ঘৃণাবাচক বক্তব্যের ছাপ, ওই ধরনের টুইট দেখার সংখ্যা কমতে থাকবে।” --শুক্রবার সিসিডিএইচের প্রতিবেদনকে ইঙ্গিত করে টুইট করেন মাস্ক।

প্রতি সপ্তাহে এ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মাস্ক।

“ইতিবাচক দিকের চেয়ে নেতিবাচক দিক সবার কাছে কম পৌঁছানো উচিত ও এমনটিই হবে।”

“প্রতিদিন প্রায় ৫০ কোটি টুইট ও শত শত কোটি মনোভাব প্রকাশিত হয়। এর ফলে, টুইটারে সামগ্রিকভাবে ঘৃণাবাচক বক্তব্যের মনোভাব দেখা যায় শূন্য দশমিক এক শতাংশেরও কম।” - তিনি বলেন।