ফেইসবুকের ১৩টি বিজ্ঞাপন কেনার চেষ্টা করেছে সংস্থাটি। এগুলোতে ব্যবহৃত হয়েছে এআই’র তৈরি ছবি ও এমন বার্তা, যা পরিষ্কারভাবে কোম্পানির নীতিমালা লঙ্ঘন করে।
Published : 24 Aug 2023, 05:42 PM
ফেইসবুকে প্রচারিত ঘৃণাবিস্তারী বিজ্ঞাপন ও সহিংস কনটেন্টের বিস্তৃতি কোম্পানির অনুমোদনেই ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নতুন এক গবেষণায় এমনই আটটি বিজ্ঞাপনের কথা উঠে এসেছে। এগুলো বানানো হয়েছে ইউরোপের দর্শকদের লক্ষ্য করে। অভিযোগ, কোম্পানির ঘৃণামূলক ও সহিংস কনটেন্ট সংশ্লিষ্ট নীতিমালা লঙ্ঘন করলেও সেগুলোতে অনুমোদন দিয়েছে মেটা।
গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে অলাভজনক সংস্থা ‘একো’। এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ ইউরোপে ‘ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট (ডিএসএ)’ কার্যকর হওয়ার আগ মূহুর্তে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম কোম্পানির মডারেশন কার্যক্রমে দ্বৈত ভূমিকা রাখার বিষয় এতে উঠে এসেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট।
প্রতিবেদন অনুসারে, অগাস্টের শুরুতে ফেইসবুকের ১৩টি বিজ্ঞাপন কেনার চেষ্টা করেছে সংস্থাটি। এগুলোতে ব্যবহৃত হয়েছে এআই’র তৈরি ছবি ও এমন বার্তা, যা পরিষ্কারভাবে কোম্পানির নীতিমালা লঙ্ঘন করে।
কোনো ব্যবহারকারী দেখার আগেই বিজ্ঞাপনগুলো সরিয়ে ফেলেছে একো। আর নিয়ন্ত্রক দলটি কোম্পানিকে বিজ্ঞাপনের সুনির্দিষ্ট কিছু শব্দ বদলে দেওয়ার অনুরোধ জানালেও ‘কয়েকটি জঘন্য বিষয়’ বিজ্ঞাপনগুলোও রয়েই গিয়েছিল।
অনুমোদিত বিজ্ঞাপনগুলোর একটি ছিল ফ্রান্সের দর্শকদের লক্ষ্য করে তৈরি। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক সুপরিচিত এমপিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আহ্বান জানানো হয় এতে। অভিবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে তার অবস্থানকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞাপনে।
এর পাশাপাশি, জার্মানির ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করেও একটি বিজ্ঞাপন তৈরি হয়েছে, যেখানে ‘শ্বেতাঙ্গ জার্মানদের রক্ষা করতে’ বিভিন্ন ‘সিনেগগ’ (ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনার জায়গা) পুড়িয়ে ফেলার আহ্বান জানানো হয়।
স্পেনের দর্শকদের লক্ষ্য করে তৈরি একটি বিজ্ঞাপনেও অনুমোদন দিয়েছে মেটা। এতে দাবি করা হয়, দেশটির সবচেয়ে সাম্প্রতিক নির্বাচন সুষ্ঠু ছিল না। আর এর ফলাফল বদলাতে লোকজনের সহিংস আন্দোলন গড়ে তোলা উচিৎ।
“প্রতিবেদনটি খুবই অল্পসংখ্যক বিজ্ঞাপনী নমুনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। আর প্রতিদিন গোটা বিশ্বে আমরা যতগুলো বিজ্ঞাপন যাচাই করি, তার ছিঁটেফোঁটাও নেই এতে।” --বিবৃতিতে বলেন মেটার এক মুখপাত্র।
“কোনো বিজ্ঞাপন অনুমোদনের আগে ও পরে আমাদের পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতে বেশ কয়েকটি বিশ্লেষণ ও শনাক্তকরণ ধাপ আছে। ডিএসএ’র নিয়ম মেনে চলতে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছি। আর নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ভুল প্রচারণা ও ঘৃণামূলক বক্তব্যের পাশাপাশি সহিংসতা ও উস্কানিমূলক কনটেন্ট ঠেকাতেও আমরা কাজ করছি।”
মেটার যাচাইকরণ ব্যবস্থায় অনেক বিজ্ঞাপন আটকে দেওয়ার নজির মিললেও একো বলছে, সেইসব বিজ্ঞাপন বন্ধ করা হয়েছে কারণ সেগুলো ‘রাজনৈতিক’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এগুলোতে ঘৃণামূলক বক্তব্য ছিল, সে কারণে নয়।
মেটার দাবি, রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনদাতার ক্ষেত্রে তারা বাড়তি কিছু যাচাইকরণ প্রক্রিয়া যুক্ত করেছে।
প্রতিবেদনটি ব্যবহার করে ‘ডিএসএ’ আইনে বাড়তি সুরক্ষা ব্যবস্থা যোগ করার লক্ষ্যস্থির করেছে একো। এটি এমন এক আইন, যা বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট কয়েক ধরনের বিজ্ঞাপন দেখানোর ব্যবস্থা সীমিত করে ও ব্যবহারকারীর অ্যালগরিদমে ‘রেকমেন্ডেশন’ বন্ধের সুযোগ দেয়। এর মধ্যে দ্বিতীয় শর্ত মেনে চলতে ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটক’সহ বেশ কয়েকটি সামাজিক মাধ্যম সম্প্রতি নিজস্ব সেবায় বদল এনেছে। আর বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ‘ব্যবস্থা সংক্রান্ত ঝুঁকি’ শনাক্ত ও প্রশমিত করার বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে এই আইনে। এর মধ্যে রয়েছে অবৈধ ও সহিংস হিসেবে বিবেচিত কনটেন্টও।
“কেবল কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমেই আমরা প্রমাণ করেছি যে ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থার মাধ্যমে কত সহজেই ঘৃণামূলক বক্তব্য ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ে।” --বিবৃতিতে বলেন একো’র প্রচারণা বিষয়ক পরিচালক ভিকি ওয়াইয়াট।
“ইইউ’র নির্বাচন কাছাকাছি চলে আসায় ইউরোপীয় নেতাদের অবশ্যই ডিএসএ আইন পুরোদমে কার্যকর করার পাশাপাশি এইসব বিষাক্ত কোম্পানির একচ্ছত্র আধিপত্যে লাগাম টানা উচিৎ।”