ফিলিপিন্সের ‘গোল্ড এফএম ৯৪.৭’ নামের রেডিও স্টেশনে কাজ করতে তিনি। পেশাগত জীবনে তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন ‘ডিজে জনি ওয়াকার’ নামে।
Published : 05 Nov 2023, 05:33 PM
নিজের শো সরাসরি সম্প্রচার করার সময় গুলিতে হত্যার শিকার হয়েছেন ফিলিপিন্সের এক জনপ্রিয় সাংবাদিক। আর সেই ভয়াবহ ঘটনার সম্প্রচার ঘটেছে তারই লাইভস্ট্রিমে।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির সাংবাদিক সমিতি ‘ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্টস অফ ফিলিপিন্স (এনইউজেপি)’ বিবৃতিতে বলেছে, ৫৭ বছর বয়সী রেডিও সম্প্রচারক জুয়ান জুমালনকে ৫ নভেম্বর ফিলিপিন্সের মিসামিস অক্সিডেন্টাল পৌরসভা এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
ফিলিপিন্সের ‘গোল্ড এফএম ৯৪.৭’ নামের রেডিও স্টেশনে কাজ করতে তিনি। পেশাগত জীবনে তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন ‘ডিজে জনি ওয়াকার’ নামে।
ফিলিপিন্সের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুসারে, বন্দুকধারীদের হামলা রেডিও স্টেশনের ফেইসবুক লাইভস্ট্রিমে ধরা পড়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুমালনকে হত্যার নিন্দা জানিয়ে এর তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র।
“আমাদের গণতন্ত্রে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ সহ্য করা হবে না। সংবাদ প্রচারের স্বাধীনতাকে হুমকি দেওয়া ব্যক্তিরা এর কঠোর ফলাফল ভোগ করবে।” --সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লেখেন মার্কোস।
‘নইউজেপি’ এই আক্রমণকে আখ্যা দিয়েছে ‘নির্লজ্জ হত্যা’ হিসেবে। মিসামিস অক্সিডেন্টালের কালাম্বা এলাকায় নিজের বাড়ির ভেতরেই হত্যা করা হয় তাকে। আর ওই বাড়িটিকে নিজের দপ্তর হিসেবেও ব্যবহার করতেন জুমালন।
“এ আক্রমণ জুমালনের নিজের বাড়িতে ঘটায় বিষয়টি আরও বেশি নিন্দনীয়, যেটিকে তিনি রেডিও স্টেশন হিসেবেও ব্যবহার করতেন।” --বলেছে সংস্থাটি।
“৩০ অক্টোবর বারংয়ে ও সাঙ্গগুনিয়াং কাবাতান এলাকার নির্বাচন সম্প্রচারের পর অনেক কমিউনিটি সাংবাদিকই বিভিন্ন রাজনীতিবিদ ও সমর্থকদের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছেন বলে আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন।” --বলেন নইউজেপি’র জ্যেষ্ঠ সদস্য কাথ কর্টেজ।
দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম ‘কেবু ডেইলি নিউজ’ প্রতিবেদনে বলেছে, কালাম্বার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে আসে, এক ব্যক্তি ‘গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘোষণার’ জন্য রেডিও স্টেশনে প্রবেশের অনুমতি চান।
রোববার ভোর ৫টা ৩৫ মিনিটে জুমালনের প্রোগ্রাম চলার সময় দুই বন্দুকধারী তার বাড়িতে প্রবেশ করেন বলে বলে কালাম্বা পুলিশ স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পল গুইগায়োমার উধৃতি দিয়ে লিখেছে দেশটির অনলাইন সংবাদ সাইট র্যাপলার।
“সম্ভবত, এ রাস্তা তাদের চেনা ছিল কারণ তারা বাড়ির লোহার গেইট খোলার পরপরই রেডিও স্টেশনে প্রবেশ করেছিল।”
এর মধ্যে একজন রেডিও বুথে ঢোকার পরপরই পকেট থেকে পিস্তল বের করে গুলি ছোড়েন। আর অন্যজন তাকিয়ে দেখছিলেন।
ঘটনার পরপরই তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এর মধ্যে একজন জুমালনের গলায় পড়া নেকলেসও চুরি করেছেন। জুমালনকে গুলি করার দৃশ্য এরইমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি তার শরীর থেকে নেকলেস টানছেন।
এর পর জুমালনের পরিবার তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলেও ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফিলিপিন্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ মিন্ডানাও’র সংবাদ সংগঠন ‘এমআইপিসি’ এ হত্যাকাণ্ডকে ‘বর্বর’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো মানবাধিকার, সংবাদ প্রচারের স্বাধীনতা এমনকি গণতন্ত্রের মূল ভিত্তির ওপরও গুরুতর আঘাত।”
১৯৮৬ সাল থেকে হিসাব অনুসারে ফিলিপিন্সে সাংবাদিক হত্যার ১৯৯তম ঘটনা হল জুমালনের হত্যাকাণ্ড। আর মার্কোস প্রশাসনের অধীনে চতুর্থ।
সম্প্রতি অলাভজনক সংস্থা ‘কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট’ প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ইম্পিউনিটি ইন্ডেক্স’-এর তথ্য অনুসারে, সাংবাদিকদের হত্যাকারীদেরকে শাস্তি দেওয়ার হিসাবে বিশ্বের অষ্টম জঘন্যতম দেশ হল ফিলিপিন্স।