ইনস্টাগ্রামকে ‘আসক্তি, সামাজিক তুলনা বিচার এবং ভয়াবহ রকমের ক্ষতিকর কনটেন্ট ও ফিচারের সেরা সংমিশ্রণ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বাদীপক্ষ।
Published : 26 Jul 2022, 06:08 PM
অপ্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইনস্টাগ্রামের বিরূপ প্রভাব নিয়ে আরও দুটি মামলার মুখে পড়েছে এর মূল কোম্পানি মেটা।
বাদী পক্ষের অভিযোগ, সন্তানদের ইনস্টাগ্রামে আসক্ত করে তাদের মধ্যে হতাশা ও অস্থিরতার অনুভূতি এবং ক্ষতিকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করে ‘আত্মহত্যাপ্রবণ’ করে তুলেছে মেটার মালিকানাধীন ফটো ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটি।
রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার স্যান ফ্রান্সিসকোর আদালতে মেটার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করে দুই ভুক্তভোগী পরিবার। আদালতে দুই পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করছে ‘সোশাল মিডিয়া ভিকটিমস ল সেন্টার’ নামের একটি আইনি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান।
ভুক্তভোগী মেয়ে শিশুদের দুজনেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল এবং তাদের একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল বলে মামলায় অভিযোগ করেছে তাদের পরিবার।
সেবাগ্রাহকদের নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্যকে অগ্রাহ্য করে প্ল্যাটফর্মে তাদের উপস্থিতি ধরে রাখার অপকৌশল অবলম্বনের অভিযোগ আনা হয়েছে দুই মামলায়।
বাদীপক্ষ বলছে, প্ল্যাটফর্মটি ‘আসক্তি, সামাজিক তুলনা বিচার এবং ভয়াবহ রকমের ক্ষতিকর কনটেন্ট ও ফিচারের সংমিশ্রণ’ সৃষ্টি করে।
“সেবার বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর বৈশিষ্টগুলো সম্পর্কে অবহিত থাকলেও মেটা হিসাব করে খরচ কমানো ও মুনাফা কামাইকে অগ্রাধিকার দিয়ে এমন ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং নিচ্ছে, যাতে ক্রমাগত মানুষের জীবনের চেয়ে আকাশচুম্বী মুনাফাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।”
নতুন মামলা প্রসঙ্গে মেটার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর পায়নি রয়টার্স।
গত বছর ফেইসবুকের বিপুল পরিমাণ অভ্যন্তরীণ নথিপত্র ফাঁস করে দিয়েছিলেন কোম্পানির সাবেক কর্মী ফ্রান্সেস হাউগেন। ওই নথিপত্র বিশ্লেষণ করে প্রমাণ মিলেছিল, অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইনস্টাগ্র্যাম অ্যাপ এবং এর অ্যালগরিদমের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে অবহিত থাকলেও মুনফার লোভে পুরো বিষয়টি অগ্রাহ্য করে গেছে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের অক্টোবরে হাউগেন জনসম্মুখে আসার পর সে ঘটনা গড়িয়েছিল মার্কিন সেনেট পর্যন্ত। পরে ইউরোপের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে মেটার অনৈতিক ব্যবসা কৌশল নিয়ে সাক্ষ্য দেন হাউগেন।
সর্বশেষ মামলা দুটিতেও হাউগেনের ফাঁস করা নথিপত্র তথ্য-প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট।
মামলার বাদী পক্ষ অভিযোগ করেছে, মেটা জানত যে তাদের সেবায় আসক্ত হয়ে পড়ছে কিছু মানুষ; বিশেষ করে কিশোরবয়সীদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি।
অন্যদিকে, ওই দুই পরিবারের দুই শিশুর বয়স নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছিল ইনস্টাগ্রাম। প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করতে অন্তত ১৩ বছর বয়সী হওয়ার কথা। কিন্তু মেয়ে দুটি ১২ বছর বয়সে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করা শুরু করেছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
রয়টার্স জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত নয়টি মামলায় মেটার বিরুদ্ধে অপ্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য অগ্রাহ্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় ১১ বছর বয়সী এক মেয়ে শিশুর আত্মহত্যার জন্য সরাসরি দায়ী করা হয়েছে মেটাকে।
মামলাগুলো এখন পর্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়েই আছে।