এর কাল্পনিক প্রেক্ষাপটে গেইমার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে ভবিষ্যতের দিকে যেতে থাকেন, যেখানে ভিয়েতনাম থেকে কোল্ড ওয়ার, বাদ যায়নি কোন কিছুই।
Published : 30 Oct 2023, 06:23 PM
অনেক গেইমারের কাছেই অবাক করা মনে হলেও ২০ বছরে পা রেখেছে গেইমিং ফ্রাঞ্চাইজ কল অফ ডিউটি।
গোটা বিশ্বের লাখ লাখ গেইমারকে বিনোদন দেওয়া জনপ্রিয় এই ফ্রাঞ্চাইজের মাধ্যমে শত শত কোটি ডলার আয় করেছে এর নির্মাতা ও প্রকাশকরা।
গেইমটি প্রথমে পিসি সংস্করণে আসে ২০০৩ সালে। এর পর থেকেই বিভিন্ন নামে পরিচিতি পেয়েছে গেইমটি। আর, এর সবই যে প্রশংসামূলক ছিল, বিষয়টি এমনও নয়।
তবে, গোটা বিশ্বের গেইমারদের মধ্যে গেইমটির উন্মাদনা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এর কাল্পনিক প্রেক্ষাপটে গেইমার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে ভবিষ্যতের দিকে যেতে থাকেন, যেখানে ভিয়েতনাম থেকে কোল্ড ওয়ার, বাদ যায়নি কোন কিছুই। এমনকি এর জনপ্রিয়তার কারণে অনেকেই একে সর্বকালের সবচেয়ে মূল্যবান গেইম হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন।
গেইমের আজব জগতে বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্মিত বিভিন্ন হলিউড ব্লকবাস্টার সিনেমা বা মিউজিক রিলিজকে নিয়মিত চ্যালেঞ্জ করতে প্রতিনিয়ত আসে নতুন নতুন গেইম। আর সে জগতে শুরু থেকেই পদচারণা ছিল কল অফ ডিউটি’র। এমনকি এখনও বড় অঙ্কের অর্থই ঘরে তুলছে গেইমটি।
উন্মোচনের পর থেকে কল অফ ডিউটি গেইমের ২০টি ভিন্ন সংস্করণ এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘মডার্ন ওয়ারফেয়ার’, ‘অ্যাডভান্সড ওয়ারফেয়ার’, ‘ব্ল্যাক অপস’, ‘গোস্ট’ ও ‘ভ্যানগার্ড’-এর মতো শিরোনামের অধীনে বিভিন্ন দলের স্পিন অফ সংস্করণও। এর মানে, প্রতি বছরই নতুন ‘কড’ গেইমের অপেক্ষায় থাকেন গেইমাররা। কল অফ ডিউটিকে সংক্ষেপে ওই নামেই ডাকেন তারা।
সামগ্রিকভাবে এই ফ্রাঞ্চাইজ থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি ডলার আয় করেছে প্রকাশক অ্যাক্টিভিশন। এর মধ্যে গত এক বছরেই আয় হয়েছে তিনশ কোটি ডলার।
এমন আয় সম্ভব হয়েছে কারণ কল অফ ডিউটি গেইম খেলে থাকেন প্রায় ২৫ কোটি গেইমার। এর মধ্যে ১০ লাখের দাবি, তারা কল অফ ডিউটি বাদে অন্য কোনো গেইম খেলেন না।
লন্ডনভিত্তিক বিশ্লেষক কোম্পানি ‘অ্যাম্পিয়ার অ্যানালাইসিস’-এর গবেষণা বিভাগের পরিচালক পিয়ার্স হার্ডিং-রোলস বলেন, “এটি নিশ্চিতভাবেই গেইমিং খাতের সবচেয়ে বড় মেধাস্বত্বগুলোর একটি। আমার ধারণা, গেইম সিরিজটির সামগ্রিক আয় তিন হাজার কোটি ডলারের বেশি। আপনি একে বিনোদন খাতের সম্পদের সঙ্গে তুলনা করলেও এটি শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে থাকবে।”
“শীর্ষ বিনোদনভিত্তিক ফ্রাঞ্চাইজের বিপরীতে গেইমটির মার্চেন্ডাইজিং থেকে আয়ের সুযোগ কম হলেও তা ফেলে দেওয়ার মতোও নয়। আর গেইমের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে এ সংখ্যা অনেক বড়।”
অনলাইনে ‘মিস্টার ডালেক জেডি’ নামে পরিচিতি পাওয়া ইউটিউবার জন নিজের জীবিকা নির্বাহ করেন কল অফ ডিউটি গেইম খেলেই। তার ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ২৫ লাখের বেশি। তার মতে, গেইমটি খেলা এখন সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে।
তবে, এমন জনপ্রিয় গেইমকেও আদালতে যেতে হয়েছে।
“২০০৯ সালে গেইমের একটি সংস্করণে ‘নো রাশিয়ান’ নামের এক মিশন ছিল, যা এখন পপ সংস্কৃতির অংশ। আপনি যদি এই বাক্যাংশ ব্যবহার করেন, তবে আমার বয়সী বেশিরভাগ লোকজনই এর মানে বুঝতে পারবেন।” --বলেন জন।
“এই মিশনে আপনাকে জঙ্গি সেজে এয়ারপোর্টে যেতে হতো। আমার জানা মতে, অন্য কোনো গেইম এত গভীরে যায়নি। এমনকি এখনও কোনো গেইম এই ধরনের দুঃসাহস দেখাবে কি না তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। এর কারণ ওই মিশন একই সঙ্গে বাস্তব, বিটকেলে, কুল ও জঘন্য ছিল।”
এদিকে, মাইক্রোসফট ও অ্যাক্টিভিশন ব্লিজার্ডের মধ্যে প্রায় সাত হাজার কোটি ডলারের চুক্তি আটকে দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছে কল অফ ডিউটি ফ্রাঞ্চাইজের সাফল্য, যেখানে প্লেস্টেশন থেকে মাইক্রোসফট গেইমটি সরিয়ে ফেলবে, এমন ঝুঁকি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল সনি। তবে, এ মাসের শুরুতে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে অ্যাক্টিভিশনকে কিনে নিয়েছে মাইক্রোসফট।