রকেটের ছবি পেলেই খড়্গহস্ত হয়েছে টুইটারের এআই

“স্পেসএক্সের একটি উৎক্ষেপণ প্রচারের সময় অনির্দিষ্ট নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে টুইটার আমাদের অ্যাকাউন্ট ‘লক’ করে দিয়েছে।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2023, 07:36 AM
Updated : 9 Jan 2023, 07:36 AM

নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে থাকা ছবি শনাক্তকরণ ব্যবস্থায় মেশিন লার্নিং টুলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন রকেটের ছবিকে ‘বিপজ্জনক কনটেন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করছে ইলন মাস্ক মালিকানাধীন সামাজিক প্ল্যাটফর্ম টুইটার।

একই বিভ্রান্তির কারণে সপ্তাহের শুরুতে বিভিন্ন মহাকাশ বিষয়ক সাংবাদিক’সহ বেশ কিছু সংখ্যক অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছে প্ল্যাটফর্মটি। টুইটারের সাবেক এক কর্মীর বরাতে বিষয়টি উঠে এসেছে মার্কিন সংবাদ সাইট ‘কোয়ার্টজ’-এর প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্পেসএক্সের সাম্প্রতিক এক উৎক্ষেপণের পর মহাকাশ বিষয়ক সাংবাদিক মাইকেল বেইলর ও ‘স্পেসফ্লাইট নাও’ নামে পরিচিত ব্লগ অ্যাকাউন্ট’সহ প্ল্যাটফর্মটির বেশ কিছু সংখ্যক অ্যাকাউন্ট থেকে রকেটটির ‘পৃথিবীতে ফিরে আসার’ ভিডিও শেয়ার করা হয়েছিল। তবে, সেগুলো সরিয়ে ফেলে টুইটার।

স্পেসফ্লাইট নাও’র টুইটকে ‘প্ল্যাটফর্মের নীতিমালা ভঙ্গের বা কারও গোপন ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহারের’ অভিযোগে ‘ফ্ল্যাগ’ করেছে মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্মটি।

“স্পেসএক্সের একটি উৎক্ষেপণ প্রচারের সময় অনির্দিষ্ট নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে টুইটার আমাদের অ্যাকাউন্ট ‘লক’ করে দিয়েছে।” --টুইট করেন স্পেসফ্লাইট নাও’র সম্পাদক স্টিফেন ক্লার্ক।

ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘ইন্ডিপেন্ডেন্টের’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এইসব নিষিদ্ধ অ্যাকাউন্ট সম্ভবত টুইটারের স্বয়ংক্রিয় কনটেন্ট মডারেশন ব্যবস্থার ‘খপ্পরে পড়েছে’। টুইটার অধিগ্রহণের পর ইলন মাস্ক এটি চালু করেন।

২০২২ সালের নভেম্বরে বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডশায়ার কাউন্টির এক জ্যোতির্বিদ উল্কার ভিডিও শেয়ারের পর, তার অ্যাকাউন্ট তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ করে টুইটার। আর একে ‘বিপজ্জনক কনটেন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করে প্ল্যাটফর্মটির স্বয়ংক্রিয় মডারেশন টুল।   

“কোনো রকেট কীভাবে ভুল হিসেবে শনাক্ত হতে পারে, তা আপনারা বুঝতেই পারছেন।” --বলেন টুইটারের সাবেক কর্মী।

“সম্ভবত, আমাদের ছবি শনাক্তকরণ ব্যবস্থা নিয়ে কিছু কাজ করা দরকার!” --টুইটারে বলেন মাস্ক।

টেসলা ও স্পেসএক্স প্রধান মাস্কের টুইটার দখলের পর থেকেই প্ল্যাটফর্মটির কনটেন্ট মডারেশন ব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে।

গত মাসে টুইটার বলেছে, সাইটে ঘৃণাবাচক বক্তব্য বেড়ে যাওয়ার পরও তারা কর্মীদের মাধ্যমে কনটেন্ট মডারেশন ব্যবস্থা না চালিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপরই ভরসা রাখছে।

ডিসেম্বরে কোম্পানির পণ্য সুরক্ষা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট এলা আরউইন রয়টার্সকে বলেন, প্ল্যাটফর্মটি ‘ম্যানুয়াল রিভিউ’ ব্যবস্থা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

“সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন এসেছে, সেটি হলো দলটি দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি যতটা সম্ভব আক্রমণাত্মকও হতে পারে।” --বলেন আরউইন।

এর আগে টুইটারের সকল মানবাধিকার ও মেশিন লার্নিং নৈতিকতা বিষয়ক দলগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন আউটসোর্স করা চুক্তিভিত্তিক কর্মী এর নিরাপত্তা শঙ্কার বিষয়টি নিয়ে কাজ করলেও, নভেম্বরে গণহারে কর্মী ছাঁটাইয়ের পর টুইটারের সর্বমোট কর্মশক্তি সাড়ে সাত হাজার থেকে কমে গিয়ে ঠেকেছে কেবল দুই হাজারে।

জাপান ও এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ঘটিত শিশু নিপীড়ণ বিষয়ক কনটেন্ট সরানোর কাজে নিয়োজিত একটি গুরুত্বপূর্ণ দলের কর্মী ছাঁটাইয়ের পর এতে কেবল একজন ব্যক্তিই কাজ করছেন। --বিষয়টি উঠে এসেছে ‘ওয়্যারড’ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে।

“টুইটার যদি নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে সংবেদনশীল কনটেন্টের বন্যা না ঘটিয়ে মানব মডারেটরদের উপর নির্ভরতা কমাতে চায়, তবে এর সুস্পষ্ট একটি উপায় হলো, সংবেদনশীল কনটেন্ট শনাক্ত করা মেশিন লার্নিং মডেলের নির্ভুলতা বাড়ানো।” --কোয়ার্টজকে বলেন ওই সাবেক কর্মী।