আক্রমণের প্রভাব পড়েছে ইউক্রেইনের দুই কোটি ৪৩ লাখ মোবাইল গ্রাহক ও ১১ লাখের বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওপর।
Published : 14 Dec 2023, 05:28 PM
ইউক্রেইনের সবচেয়ে বড় মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানি ‘কিইভস্টার’-এর ওপর সাইবার আক্রমণ চালানোর দাবি করেছে এক হ্যাকার দল।
কিইভ বলছে, আক্রমণ চালানো হ্যাকার দলটি রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িত। আর গেল বুধবার তারা এর দায়ভার স্বীকার করেছে।
মঙ্গলবার কিইভস্টার-এর ওপর চালানো এ সাইবার আক্রমণের প্রভাব পড়েছে ইউক্রেইনের দুই কোটি ৪৩ লাখ মোবাইল গ্রাহক ও ১১ লাখের বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওপর। এ ছাড়া, কোম্পানির বিভিন্ন সেবা ও আইটি অবকাঠামোও বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। এমনকি ইউক্রেইনের কিছু অংশে থাকা ‘এয়ার রেইড অ্যালার্ট সিস্টেম’ও বন্ধ হয়ে গেছে এ আক্রমণে।
মেসেজিং সেবা টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে এ সাইবার আক্রমণের দায়ভার নিয়েছে ‘সলন্টসেপিয়ক’ নামে পরিচিত ‘হ্যাক্টিভিস্ট’ দল। এ ছাড়া, হ্যাকাররা যে কিইভস্টারের সার্ভারে প্রবেশ করেছে, তারে প্রমাণ দেখাতে বেশ কিছু স্ক্রিনশটও প্রকাশ করেছে হ্যাকার দলটি।
এ ধরনের সাইবার আক্রমণ চালানোর অভিযোগ ক্রমাগতই নাকচ করে আসছে রাশিয়া।
ইউক্রেইনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘স্টেট সার্ভিস অফ স্পেশাল কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড ইনফর্মেশন প্রটেক্টরেট’ বিবৃতিতে বলেছে, তারা দেশটির স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘এসবিইউ’র সঙ্গে এ ঘটনা নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে।
“রাশিয়ার এমন এক হ্যাকার দল এ আক্রমণের দায়ভার নিয়েছে, যারা সরাসরি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মূল অধিদপ্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।” --রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘জিআরইউ’র দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছে সংস্থাটি।
“এ আক্রমণ আবারও নিশ্চিত করেছে, ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়ার অন্যতম অস্ত্র হল সাইবার জগৎকে ব্যবহার করা।” --দায়ভার নেওয়া হ্যাকার দলটির নাম উল্লেখ না করেই বলেছে সংস্থাটি।
এ বছরের শুরুতে ইউক্রেইনের গোয়েন্দা সংস্থা ‘এসএসএসসিআইপি’ দাবি করেছিল, সলন্টসেপিয়ক হ্যাকার দলটি আরেক হ্যাকার দল ‘স্যান্ডওয়ার্ম’-এর অংশ, যাদের আগে থেকেই ‘জিআরইউ’র সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রয়টার্স জিআরইউ’র মন্তব্য জানতে চাইলেও তাদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
হ্যাকিংয়ের ঘোষণা দেওয়া টেলিগ্রাম পোস্টে কিইভস্টার-এর ‘উদ্বিগ্ন কর্মীদের’ ধন্যবাদ জানিয়েছে সলন্টসেপিয়ক। মঙ্গলবার এসবিইউ বলেছে, এ আক্রমণের পর তারা একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করেছে।
“আমরা কিইভস্টারে আক্রমণ চালিয়েছি কারণ কোম্পানিটি ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনী, রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ও নিরাপত্তা বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা সরবরাহ করে থাকে।” --উল্লেখ করা হয় পোস্টে।
“ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা দেওয়া অন্যান্য কোম্পানিও প্রস্তুত থাকুন!”
গেল মঙ্গলবার কিইভস্টারের ঘনিষ্ট এক সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, এ আক্রমণে ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যহত হয়নি।
‘পছন্দের অস্ত্র’
সাইবার নিরাপত্তা গবেষকদের মতে, রাশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী হ্যাকার দল হল ‘স্যান্ডওয়ার্ম’, যারা ইউক্রেইনের বিদ্যুৎ খাতে সাইবার আক্রমণ চালানোর জন্য দায়ী।
“বিভিন্ন সুচারু হ্যাক্টভিস্টদের মাধ্যমে তারা নিয়মিতই আক্রমণ চালিয়ে থাকে।” --বলেন গুগল মালিকানাধীন কোম্পানি ‘ম্যান্ডিয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স-এর ‘থ্রেট অ্যানালাইসিস’ বিভাগের প্রধান জন হাল্টকুইস্ট।
“সাইবার আক্রমণে মস্কোর মূল অস্ত্র হিসেবে কাজ করে স্যান্ডওয়ার্ম। এ ছাড়া, ইউক্রেইনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে আক্রমণ চালানোর ক্ষেত্রে এর ধারে কাছে নেই কোনো হ্যাকার দলই।”
এ প্রসঙ্গে রয়টার্স সলন্টসেপিয়ক-এর মন্তব্য জানতে চাইলে আক্রমণের সত্যতা নিশ্চিত করেছে দলটির এক প্রতিনিধি। পাশাপাশি, দলটির টেলিগ্রাম চ্যানেলে কিইভস্টারের অভ্যন্তরীণ নথি প্রকাশের বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।
তবে সলন্টসেপিয়ক জিআরইউ’র সঙ্গে জড়িত কি না, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ওই মুখপাত্র।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর দেশটির ওপর সবচেয়ে বড় সাইবার আক্রমণের ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে মঙ্গলবারের ঘটনাটি। রয়টার্স বলছে, এমন আক্রমণের চালাতে যে ধরনের পরিশীলিত কৌশল প্রয়োজন, তা সাধারণত রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমেই সম্ভব।
টেলিগ্রাম পোস্টে সলন্টসেপিয়ক বলেছে, তারা কিইভস্টারের ওপর চালানো সাইবার আক্রমণে ১০ হাজার কম্পিউটারের পাশাপাশি চার হাজার সার্ভারও ধ্বংস করে দিয়েছে। এমনকি এর মধ্যে ছিল ক্লাউড স্টোরেজ ও ব্যাকআপ সিস্টেমও।
তবে, সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দেওয়া পোস্টে সেইসব দাবিকে ‘মিথ্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছে কিইভস্টার। বুধবার কোম্পানির সিইও বলেন, কিইভস্টার নিজেদের সেবার কয়েকটি অংশ রিস্টোর করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।