তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আমি মুছে ফেলতে চাই। আমি ভেবেছিলাম, ইলন মাস্কের অন্তত ক্ষমা চাওয়ার মতো ভদ্রতা থাকবে।”
Published : 18 Apr 2025, 03:23 PM
বছরের পর বছর ধরে আদালতে ইলন মাস্ক ও তার কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করেছেন টেসলার একজন সাবেক কর্মী। এ আইনি লড়াইয়ের সর্বশেষ হাসিটা তিনিই হাসলেন।
২০১৪ সালে গাড়ির ব্রেকিংয়ের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন ডিজাইনের ত্রুটি সম্পর্কে নিরাপত্তা উদ্বেগ উত্থাপনের পর নিজের চাকরি হারিয়েছিলেন প্রকৌশলী ক্রিস্টিনা বালান।
এর আগে, বিচারক ক্রিস্টিনার মামলাটি খারিজ করে দিয়ে সালিশি সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। ওই সময়, টেসলার বিরুদ্ধে তার আনা মানহানি মামলায় জেতার পথ ফুরিয়ে গিয়েছে বলে ভেবেছিলেন তিনি। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার আপিল বিচারকদের একটি প্যানেল এখন তার পক্ষেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে প্রতিবেদন লিখেছে বিবিসি।
ক্রিস্টিনা বলেছেন, আদালতে এখন ইলন মাস্ক ও টেসলার মুখোমুখি হতে চান তিনি।
“আশা করছি আমরা একটি নতুন মামলা শুরু করব এবং জুরি ও বিচারকের সামনে ইলন মাস্কের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পাব আমরা।”
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য বিবিসির অনুরোধে সাড়া দেয়নি মার্কিন বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি নির্মাতা টেসলা।
বিবিসি লিখেছে, একসময় টেসলার খুব পরিচিত মুখ ছিলেন ক্রিস্টিনা। টেসলার ‘মডেল এস’ গাড়ির ব্যাটারিতে তার নামের আদ্যক্ষরও খোদাই করা থাকত। তিনি বলেছেন, নিজের ছেলের স্বার্থে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তিনি আরও বলেছেন, এখন স্তন ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেলেও রোগভোগের সময় তার সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় ছিল আদালতে এ মামলার রায় দেখার জন্য তিনি বেঁচে থাকতে পারবেন কি না।
ক্রিস্টিনার অভিযোগ, টেসলা মডেলের কিছু প্যাডেলের নীচে থাকা কার্পেটগুলো কুঁকড়ে যাচ্ছে, যা নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করছে। তবে কোম্পানির পরিচালকরা তার এমন উদ্বেগ ওই সময় বাতিল করে দিয়েছিলেন, যা তার জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছিল এবং চাকরি হারান তিনি।
এরপর অন্যায়ভাবে তার চাকরি যাওয়ার জন্য মামলা করেন ক্রিস্টিনা। ওই মামলায় জিতলেও তা আদালতে দীর্ঘ এক যাত্রার সূচনা করে। তা বিরুদ্ধে এক ‘গোপন প্রকল্পের’ জন্য কোম্পানির সম্পদ ব্যবহারের অভিযোগ আনে টেসলা, যা মার্কিন আইনের অধীনে অর্থ আত্মসাতের মতো অপরাধের সমান।
এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছেন এবং ২০১৯ সালে টেসলার বিরুদ্ধে পাল্টা মানহানির মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন ক্রিস্টিনা।
তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আমি মুছে ফেলতে চাই। আমি ভেবেছিলাম, ইলন মাস্কের অন্তত ক্ষমা চাওয়ার মতো ভদ্রতা থাকবে।”
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালত সিদ্ধান্ত দেয়, টেসলার হয়ে কাজ করার সময় ক্রিস্ট্রিনার সই করা চুক্তি অনুযায়ী তার মামলাটি সালিশের আওতায় আনা উচিত।
ক্যালিফোর্নিয়ার আইনের আওতায় মানহানিকর বিবৃতি দেওয়ার পর অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। তাই তারা ক্রিস্টিনার দাবি খারিজ করে মাস্কের পক্ষে রায় দেন। এ সিদ্ধান্তটি নিশ্চিত করতে মামলাটি ক্যালিফোর্নিয়ার ডিস্ট্রিক্ট আদালতে ফিরিয়ে আনে টেসলা।
এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেন ক্রিস্টিনা এবং মার্কিন আপিল আদালতের বিচারকরা তার পক্ষে রায় দেন। কারণ ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতের রায় দেওয়ার এখতিয়ার নেই বলে উল্লেখ করেন তারা।
সালিশি রায়ের নিশ্চয়তা বাতিল ও ডিস্ট্রিক্ট আদালতের এখতিয়ারের অভাবের কারণে মামলাটি খারিজ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারকরা। অবসান ঘটে টেসলার বিরুদ্ধে আনা দীর্ঘ এক মামলার।