এ প্রচেষ্টার মূল মনযোগ লিথিয়াম, নিকেল, ম্যাঙ্গানিজ ও গ্রাফাইটের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ কেনার দিকে।
Published : 19 Jan 2024, 01:40 PM
ব্যাটারির কাঁচামাল কেনার পেছনে প্রায় ৫৫ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের পরিকল্পনা করছে ইউরোপের দুই শীর্ষ বিনিয়োগকারী সংগঠন।
সংগঠন দুটির নির্বাহী কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছেন, এ তহবিল গঠনের মূল লক্ষ্য, ইউরোপীয় অঞ্চলের সরবরাহ চেইনে যে ‘বড় ফাঁক’ রয়েছে, তা কমিয়ে আনা।
‘ইবিএ স্ট্র্যাটেজিক ব্যাটারি ম্যাটিরিয়ালস ফান্ড’ নামের এ প্রকল্পের যৌথ উদ্যোক্তা অর্থাৎ ইইউ সমর্থিত বিনিয়োগ জোট ‘ইনোএনার্জি’ ও ‘ডিমিটার ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার্স’ বলেছে, এ প্রচেষ্টার মূল মনযোগ লিথিয়াম, নিকেল, ম্যাঙ্গানিজ ও গ্রাফাইটের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ কেনার দিকে।
পরিবহন ও শিল্প খাতে বিদ্যুচ্চালিত ব্যাটারির চাহিদা বাড়ছে। এ ছাড়া, ইইউ’র ‘ক্রিটিকাল র ম্যাটেরিয়ালস অ্যাক্ট’-এর অংশ হিসেবে এর সদস্য দেশগুলোও বৈদেশিক সরবরাহের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে, ইইউ সমর্থিত জোট ‘ইউরোপিয়ান ব্যাটারি অ্যালায়েন্স’র ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ইনোএনার্জি লক্ষ্য নিয়েছে, তারা ব্যাটারি শিল্পে এমন এক স্থানীয় সরবরাহ চেইন বানাবে, যা ইইউ সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব বাড়িয়ে দেয়।
“যে কোনো সরবরাহ চেইনে থাকা দূর্বল অংশটিই ওই চেইনের সক্ষমতা নির্দেশ করে। আর এখন সে ধরনের দূর্বল জায়গাটি হচ্ছে আপস্ট্রিম - যেমন খনি থেকে কাঁচামাল আহরণ ও রিসাইক্লিংয়ের মতো কাজ- যার ৯০ শতাংশই চীননির্ভর।” – সুইজারল্যান্ডের ডাভোস শহরে ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’ আয়োজনে যোগ দেওয়ার সময় বলেন ইনোএনার্জি’র প্রধান নির্বাহী ডিয়েগো পাভিয়া।
ইউরোপীয় কমিশনের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মারোস সেফকোভিচ এক বিবৃতিতে বলেন, ব্যাটারি শিল্প ‘কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বাজারে অন্যতম যুদ্ধক্ষেত্রও”। তিনি আরও বলেন, সামনের দিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে ‘কাঁচামাল নিশ্চিত করার’ বিষয়টি।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটির লক্ষ্য হবে, ব্যাটারির ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা, যেখানে সামগ্রিকভাবে খরচ হতে পারে সাতশ থেকে আটশ কোটি ইউরো পর্যন্ত। তবে, এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পে আর্থিক বিনিয়োগ নিয়ে যে অনীহা রয়েছে তাতে এর তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
“আমরা প্রকল্পের ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়গুলোর সমাধান নিয়ে কাজ করছি।” --বলেন পাভিয়া।
২০১০ সালে ৩৫টি কর্পোরেট ও আর্থিক বিনিয়োগকারীর সমর্থন নিয়ে গঠিত জোট ইনোএনার্জি এখন পর্যন্ত নিজেদের ব্যালেন্স শিটে যোগ করেছে দুইশটি কোম্পানি, যার মধ্যে রয়েছে নর্থভোল্ট ও ভার্করের মতো ব্যাটারি নির্মাতাও। এখন পর্যন্ত এ জোটের সদস্য কোম্পানিগুলোর সামগ্রিক আয় ১১ হাজার কোটি ইউরো।
এদিকে, ১৭ বছরে ২৩০টি কোম্পানি ও প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে ডিমিটার, যাদের বর্তমান তহবিল ১৪২ কোটি ডলার। নতুন প্রকল্পটির তহবিল সংগ্রহ শেষ হলে এর বিনিয়োগ ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে জোটটি। আর ইনোএনার্জি কাজ করবে সম্ভাব্য প্রকল্প শনাক্তকরণ ও সেগুলো সমর্থনে সহায়ক হিসেবে।
প্রকল্পটির বরাদ্দকৃত তহবিলের অন্তত ৭০ শতাংশ খরচ হবে স্থানীয়ভাবে ব্যাটারির কাঁচামাল মাইনিং, প্রক্রিয়াকরণ, পরিশোধন ও পুনর্ব্যবহারের লক্ষ্যে। এ ছাড়া, কানাডা, নামিবিয়া ও আর্জেন্টিনার মতো দেশ থেকেও খনিজ সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে এ প্রকল্পে।
এ আর্থিক তহবিলের আরেকটি মূল ফোকাস হতে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব উপায়ে কাঁচামাল সংগ্রহ, যা ইইউ’র ‘সাস্টেইনেবল ফাইন্যান্স ডিসক্লোজার রেগুলেশন’-এর অধীনস্থ ‘আর্টিকল ৮’-এ তালিকাভুক্ত করা যাবে।
ডিমিটারের ব্যবসায়িক অংশীদার অ্যান্টইন ট্রশ বলেছেন, এ প্রকল্পে যেসব নতুন কৌশল তৈরি হচ্ছে, সেগুলো পরিবেশের জন্য ‘কম ক্ষতিকর’।
“এ জায়গাতেই আমরা অন্যদের চেয়ে আলাদা হতে চাই।” — বলেন ট্রশ।