এই আটটি সংকেত এসেছে পাঁচটি ভিন্ন নক্ষত্র থেকে। আর এগুলো সবই পৃথিবীর ৩০ থেকে ৯০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
Published : 31 Jan 2023, 04:29 PM
এলিয়েনের জীবন অনুসন্ধানে আগে শনাক্ত হয়নি এমন আটটি ‘আগ্রহ জাগানো সংকেত’ মিলেছে নতুন এক মেশিন লার্নিং পদ্ধতিতে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওইসব আগ্রহ জাগানো সংকেত আসছে পৃথিবীর তুলনামূলক কাছাকাছি থাকা পাঁচটি নক্ষত্র থেকে। এগুলো সম্ভবত অন্যান্য জগতে বিদ্যমান এলিয়েন বুদ্ধিমত্তার ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন তারা।
গবেষকরা বলছেন, এমন লক্ষ্যবস্তুর মানে দাঁড়ায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে অবশেষে পৃথিবীর বাইরে জীবনের অস্ত্বিত্ব খুঁজে দেখার সুযোগ মিলবে।
বহির্জাগতিক বুদ্ধিমত্তা সংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ অনুসন্ধানে বিভিন্ন এমন ‘টেকনো সিগনেচার’ বা সংকেত খুঁজে দেখা হয়, যা সম্ভবত এলিয়েন প্রযুক্তির কাছ থেকে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে এসেছে।
তবে, বিজ্ঞানীদের এইসব টেকনো সিগনেচার খুঁজে পেতে কাঠ খড় পোড়াতে হয়। কারণ, এতে এমন অনেক চমকপ্রদ প্রার্থী রয়েছে যার বেশিরভাগই বিভিন্ন ধরনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এসেছে বলে উল্লেখ রয়েছেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে।
নতুন এই ব্যবস্থার মাধ্যমে গবেষকরা মহাবিশ্ব থেকে পৃথিবীতে আসা বিশাল ডেটা অনুসন্ধানের পাশাপাশি তাদের আগ্রহের জায়গা হতে পারে এমন বিভিন্ন সংকেত খুঁজে পেতে ও সেগুলো দ্রুত বাছাই করার সুযোগ পাবেন।
পাশাপাশি, গবেষকদেরকে বিভিন্ন ভুল সিগনাল পরিশোধনের সুযোগও দেবে এটি। যেমন, বিভিন্ন মানবসৃষ্ট প্রযুক্তির কাছ থেকে সংকেত মিললে এমনটি ঘটতে পারে।
এই ব্যবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে গবেষকরা এক গবেষণাপত্রে লেখেন, এরইমধ্যে আগে চিহ্নিত হয়নি এমন আটটি ‘প্রতিশ্রুতিশীল বহির্জাগতিক সংকেত’ মিলেছে।
যাই হোক, বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওইসব লক্ষ্যে পুনরায় পর্যবেক্ষণ চালানোর পর ফলাফল হিসেবে এখনও অনুরূপ সংকেত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
টেকনো সিগনেচার সংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ অনুসন্ধানেই মনোযোগ দেওয়া হয়েছে রেডিও’র কম্পাঙ্কের ওপর। কারণ এগুলো সহজেই মহাকাশে চলাচল করতে পারে ও এগুলো শনাক্ত করার বা সংকেত পাঠানোর ব্যবস্থা তুলনামূলক সহজ উপায়ে তৈরি করা যেতে পারে। বিশেষ করে, গবেষকরা বিভিন্ন এমন ন্যারোব্যান্ড রেডিও সিগন্যাল খোঁজেন, যেগুলো প্রাকৃতিক রেডিও নিঃসরণ ছাড়া সহজেই বাছাইয়ের পাশাপাশি নিয়মিতই মহাবিশ্বে ঘটতে থাকে।
নতুন ব্যবস্থায় রেডিও সংকেতে এমন বিভিন্ন ডেটা সংগ্রহ করা গেছে, যা পুরো মহাবিশ্ব থেকে এসেছে। সোমবার বৈজ্ঞানিক জার্নাল ‘নেচার অ্যাস্ট্রনমি’-তে প্রকাশিত ‘এ ডিপ-লার্নিং সার্চ ফর টেকনো সিগনেচার্স ফ্রম এইটটোয়েন্টি নিয়ারবাই স্টার্স’ শিরোনামের গবেষণাপত্রে এই বিষয়টি বর্ননা করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজ্ঞানীরা সাড়ে ১১ কোটি ডেটার টুকিটাকি অনুসন্ধান করে প্রায় ৩০ লাখ আগ্রহ জাগানো সংকেত পেয়েছেন।
গবেষকরা মনে করেন, ব্যবস্থাটি যেভাবে এইসব টুকিটাকির মাধ্যমে অনুসন্ধান চালায় তার প্রেক্ষিতে এটি সম্ভবত ‘বেশিই গোনা হয়েছে’। এ ছাড়া, সম্ভবত বেশ কিছু সংখ্যক সংকেতই এসেছে নানা ধরনের হস্তক্ষেপ থেকে।
বিভিন্ন ভুল সংকেত পরিশোধনের পর কেবল ২০ হাজার পাঁচশ ১৫টি সংকেত অবশিষ্ট থেকে যায়। এগুলোর মধ্যে আটটি ‘সংকেত’ গবেষকদেরও আগ্রহের জায়গা হয়ে উঠেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
এই আটটি সংকেত এসেছে পাঁচটি ভিন্ন নক্ষত্র থেকে। আর এগুলো সবই পৃথিবীর চেয়ে ৩০ ও ৯০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
গবেষকরা বলছেন, এসব সংকেত আসলেই বহির্জাগতিক কোনো বুদ্ধিমত্তার মধ্যমে পাঠানো হয়েছে কি না, ওই বিষয়ে তারা কোনো উপসংহারে পৌঁছানোর চেষ্টা করেননি। এইসব সংকেত কোথা থেকে এসেছে সেই প্রশ্নে, বিজ্ঞানীদেরকে তারা ওইসব লক্ষ্যবস্তু নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন।
তারা আরও বলছেন, অন্যান্য জগতে জীবনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার প্রত্যাশায় একই ব্যবস্থার মাধ্যমে অন্যান্য বড় ডেটাসেটও অনুসন্ধান করা সম্ভব।