এটি এমনভাবে নকশা করা যেন পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে এটি এক হাজার দুইশ ৫০ কেজির সরবরাহ বহন করতে পারে।
Published : 09 Mar 2023, 03:01 PM
নিজেদের প্রথম রকেট উৎক্ষেপণ পিছিয়ে দিয়েছে থ্রিডি প্রিন্টিংয়ে পথ প্রদর্শক কোম্পানি ‘রিলেটিভিটি স্পেস’।
বুধবার পিছিয়ে যাওয়া এই উৎক্ষেপণ প্রচেষ্টা কোম্পানির উচ্চাভিলাষী উৎপাদন পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা ছিল বলে প্রতিবেদনে বলেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেপ ক্যানাভেরালে অবস্থিত ইউএস স্পেস ফোর্সের ‘এলসি-১৬’ লঞ্চপ্যাড থেকে উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা ছিল কোম্পানির ‘টেরান ১’ নামে পরিচিত রকেটটির।
মহাকাশে কক্ষপথে সফলভাবে পৌঁছানোর লক্ষ্যে পরিকল্পিত এই অভিযানের নাম নির্মাতা রিলেটিভিটি স্পেস দিয়েছে ‘গুড লাক, হ্যাভ ফান’।
বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর একটা থেকে বিকাল চারটার মধ্যবর্তী সময় রকেট উৎক্ষেপণের একটি ‘লঞ্চ উইন্ডো’ পেয়েছিল রিলেটিভিটি। এর উৎক্ষেপণ দুইবার বিলম্বিত হওয়ার পাশাপাশি এর কাউন্টডাউনও পুনরায় সেট করা হয়। আর প্রথমবার রকেট উৎক্ষেপণের বেলায় সাধারণত এমনটিই ঘটে থাকে বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে। ফলে, এই উৎক্ষেপণ প্রচেষ্টা ‘বন্ধ করে’ দেয় কোম্পানিটি। এর মানে দাঁড়ায়, রকেটের উৎক্ষেপণ পরবর্তী কোনো দিনের জন্য পিছিয়ে গেছে।
“এটা চালানোর জন্য ধন্যবাদ।” --কোম্পানির ওয়েবকাস্টে বলেন রিলেটিভিটি’র উৎক্ষেপণ পরিচালক ক্লে ওয়াকার।
এক টুইটে রিলেটিভিটি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী টিম ইলিস বলেন, কোম্পানির পরবর্তী প্রচেষ্টা চালাতে ‘কয়েক দিন সময় লাগতে পারে’।
বেশকিছু মহাকাশ কোম্পানিই থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহ্যার করছে, যা ‘অ্যাডটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং’ নামে পরিচিত। রিলেটিভিটি কার্যকর উপায়ে নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে এই প্রচেষ্টা চালিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলেছে সিএনবিসি।
কোম্পানির বিশ্বাস, তাদের কক্ষপথে আবর্তন-উপযোগী রকেট তৈরির প্রচেষ্টা বিভিন্ন প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে দ্রুতগতির। এতে তুলনামূলক কম যন্ত্রাংশের প্রয়োজন পড়ে, যেখানে সফটওয়্যারের মাধ্যমেই বিভিন্ন পরিবর্তন করা সম্ভব। আর কেবল ৬০ দিনের মধ্যেই কাঁচামাল থেকে রকেট তৈরির লক্ষ্যস্থির করেছে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ‘দ্য লং বিচ’ নামের প্রকল্পটি।
টেরান ১ রকেটের উচ্চতা একশ ১০ ফুট। এর নীচের অংশের প্রথম ধাপে কাজ করে নয়টি ইঞ্জিন। আর দ্বিতীয় ধাপে একটি। এর ‘এওন’ নামের ইঞ্জিন থ্রিডি-প্রিন্ট করা। এ ছাড়া, দুই ধরনের জ্বালানী ব্যবস্থা থাকায় রকেটে ব্যবহৃত হয়েছে অক্সিজেন ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস।
কোম্পানি বলছে, কেবল ইঞ্জিন নয়, রকেটের ৮৫ শতাংশই থ্রিডি প্রিন্ট করা।
রিলেটিভিটি এই রকেটের মাধ্যমে প্রতি উৎক্ষেপণের পেছনে খরচ ধরেছে এক কোটি ২০ লাখ ডলার। আর এটি এমনভাবে নকশা করা যেন পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে এটি এক হাজার দুইশ ৫০ কেজির সরবরাহ বহন করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের উৎক্ষেপণ বাজারে এই রকেট ‘মিডিয়াম লিফট’ অর্থাৎ মাঝারি পর্যায়ের উৎক্ষেপণ হিসেবে বিবেচিত। এমনকি দাম ও সক্ষমতার ভিত্তিতেও এর অবস্থান রকেট ল্যাবের ‘ইলেকট্রন’ ও স্পেসএক্স-এর ‘ফ্যালকন ৯’ রকেটের মাঝামাঝি।
বুধবারের উৎক্ষেপণে রকেটের ভেতর কোনো পেলোড বা স্যাটেলাইট বহন করা হয়নি। কোম্পানি বলছে, এই উৎক্ষেপণ তাদের একটি প্রোটোটাইপের প্রতিনিধিত্ব করে।
মিশন শুরুর আগে বেশ কিছু টুইটে এই অভিযানের জন্য নিজের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন এলিস। তিনি বলেন, উৎক্ষেপণের প্রায় ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে সর্বাধিক অ্যারোডাইনামিক চাপের মাইলফলকে পৌঁছানোর বিষয়টি কোম্পানির সক্ষমতা প্রমাণের ‘মূল’ উপাদান হবে।
এরইমধ্যে টেরান ১-এর পরের প্রজন্ম নিয়ে কাজ করছে নির্মাতা। আকারে তুলনামূলক বড় এই পুনর্ব্যবহারযোগ্য ওই রকেট শ্রেণির নামকরণ হয়েছে ‘টেরান আর’।
নিজেদের মূল্যমান চার হাজার দুইশ কোটি ডলার হিসাবে এখন পর্যন্ত এক হাজার তিনশ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ তুলতে পেরেছে কোম্পানিটি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে নিজস্ব সদর দপ্তর ও কারখানা, মিসিসিপি’তে ইঞ্জিন পরীক্ষার সুবিধা ও ফ্লোরিডায় লঞ্চ সাইট চালু করে বাড়িয়ে যাচ্ছে নিজেদের বিস্তৃতি।
এই উৎক্ষেপণের আগে রিলেটিভিটি’র জন্য শুভাকামনা জানিয়েছেন জেফ বেজস। তার প্রতিষ্ঠিত ব্লু অরিজিনে একসময় কাজ করেছেন এলিস।
সিএনবিসি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এলিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি ২০২১ সালের শুরুতে রিলেটিভিটি’র সদর দপ্তর দেখতেও গিয়েছিলেন বেজোস।