তাইওয়ান নির্বাচনের আগে চীনে তদন্ত ফক্সকনের বিরুদ্ধে

ফক্সকনের মূল নাম ‘হন হাই প্রিসিশন ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি লিমিটেড’। আর চীনের হাজার হাজার নাগরিককে কর্মসংস্থান দেওয়ার পাশাপাশি দেশটিতে অন্যতম বিনিয়োগকারীও ফক্সকন।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2023, 08:39 AM
Updated : 23 Oct 2023, 08:39 AM

তাইওয়ানে নির্বাচন শুরু হওয়ার আগেই চীনে কর সংশ্লিষ্ট এক তদন্তের মুখে পড়েছে অ্যাপলের মূল আইফোন উৎপাদক কোম্পানি ফক্সকন।

সোমবার সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র রয়টার্সকে এ তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, তাদের বিশ্বাস, তদন্তের সঙ্গে তাইওয়ান নির্বাচনের যোগসূত্র আছে, যা প্রকাশ পেয়েছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত এক সংবাদপত্রে।

রোববার চীনের ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমস প্রতিবেদনে বলেছে, ফক্সকনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছে চীনে। আর হেনারন ও হুবেই প্রদেশ’সহ অন্যান্য জায়গায় কোম্পানির বিভিন্ন এন্টারপ্রাইসের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগ।

এই বিষয়টির স্পর্শকাতরতার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র দুটি আরও বলেছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় চীনা কর্তৃপক্ষের তদন্তের মুখে পড়েছে বেশ কিছু কোম্পানি, যাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে, ওই সূত্র দুটি’র বিশ্বাস, এর মধ্যে কেবল ফক্সকনের বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়টি জনসমক্ষে আনা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে।

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তিন মাস আগে এই আলোচিত তদন্ত শুরু হল। ফক্সকনের নিজস্ব ব্যবসার কিছু অংশ চীনের বাইরে নেওয়ার ইচ্ছাকে এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

ফক্সকনের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পর্কে রয়টার্স হেনান, হুবেই, গুয়াংডং ও জিয়াংসু অঙ্গরাজ্যের কর্তৃপক্ষের মন্তব্য জানতে চাইলেও তাৎক্ষণিক সাড়া মেলেনি।

ফক্সকনের মূল নাম ‘হন হাই প্রিসিশন ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি লিমিটেড’। আর চীনের হাজার হাজার নাগরিককে কর্মসংস্থান দেওয়ার পাশাপাশি দেশটিতে অন্যতম বিনিয়োগকারীও ফক্সকন। আর তাইওয়ানভিত্তিক কোনো কোম্পানি যে দেশটিতে সফল হতে পারে, তার উদাহরণ হিসেবে ফক্সকনকে নিয়মিতই ব্যবহার করে থাকে বেইজিং।

প্রথম সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, তাদের বিবেচনায় এই তদন্ত ফক্সকনের জন্য একটি ‘সতর্কবার্তা’ কারণ কোম্পানি তাদের উৎপাদন ব্যবস্থার কিছু অংশ চীন থেকে সরিয়ে ফেলছে। এর মধ্যে রয়েছে আইফোন উৎপাদন চীন থেকে ভারতে সরিয়ে ফেলার বিষয়টিও।

“তাদের অর্থনীতি তেমন ভালো করছে না। আমাদের মতো বেশ কিছু কোম্পানি ভারতের দিকে পাড়ি দেওয়ায় তারা এই সতর্কবার্তা দিয়েছে।” --বলেছে ওই সূত্র।

“তারা চায়, আপনি যে কোনো একটি পক্ষ বেছে নিন। হয় তাদের সঙ্গে থাকুন, নয়তো চলে যান।”

রয়টার্সকে ওই সূত্র বলেছে, ফক্সকনের প্রতিষ্ঠাতা টেরি গউ তাইওয়ানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ইলেকশনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে থাকায় এই তদন্ত চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদপত্রে প্রকাশ পাওয়ার বিষয়টি কাকতালীয় হতে পারে না।

দ্বিতীয় সূত্র বলেছে, এই তদন্ত ‘অপ্রত্যাশিত’ ও কিছুটা ‘অস্বাভাবিক’।

চীনের জাতীয়তাবাদী চেতনা ধরে রাখার জন্য পরিচিত সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসে অবশ্য কর বা কোম্পানির জমি ব্যবহার সংশ্লিষ্ট তদন্ত সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করা হয়নি। চীনের সরকারী বিভাগও এর আনুষ্ঠানিক তদন্ত ঘোষণা করেনি।

রোববার এক বিবৃতিতে ফক্সকন বলেছে, যে কোনো জায়গার আইন মেনে চলা কোম্পানির ‘মূলনীতি’। আর এই তদন্ত নিয়ে চীনের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে সহযোগিতা করবে তারা।

সোমবার ফক্সকন বলছে, এই বিষয়ে তারা আর কোনো মন্তব্য করতে চায় না।

এই প্রসঙ্গে রয়টার্স চীনের তাইওয়ান সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্তব্য জানতে চাইলেও তাৎক্ষণিক জবাব মেলেনি।

ফক্সকনের ধনকুবের প্রতিষ্ঠাতা গউ এখন আর কোম্পানির নিয়মিত কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত নন। ২০১৯ সালে কোম্পানি প্রধানের পদ থেকেও সরে দাঁড়ান তিনি। আর তিনি এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়তে যাচ্ছেন। তবে, বিভিন্ন জরিপে তার অবস্থান নীচের দিকেই দেখা গেছে।

তাইওয়ানের ক্ষমতাসীন ‘ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি)’র বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ তুলে বলেন, বিভিন্ন প্রতিকূল নীতিমালা চালু করে দ্বীপরাষ্ট্রটিকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের দিকে ঠেলে নিচ্ছে দলটি। গউ’র দাবি, কেবল তিনিই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে নিজ ব্যবসা ও ব্যক্তিগত যোগাযোগের সহায়তায় রাষ্ট্রটির শান্তি বজায় রাখতে পারবেন।

গউ’র প্রচারণা বিষয়ক মুখপাত্র হুয়াং শিহ-সিউ ফক্সকনের বিরুদ্ধে তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, গউ চার বছর আগে কোম্পানির দায়িত্ব ছেড়েছেন। এমনকি পরিচালনা পর্ষদেও তিনি বসেন না। আর এখন কেবল কোম্পানির শেয়ার অংশীদার হিসেবে আছেন গউ।

ফক্সকনকে সরকারি সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তাইওয়ানের প্রিমিয়ার চেন চিয়েন-জেন। আর রাষ্ট্রটির অর্থমন্ত্রী ওয়াং মেই-হুয়া বলেন, তার মন্ত্রণালয় এরইমধ্যে কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

রোববার এক নির্বাচনী প্রচারণায় তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে বলেন, চীনে এই তদন্ত নিয়ে করা প্রতিবেদনটি ‘অপ্রত্যাশিত’ ও ‘বেদনাদায়ক’। পাশাপাশি, ডিডিপি’র প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন জরিপে তার নামই শীর্ষে অবস্থান করছে।

“আমি আশা করি, আমাদের জনগণ হন হাই’সহ বিভিন্ন তাইওয়ানিজ কোম্পানিকে সমর্থন করবে।” --বলেন তিনি। এমনকি তার এই মন্তব্য তাইওয়ানের বিভিন্ন টেলিভিশন স্টেশনেও সম্প্রচারিত হয়েছে।

সোমবার ফক্সকনের শেয়ারমূল্য কমেছে তিন শতাংশ। তবে, শেয়ারবাজারেই সামগ্রিক দরপতন হয়েছে প্রায় এক শতাংশ।