‘ডার্ক অক্সিজেন’ নামের এ ঘটনাটি সমুদ্রের চার হাজার মিটার গভীরতায় দেখা গেছে, যেখানে আলো প্রবেশ করে না ও সালোকসংশ্লেষণও সম্ভব হয়ে ওঠে না।
Published : 26 Jul 2024, 05:42 PM
পৃথিবীতে অক্সিজেনের নতুন এক উৎস খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যার উৎপত্তিস্থল প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে থাকা বিভিন্ন ধাতব ‘ব্যাটারি’।
‘ডার্ক অক্সিজেন’ নামের এ ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় চার হাজার মিটার গভীরে, যেখানে আলো প্রবেশ কেরে না, এমনকি সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াও সম্ভব হয়ে ওঠে না।
এর পরিবর্তে, সমুদ্রের তলদেশে সংরক্ষিত প্রাকৃতিক খনিজ থেকে এ অক্সিজেন তৈরি হয়। এটি এমন এক দূর্বল ব্যাটারির মতো কাজ করে, যা সমুদ্রের পানি থেকে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন বিভক্ত করার মতো পর্যাপ্ত ভোল্টেজের বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম।
“সালোকসংশ্লেষণ বাদেও পৃথিবীতে অক্সিজেনের আরেকটি উৎস আছে,” বলেন ‘স্কটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর মেরিন সায়েন্স (স্যামস)’র পরিবেশ বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু সুইটম্যান, যিনি এ গবেষণার সঙ্গেও জড়িত।
প্রশান্ত মহাসাগরে একটি ফিল্ডওয়ার্ক পরিচালনার সময় এ ঘটনা লক্ষ্য করা অধ্যাপক সুইটম্যানের মতে, বায়বীয় জীবনের উৎপত্তি কোথা থেকে হল, সে বিষয়ে প্রচলিত বোঝাপড়াকে চ্যালেঞ্জ জানায় নতুন এ উদ্ঘাটন।
“পৃথিবীতে বায়বীয় জীবন শুরু করার ক্ষেত্রে অক্সিজেন থাকাটা অনিবার্য। আর পৃথিবীতে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ শুরু হয়েছিল, তা আমরা এরইমধ্যে জানি,” বলেন তিনি।
“তবে এখন আমরা জেনেছি, গভীর সমুদ্রের এমন জায়গাতেও অক্সিজেন তৈরি হয়, যেখানে কোনো আলো নেই।”
গবেষণা অনুসারে, গভীর সমুদ্রের খনিজের স্তুপ থেকে যে পরিমাণ অক্সিজেন তৈরি হয়, সেটি সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় তৈরি অক্সিজেনের তুলনায় অনেক কম হলেও তা গভীর সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রে অক্সিজেন যোগান দেওয়ার মতো যথেষ্ট। আর এ প্রক্রিয়াটি ‘পলিমেটালিক নোডুলস’ নামে পরিচিত।
পানির নীচে থাকা এইসব প্রাকৃতিক ব্যাটারি থেকে গ্যাস তৈরি হচ্ছে কি না, এ তত্ত্ব নিশ্চিত করতে স্যামস-এর বিজ্ঞানীরা এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ‘নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র পরীক্ষাগারে পরিচালিত এক সফল পরীক্ষার প্রক্রিয়া পুনরায় নতুন করে তৈরি করেছেন বলে উঠে এসেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে।
“সম্ভবত আমরা একটি প্রাকৃতিক ‘জিওব্যাটারি’ খুঁজে পেয়েছি,” বলেন ‘নর্থওয়েস্টার্ন ওয়েইনবার্গ কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস’র রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ফ্রাঞ্জ জাইগার।
তিনি আরও যোগ করেন, এ নতুন উদ্ঘাটনের ফলে বিভিন্ন সামুদ্রিক খনিভিত্তিক কোম্পানি পানির নিচের বাস্তুতন্ত্রে নিজস্ব কাজের প্রভাবের বিষয়টি নতুন করে মূল্যায়নে বাধ্য হতে পারে।
এ গবেষণার বিস্তারিত উঠে এসেছে ‘এভিডেন্স অফ ডার্ক অক্সিজেন প্রোডাকশন অ্যাট দ্য অ্যাবিসাল সিফ্লোর’ শীর্ষক এক গবেষণাপত্রে, যা প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার জিওসায়েন্স’-এ।