এ শতাব্দীর মাঝামাঝি অর্থাৎ ২০৩৫ থেকে ২০৬৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসগুলোতে ধারাবাহিকভাবেই আর্কটিক মহাসাগরে বরফ শূন্য অবস্থা দেখা যাবে। এ মাসেই সমুদ্রের বরফের ঘনত্ব সবচেয়ে কম হয়।
Published : 06 Mar 2024, 06:39 PM
আগামী এক দশকের মধ্যে গলে যেতে পারে আর্কটিক মহাসাগরের সমস্ত বরফ। বিজ্ঞানীদের ধারণা ‘বরফ শূন্য’ হয়ে যেতে পারে পৃথিবীর উত্তর বা সুমেরু অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মহাসাগরটি।
আর্কটিক মহাসাগরে বরফ গলে যাওয়ার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তব রূপ, যেখানে বিভিন্ন সময়েই সংকটপূর্ণ পৃথিবীর সত্যিকারের পরিস্থিতির রূপক হিসাবে দেখা গেছে দুর্দশাগ্রস্ত শ্বেত ভালুকের ছবি।
নতুন এক গবেষণা বলছে, বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও দ্রুত গলে যাচ্ছে আর্কটিক মহাসাগরের বরফ, যার ফলে এখন থেকে প্রায় এক দশকের মধ্যে এর প্রথম ‘বরফহীন’ দিন দেখতে পারে মহাসাগরটি।
‘নেচার রিভিউস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ জার্নালে মঙ্গলবার প্রকাশিত এক সমীক্ষা অনুসারে, এ উদ্বেগজনক মাইলফলকটি বিজ্ঞানীদের পূর্ববর্তী ধারণার প্রায় ১০ বছর আগে অর্থাৎ ২০৩০-এর দশকের কোনও এক সময় ঘটতে পারে।
গবেষণায় ‘বরফ শূন্য’ বিষয়টিকে এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যখন গোটা আর্কটিক মহাসাগরের কেবল ১০ লাখ বর্গকিলোমিটারের কম জায়গাজুড়ে বরফ থাকবে।
“বরফ গলে যাওয়া এখন আর দূরবর্তী শঙ্কা নয়, বরং এটা যে কোনও সময়ে ঘটতে পারে,” বলেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডার’-এর ‘বায়ুমণ্ডলীয় ও মহাসাগরীয় বিজ্ঞান’ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলেকজান্দ্রা জন।
“দুর্ভাগ্যবশত আর্কটিক মহাসাগরের বরফ গলে যাওয়ার বিষয়টি মূলত আমাদের জলবায়ু মডেলের সব ধরনের নির্গমন পরিস্থিতির মাধ্যমেই ঘটে থাকে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, এটি বাস্তবেই ঘটতে চলেছে ও আমাদের এর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
গবেষণায় ইঙ্গিত মেলে, এ শতাব্দীর মাঝামাঝি অর্থাৎ ২০৩৫ থেকে ২০৬৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসগুলোতে ধারাবাহিকভাবেই আর্কটিক মহাসাগরে বরফ শূন্য অবস্থা দেখা যাবে। এ মাসেই সমুদ্রের বরফের ঘনত্ব সাধারণত সবচেয়ে কম হয়।
গবেষণায় বলা হয়, এ ধরনের ক্ষতির সুনির্দিষ্ট সময় নির্ভর করে মানুষ কত দ্রুত জীবাশ্ম জ্বালানির নির্গমন কমাতে পারে, তার ওপর। কারণ, গোটা বিশ্বে বাড়তে থাকা এ জ্বালানির নির্গমন বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছে।
বর্তমানে পৃথিবীতে যে উচ্চ নির্গমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে, তা চলতে থাকলে ২১০০ সালের মে থেকে জানুয়ারি’র মধ্যে আর্কটিক মহাসাগর একেবারে বরফশূন্য হয়ে যাবে।
এমনকি জ্বালানির নির্গমনের মাত্রা কমানো সম্ভব হলেও ওই সময়ে বরফশূন্য হবেই আর্কটিক মহাসাগর।
৭০-এর দশকের জলবায়ু মডেলগুলো থেকেই ধারণা মিলেছিল, পর্যাপ্ত বৈশ্বিক উষ্ণায়নে আর্কটিক মহাসাগরে বরফশূন্য গ্রীষ্মকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তবে, সেটা কত দ্রুত ঘটতে পারে, তা বুঝতে সাম্প্রতিক এই গবেষণাটি সাহায্য করেছে বলে জানিয়েছেন জন।
এ ধরনের পরিবর্তনে কী পরিণতি হতে পারে তা সম্পূর্ণভাবে বোঝা এখনও সম্ভব হয়নি। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা বলছে, এর ফলে পৃথিবীর পরিবেশগত ব্যবস্থা, বন্যপ্রাণী, স্থানীয় ও বৈশ্বিক জলবায়ুর ওপর বড় প্রভাব পড়ার ঝুঁকি আছে।
“পৃথিবী বায়ুমণ্ডলে যত বেশি জীবাশ্ম জ্বালানীর নির্গমন হবে, আর্কটিক মহাসাগর বরফশূন্য হওয়ার ঝুঁকিও তত বেশি।”