ডেটা চুরি: নজরদারি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলায় মেটা

“ভয়জারের মতো কোম্পানিগুলো এমন এক শিল্পের অংশ, যা অপরাধমূলক কার্যক্রমের উদ্দেশ্যে ব্যবহারকারীকে শিকার বানিয়ে ডেটা চুরির সেবা দেয়।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2023, 12:06 PM
Updated : 14 Jan 2023, 12:06 PM

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক নজরদারি কোম্পানি ভয়েজার ল্যাবসের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সামাজিক মাধ্যম জায়ান্ট মেটা। তাদের অভিযোগ, কোম্পানিটি হাজার হাজার নকল অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ছয় লাখের বেশ ফেইসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে।

মেটা আরও বলেছে, ব্যবহারকারীর লাইক, বন্ধু তালিকা, ছবি ও কমেন্টের পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রুপ ও পেইজ থেকেও তথ্য চুরি করেছে কোম্পানিটি।

নিজস্ব ‘সারভেলিয়েন্স সফটওয়্যার’ ব্যবহারের মাধ্যমে ছদ্মবেশ ধারণ করে ভয়জার এই কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। পাশাপাশি, আর্থিক লাভের প্রত্যাশায় ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ইউটিউব, লিংকডইন ও টেলিগ্রাম থেকেও কোম্পানিটি ডেটা চুরি করেছে বলে উল্লেখ রয়েছে অভিযোগে।

মামলার বিচারককে ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ভয়জারের ওপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনুরোধ করেছে মেটা - প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট গিজমোডো এই তথ্যের সূত্র হিসেবে মেটার অভিযোগপত্র হাতে পাওয়ার কথা বলেছে।

“বিবাদীর বেআইনী কার্যক্রমের প্রত্যক্ষ ফলাফল হিসাবে মেটা অপূরণীয় ক্ষতি ভোগ করেছে ও এখনও সেটি অব্যাহত রয়েছে। এর জন্য বিদ্যমান আইনে পর্যাপ্ত প্রতিকার ব্যবস্থা নেই। আর এটি চলতেই থাকবে যতক্ষণ না আসামীর কার্যকলাপ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।” -- অভিযোগপত্রে লেখা।

মেটা বলেছে, ভয়জারের কার্যক্রম তাদের ‘ক্ষতির মুখে ফেলেছে’। এর মধ্যে আছে তদন্তের খরচও, যা অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে তাদের প্রাপ্য।

মেটা আরও দাবি করে, ভয়জারের হাতিয়ে নেওয়া ডেটার মধ্যে রয়েছে ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, সংবাদ সংস্থা, স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা, সামরিক বাহিনী, দেশটির স্থানীয়, রাজ্য ও ফেডারেল সরকারী সংস্থার বিভিন্ন কর্মীর পাশাপাশি পুরোদস্তর বাবা-মা, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও দেশটির ইউনিয়ন সদস্যদের বিভিন্ন তথ্যও।”

এক ব্লগ পোস্টে মেটা উল্লেখ করেছে, তারা ভয়জার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি, মেটার নিজস্ব নীতিমালা মেনে চলায় বাধ্য করতে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে মামলাও করেছে।

“ভয়জারের মতো কোম্পানিগুলো এমন এক শিল্পের অংশ, যা অপরাধমূলক কার্যক্রমের উদ্দেশ্যে ব্যবহারকারীকে শিকার বানিয়ে ডেটা চুরির সেবা দেয়।” --লিখেছেন মেটার প্ল্যাটফর্ম প্রয়োগ ও মামলা পরিচালক জেসিকা রোমেরো।

“কোনো ধরনের তদারকি বা জবাবদিহিতা ছাড়াই, এই শিল্প গোপনে সেইসব তথ্য সংগ্রহ করে, যা ব্যবহারকারীরা নিজস্ব কমিউনিটি, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করেন। আর তারা এটি করেন নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী উপায়ে।”

২০২১ সালে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০১৯ সালে ভয়জারের সামাজিক মাধ্যম নজরদারির টুল পরীক্ষা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস শহরের আইনশৃঙ্খলা বিভাগ।

সে সময় কোম্পানিটি বলেছে, আইশৃঙ্খলা বাহিনী সামাজিক মাধ্যমে কোনো সন্দেহভাজনের বন্ধু তালিকা পর্যবেক্ষণে এটি ব্যবহার করতে পারেন। আর ওই ব্যক্তির কার্যক্রম অনুমান করে এই ব্যবস্থা কোনো অপরাধ ঘটার আগেই তা বলে দিতে পারে।

‘ডেটা স্ক্রেপিং’ এমন এক সমস্যা, যা মেটা গুরুত্ব সহকারেই নিয়ে থাকে। 

২০২১ সালে কোম্পানিটি প্রায় ১৮ কোটি ব্যবহারকারীর ডেটা চুরির অভিযোগ তুলে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। গত নভেম্বরে, ব্যবহারকারীর ফোন নাম্বার ও অন্যান্য ডেটা ফাঁসের বিপরীতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেওয়ায় মেটাকে ২৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার জরিমানা করেছিল আয়ারল্যান্ডের ডেটা প্রোটেকশন কর্তৃপক্ষ।

সে সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছিল, ‘জিডিপিআর’ ডেটা সুরক্ষা নীতিমালা মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে মেটা।