বাইটড্যান্সকে শেষ পর্যন্ত টিকটক বিক্রির জন্য ‘বাধ্য’ করা হতে পারে। তবে কোম্পানিটি জোর দিয়ে বলেছে, বৈশ্বিক প্রকৃতির কারণে টিকটক বিক্রির বিষয়টি অসম্ভব।
Published : 12 Jan 2025, 04:06 PM
চীনের মালিকানাধীন বাইটড্যান্স ১৯ জানুয়ারির আগে প্ল্যাটফর্মটি বিক্রি না করলে জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধের আইন বহাল রাখতে পারে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের বেশিরভাগ বিচারপতি টিকটক নিষিদ্ধের এই ফেডারেল আইন ‘বহাল রাখতে আগ্রহী’ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে সে দেশটির সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ।
মার্কিন সরকারের তিনটি শাখার বিরুদ্ধে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ‘টিকটক বনাম গারল্যান্ড’ নামের এই গুরুত্বপূর্ণ মামলাটি, যারা এই ধারণার সঙ্গে একমত হয়েছেন যে, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে অ্যাপটি।
“টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটড্যান্স যে গোয়েন্দা নজরদারির কাজ করছে তা কি আমাদের উপেক্ষা করা উচিত?” এমন প্রশ্ন কোম্পানিটির আইনজীবী নোয়েল ফ্রান্সিসকোকে জিজ্ঞাসা করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস।
বিচারক ব্রেট কাভানাহ বলেছেন, আমেরিকানদের বিদেশি তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে উদ্বেগ ‘খুবই জোরালো’ হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এসব তথ্য ‘গুপ্তচরবৃত্তি বা মানুষকে ব্ল্যাকমেইলের’ কাজে ব্যবহার করা হতে পারে– এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
বিচারপতি এমি কোনি ব্যারেট এই যুক্তি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, আইনটি সরাসরি আমেরিকানদের চুপ করিয়ে দিচ্ছে কি না। ব্যারেট বলেছেন, “আইনে টিকটককে বন্ধ করার কথা বলা নেই। এতে বলা হয়েছে, বাইটড্যান্সকে অবশ্যই টিকটক থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হবে। যদি কোম্পানিটি তা করত তাহলে আমরা এখানে থাকতাম না।”
বিচারপতি স্যামুয়েল অ্যালিটো বলেছেন, “নিষেধাজ্ঞার পরিণতি কঠোর বা দীর্ঘস্থায়ী না-ও হতে পারে। টিকটক যদি নিষিদ্ধ হয়ে যায় তবে অন্য কোনো মিডিয়া কোম্পানি যে এতে ঝাঁপিয়ে পড়বে না বলে এর কি কোনও কারণ আছে?”
বিচারপতি এলেনা কাগান বলেছেন, বাকস্বাধীনতার জন্য মার্কিন সাংবিধানিক সুরক্ষা আইন অন্য দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়।
“এ আইনটি কেবল এই বিদেশী কর্পোরেশনকে টার্গেট করে তৈরি হয়েছে, যাদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সংশোধনী আইনের সুবিধা পাওয়ার কোনো অধিকার নেই।”
কোম্পানিটির আইনজীবী ও আইনটিকে চ্যালেঞ্জ জানানো টিকটক নির্মাতাদের একটি দল জোরালোভাবে যুক্তি দিয়েছিলেন যে, সরকার কেবল কোনও বিদেশী শক্তির কাছে ডেটা ধরে রাখা বা পাঠানোকে বেআইনি ঘোষণা করে ব্যবহারকারীদের বক্তব্যের উপর কম বিধিনিষেধ দেওয়া একটি আইন তৈরি করতে পারত।
“আমরা এর ঝুঁকি নিয়ে বিতর্ক করছি না। টিকটককে ঠেকাতে মার্কিন সরকার যে উপায় নিয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক করছি,” বলেছেন কোম্পানিটির আইনজীবী ফ্রান্সিসকো।
কোম্পানির আরেক আইনজীবী জেফরি ফিশার বলেছেন, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বিদেশি ভাষাভাষীদের সঙ্গে কাজ করার অধিকারকে লঙ্ঘন করেছে টিকটক নিষিদ্ধের এ আইনটি।
বাইডেন প্রশাসনের সলিসিটর জেনারেল এলিজাবেথ প্রিলগার বলেছেন, বাইটড্যান্সকে শেষ পর্যন্ত টিকটক বিক্রির জন্য ‘বাধ্য’ করা হতে পারে। তবে কোম্পানিটি জোর দিয়ে বলেছে, বৈশ্বিক প্রকৃতির কারণে টিকটক বিক্রির বিষয়টি ‘অসম্ভব’।
এদিকে, পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আগের মেয়াদে অ্যাপটি নিষিদ্ধের জন্য নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করলেও সম্প্রতি বলেছেন, তিনি টিকটককে ‘বাঁচাতে’ চান। আসন্ন প্রশাসনকে একটি চুক্তি কার্যকর করার জন্য শেষবারের মতো চেষ্টা করতে কিছু সময় দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন বিচারকরা।
আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি বিবেচনা করবে।
আমেরিকানদের তথ্য সংগ্রহ ও প্রোপাগান্ডা বা মিথ্যা তথ্য প্রচারকারী বিদেশি প্রতিপক্ষের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মকে টার্গেট করতে গত এপ্রিলে কংগ্রেস দ্বিদলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টিকটক নিষিদ্ধ বা এর মূল কোম্পানি থেকে বিক্রির আইনটি পাস করে দেশটি। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এতে স্বাক্ষর করে তা আইনে পরিণত করেছেন, যা বহাল রেখেছে মার্কিন নিম্ন আদালত।