“মহামারি ও বিশ্বায়নের যুগে এমন হতেই পারে যে, আপনার একটা পরিবার আছে, যার সঙ্গে আপনি একই শহরে বাস করছেন না।”
Published : 13 Sep 2024, 04:57 PM
মানুষের স্পর্শ অনুকরণের মাধ্যমে এক সময় হাজার হাজার মাইল দূর থেকেও হাতে হাত রাখা বা বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ বিচ্ছিন্ন করা যাবে, এমনই এক নতুন ডিভাইস তৈরির দাবি করেছেন গবেষকরা।
‘ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল)’-এর গবেষকরা এমন এক নতুন প্রযুক্তি তৈরি করেছেন, যেটি ‘সহজাতভাবেই বাস্তব জগতের বিভিন্ন স্পর্শ অনুকরণে সক্ষম’ বলে দাবি তাদের।
নতুন এ ডিভাইসকে ডাকা হচ্ছে ‘বিএএমএইচ (ইনোভেটিভ বায়োইনস্পায়ার্ড হ্যাপটিক সিস্টেম)’ নামে, যা বিভিন্ন স্নায়ু কোষকে উদ্দীপিত করার মাধ্যমে কাজ করে। আর কম্পন থেকে মানব স্পর্শের বিপরীতেও সাড়া দেয় এটি।
গবেষকরা বলেছেন, বিভিন্ন রোবট দিয়ে পরিচালিত অস্ত্রোপচারে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করার সম্ভাবনা আছে, যার মাধ্যমে ডাক্তাররাও বিভিন্ন ধরনের টিস্যু মূল্যায়ন করে দেখতে পাবেন, তা থেকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি আছে কি না।
বিজ্ঞানীরা এখন এই প্রযুক্তি থেকে বোঝার চেষ্টা করছেন, আঙুলের ডগায় দুর্বল সংবেদনশীলতা থাকা রোগীরা কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের স্পর্শের অনুভূতি হারিয়ে ফেলেন।
তারা বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবা খাতের একটি ডায়গনিস্টিক টুল হিসেবে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে, ‘মেটাকারপাল টানেল সিনড্রোম’-এ ভোগা লোকজনের বেলায়। হাতের কবজি সংকুচিত হয়ে যাওয়া বা ডাইবেটিস রোগ, যেখানে স্পর্শের অনুভূতি হারিয়ে যেতে পারে, সেইসব ক্ষেত্রে এ সমস্যা দেখা যায়।
এ বিষয়ে ইউসিএল-এর মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রোবোটিসিস্ট ড. সারা আবাদ বলেছেন, “ত্বক মানবদেহের অন্যতম অঙ্গ ও এতে বিভিন্ন ধরনের তথ্য থাকে। উদাহরণ হিসেবে, কোনো কিছু স্পর্শ করার সময় এর বিভিন্ন গঠন ও প্রান্ত।”
“এ ছাড়া, আমরা কী ধরনের উদ্দীপনা পাচ্ছি, সে সম্পর্কেও তথ্য দেয় এটি। যেমন- কোনো ধরনের কম্পন।।”
তিনি আরও যোগ করেন, এই ডিভাইসটি ‘স্পর্শের সঙ্গে আমাদের ভার্চুয়াল সামাজিক যোগাযোগে একটি মেলবন্ধন ঘটানোর’ উপায় দেখাচ্ছে।’
ড. আবাদ বলেন, “মহামারি ও বিশ্বায়নের যুগে এমন হতেই পারে যে, আপনার একটা পরিবার আছে, যার সঙ্গে আপনি একই শহরে থাকছেন না।”
“সমস্যা হচ্ছে, ভিডিও কলের সীমাবদ্ধতা আছে।”
“সামাজিক মেলবন্ধন, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এক্ষেত্রে স্পর্শ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আর, ভিডিও কলে এ সুবিধা মেলে না।”
বিএএমএইচ-এ এক ধরনের সিলিকনের তৈরি আঙুলের ডগা আছে, যা একটি ছোট স্যুটকেসের প্রায় সমান আকারের মেশিনের সঙ্গে সংযোগ দেওয়া।
গবেষণা দলটির তথ্য অনুসারে, এটি ত্বকের চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ু কোষ বা টাচ রিসেপ্টরকে অনুকরণ করার মাধ্যমে কাজ করে থাকে, যার মাধ্যমে ‘বাস্তবিক স্পর্শের অনুভূতি’ পেতে পারেন রোগীরা।
আসন্ন মাসগুলোয় গবেষকরা অন্তত এমন ১০ জনকে বাছাই করার লক্ষ্য নিয়েছেন, যাদের অনুভূতি হারানোর অভিজ্ঞতা আছে। তাদের লক্ষ্য, কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্পর্শের অনুভূতি কমে যায়, তা আরো ভালোভাবে বোঝা।
ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনে আয়োজিত ‘ব্রিটিশ সায়েন্স ফেস্টিভাল’-এ নিজেদের প্রযুক্তির প্রথম ঝলক দেখিয়েছে গবেষণা দলটি।