গত বছর বিভিন্ন কর্পোরেট দপ্তর, বিশেষ করে পরামর্শক ও আইনী কাঠামোয় চলা কোম্পানিগুলোতে তল্লাশি চালানোর পর থেকেই চীনের ওপর ক্ষোভ বেড়েছে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের।
Published : 15 Nov 2023, 02:15 PM
এক দেশ থেকে অন্য দেশে ডেটা স্থানান্তরের আইন নিয়ে চীনের কাছে আরও বেশি স্বচ্ছতা প্রত্যাশা করে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো।
বুধবার বিষয়টি জানিয়েছে ইউরোপীয় এক ব্যবসায়িক লবিয়িস্ট দল। পাশাপাশি, চীনের ‘অপ্রয়োজনীয়’ ডেটা সংরক্ষণের পেছনে লাখ লাখ ইউরো খরচ হওয়ার বিষয়টি নিয়েও সতর্ক করেছে দলটি।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনা ‘আইনে থাকা ‘গুরুত্বপূর্ণ ডেটা’ ও ‘ব্যক্তিগত তথ্যের’ সংজ্ঞা’ চেয়েছে ‘ইউরোপিয়ান চেম্বার অফ কমার্স’। এর পাশপাশি, সেপ্টেম্বরে ঘোষণা দেওয়া নীতিমালার কিছু অংশ শিথিল করার আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি, যেটি দ্রুতই বাস্তবায়নের সম্ভাবনা আছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট জাতীয় নিরাপত্তা বাড়ানোর দিকে মনযোগ দেওয়ার পর থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নিজেদের ডেটা আইন কঠোর করেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে পরিচিত দেশটি। তবে, এ আইনের স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন বিদেশী কোম্পানি।
“২০১৭ সালে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রবর্তনের পর থেকে আমরা ‘গুরুত্বপূর্ণ ডেটার’ পরিষ্কার কোনো সংজ্ঞা পাইনি। ছয়টি বছর!” -- চেম্বার সদস্যদের ওপর চালানো জরিপের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার সময় চীনের ডেটা আইনের প্রভাব সম্পর্কে বলেন সংস্থাটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট স্টেফান বেনহার্ট।
বাণিজ্যিক দলটির সদস্য হিসেবে রয়েছে ‘বিএএসএফ’, ‘মায়েরস্ক’, ‘সিমেন্স’ ও ‘ফোক্সভাগেনের’ মতো কোম্পানি।
“চীনের বেশ কিছু আইন, গাইডলাইন ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার অভাব দেখা গেছে, যা ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর পক্ষে চীনা আইন মেনে চলা চ্যালেঞ্জিং করে তোলার পাশাপাশি তাদের কার্যক্রমেও বাধা সৃষ্টি করে।” --উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
এ ছাড়া, ‘নিয়ন্ত্রকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মূল্যায়নের প্রবণতা’ কম হওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দলটি, ‘বিশেষ করে শীর্ষ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর বেলায়’।
রয়টার্স বলছে, গত বছর বিভিন্ন কর্পোরেট দপ্তর, বিশেষ করে পরামর্শক ও আইনী কাঠামোয় চলা কোম্পানিগুলোতে তল্লাশি চালানোর পর থেকেই চীনের ওপর ক্ষোভ বেড়েছে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের।
“আমি আইনের পক্ষে বা বিপক্ষে আছি কি না, এমন প্রশ্নের জবাব যাচাই করা খুবই চ্যালেঞ্জিং বিষয়।” --বলেন বেনহার্ট।
চেম্বারের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে ইউরোপীয় কমিশনের এক কর্মকর্তার সাম্প্রতিক মন্তব্যে সমর্থন মিলেছে, যিনি সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন, চীনের ডেটা আইনে স্বচ্ছতা না থাকা নিয়ে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন।
একই মাসে চীন বলেছে, তারা সেইসব আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, একাডেমিক সহযোগিতা, ক্রস-বর্ডার ম্যানুফ্যাকচারিং ও বিপণনের মতো কার্যক্রমে ডেটা স্থানান্তর বিষয়ক মূল্যায়ন ব্যবস্থা শিথিল করার বিষয়টি বিবেচনা করছে, যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য বা গুরুত্বপূর্ণ ডেটার বিষয়টি নেই। আর এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন বিদেশী ব্যবসায়িক দল ও আইনজীবিরা।
“এই আইনের খসড়া প্রকাশকে দেখা হচ্ছিল, ‘ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর শঙ্কাকে আমলে নিয়ে চীনা সরকারের পদক্ষেপ নেওয়ার’ সংকেত হিসেবে। এমন ইতিবাচক সংকেত বাস্তবায়ন নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কোম্পানিগুলো।” --বলেছে চেম্বার।
দলটি আরও যোগ করে, তাদের সদস্য কোম্পানিগুলো প্রত্যাশা করেছিল, নভেম্বর শেষ হওয়ার আগেই খসড়াটি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।
জরিপ বলছে, ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো সাধারণত যে ধরনের তথ্য স্থানান্তর করে থাকে, তা হচ্ছে কর্মী, সরবরাহক ও গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য। এর মধ্যে ৯৬ শতাংশই পাঠানো হয় বিভিন্ন কোম্পানির সদর দপ্তর ও অন্যান্য আঞ্চলিক দপ্তরে।
জরিপে অংশ নেওয়া এক তৃতীয়াংশ কোম্পানি ইঙ্গিত দিয়েছে, চীনা সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা সিএসি’র অন্যান্য দেশে ডেটা পাঠানোর কার্যক্রম ব্যর্থ হলে চীনের মধ্যে ডেটা সংরক্ষণ করতে তাদের খরচ পড়বে ‘৭০ লাখ ইউরো’। এদিকে, ১০ শতাংশ কোম্পানি বলছে, এ খরচ ‘কোটির ঘরও’ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
চেম্বার বলেছে, কেবল ছয় শতাংশ জবাবদাতা ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা বিদেশে ‘গুরুত্বপূর্ণ ডেটা’ স্থানান্তর করে থাকে।