প্রযুক্তি সেক্টরে চীনে রাষ্ট্রীয় খড়্গে কমে এসেছে ধনকুবেরের সংখ্যা

চীনের ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গত বছর ৩৪তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে অবস্থান করলেও এই বছর তিনি নেমে গেছেন ৫২তম অবস্থানে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2023, 05:37 AM
Updated : 24 March 2023, 05:37 AM

২০২২ সালে বিশ্বে চারশ’র বেশি ব্যক্তি নিজেদের ‘বিলিয়নেয়ার’ তকমা হারিয়েছেন, যার সিংহভাগের অবস্থান চীনে।

বৈশ্বিক ধনী ব্যক্তিদের এক সূচকে দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী আর্থিক কড়াকড়ি, কোভিড ১৯ ব্যাঘাত ও বিভিন্ন শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানির ওপর বেইজিংয়ের ‘ক্র্যাকডাউন’ দেশটির বিত্তশালীদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

‘হুরুন গ্লোবাল রিচ লিস্ট ২০২৩’ নামের এই সূচক থেকে হারিয়ে গেছে চীনের দুইশ ২৯ ধনকুবের, যা বৈশ্বিকভাবে তালিকা থেকে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অর্ধেকেরও বেশি। এই তালিকায় নাম ওঠাতে কোনো ব্যক্তির নেটমূল্য অন্তত একশ কোটি ডলার হতে হয়। গেল বৃহস্পতিবার এই তালিকা থেকে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানিয়েছে এই প্রতিবেদন।

একই সময়ে ৬৯জন নতুন ধনকুবের যুক্ত করেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন।

“বৈশ্বিকভাবে ধনকুবেরের সংখ্যা কমেছে আট শতাংশ। অন্যদিকে, তাদের সম্পদ কমেছে ১০ শতাংশ।” --বলেন হুরুন রিপোর্টের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান রুপার্ট হুগওয়ার্ফ।

তিনি আরও যোগ করেন, এই তালিকায় সর্বমোট তিন হাজার একশ ১২ জন ব্যক্তির নাম এসেছে। এক বছর আগেও সংখ্যাটি ছিল তিন হাজার তিনশ ৮১।

তবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিত্তশালী ব্যক্তি থাকার তালিকায় এখনও একচেটিয়া রাজত্ব করছে চীন। ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারির হিসাবে, দেশটিতে সর্বমোট শতকোটিপতির সংখ্যা নয়শ ৬৯ জন, যা যুক্তরাষ্ট্রের ছয়শ ৯১ ধনকুবেরের চেয়েও বেশি।

বিভিন্ন বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের জন্য এই বছর ভালই কেটেছে। এই তালিকায় শীর্ষে আছে ফরাসী কোম্পানি ‘এলভিএমএইচ’ আর হারমেস পরিবারের উত্তরসূরি বারট্রান্ড পুয়েচ ও তার পরিবার এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন।

এই তালিকা থেকে ছিটকে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন ধসের মুখে পড়া ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ এফটিএক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধান নির্বাহী স্যাম ব্যাংকম্যান-ফ্রিডও। এই ধসের কারণে তিনি নিজের দুই হাজার একশ কোটি ডলারের সম্পদ হারিয়েছেন।

চীনের ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গত বছর ৩৪ নম্বর ধনী ব্যক্তি হিসেবে অবস্থান করলেও এই বছর তিনি নেমে গেছেন ৫২-তে। প্রযুক্তি খাতের ওপর চীনের ক্র্যাকডাউনকে এর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

“সুদের হার বৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, কোভিড-চালিত প্রযুক্তির ফুলে ফেঁপে ওঠা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ক্রমাগত প্রভাব, এই সকল কিছুই শেয়ার বাজারের ব্যাপক ক্ষতি করেছে।” --বলেন হুগওয়ার্ফ।

গত বছর থেকে শুরু করে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত ‘এসঅ্যান্ডপি ৫০০’ সূচকে চীনের শেয়ার কমেছে ১৪ শতাংশ। আর সাংহাই কম্পোজিট সূচকে ১১ শতাংশ শেয়ার হারিয়েছে দেশটি।

২০২২ সালে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় চীনের মুদ্রা ইউয়ানের মূল্যমান কমেছে আট শতাংশ। ১৯৯৪ সালের পর থেকে সবচেয়ে বড় দরপতনের ঘটনা এটি। ফেডারেল রিজার্ভের আক্রমণাত্মক মূল্য বৃদ্ধি ও স্থানীয় অর্থনীতির গতি কমে আসাকে এর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

হুগওয়ার্ফ বলেন, চীনের উচ্চ-নেট-মূল্যের ব্যক্তিদের অর্থনৈতিক আস্থা ও সুখের স্কেল পরিমাপের পর তিনি ভেবেছিলেন, এই বছর হয়তো ইতিবাচকই যাবে।

“আমি নিশ্চিত নই এমন একমাত্র বিষয় হলো, সামনে কোনো বৈশ্বিক আর্থিক মন্দা আসবে কি না।” --বলেন তিনি।

“আমরা প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র ও পরবর্তীতে সুইজারল্যান্ডে ব্যাংক ধসের মতো ঘটনা দেখেছি। আমি নিশ্চিত নই, এর কোনো প্রভাব পড়বে কি না। এমনটি না ঘটলে বিভিন্ন সম্পদ বিশাল ব্যবধানে বাড়তে দেখা যাবে।”