আইকনিক কোনো ইন্টারনেট ব্র্যান্ডের নাম বদল ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ তার উপর যখন ইনস্টাগ্রাম থ্রেডসের মতো নতুন ও ব্লুস্কাইয়ের মতো প্রতিদ্বন্দী অ্যাপের গ্রাহকপ্রিয়তা বাড়ছে।
Published : 25 Jul 2023, 03:46 PM
দীর্ঘদিন যাবত এক্স অক্ষরটির প্রতি দুর্বলতা মাস্কের।
চার হাজার চারশো কোটি ডলার ব্যয়ে কেনা টুইটার ব্র্যান্ড এবং এর আইকনিক নীল পাখির লোগোকে কার্যত হত্যা করে এর ওপর x অক্ষরটি চাপিয়ে দিয়েছেন ইলন মাস্ক - যেটি একান্তই তার নিজের।
এক্স নিয়ে মাস্কের পরিকল্পনা হচ্ছে তিনি একে চীনের উইচ্যাটের মতো সুপার অ্যাপে পরিণত করতে চান। উইচ্যাট অ্যাপে গ্রাহকরা অনলাইনে বিনোদন এবং কেনাকাটার পাশাপাশি তাদের আপডেট পোস্ট এবং মেসেজিং করতে পারেন।
গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া, বিজ্ঞাপনদাতাদের প্ল্যাটফর্ম বিমুখ করবে এমন পদক্ষেপ নেওয়া এবং সবমিলিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে টুইটারকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করার মতো একগাদা বিরক্তিকর পদক্ষেপের পর পৃথিবীর এই শীর্ষ ধনী ব্র্যান্ডটির নাম পরিবর্তন করলেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি।
আইকনিক কোনো ইন্টারনেট ব্র্যান্ডের নাম বদল "খুবই ঝুঁকিপূর্ণ” তার উপর যখন ইনস্টাগ্রাম থ্রেডসের মতো নতুন ও ব্লুস্কাইয়ের মতো প্রতিদ্বন্দী অ্যাপের গ্রাহকপ্রিয়তা বাড়ছে —সিএনিবিসিকে বলেছেন ফরেস্টারের বিশ্লেষক মাইক প্রোলক্স।
“১৫ বছর ধরে একটি ব্র্যান্ডের গড়ে তোলা সাংস্কৃতিক পরিচয়কে নিজ নিজ হাতে ধূলিসাৎ করে দিয়েছেন মাস্ক” —এক ইমেইল বার্তায় বলেছেন প্রোলক্স।
কোম্পানিটির মুখপাত্রের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কোনো জবাব পায়নি বলেছে সিএনিবিসি।
এটা পুরোপুরিভাবে খুব বিস্মিত হওয়ার মতো ঘটনাও নয়। ইতোমধ্যে এক্স হোল্ডিং করপোরেশনের অধীনস্ত কোম্পানি হিসাবে টুইটার কর্পোরেশনের নাম পরিবর্তন করে এক্স কর্পোরেশন করেছেন মাস্ক, জানা যায় গত এপ্রিলে প্রকাশিত আদালতের এক নথিতে। চার হাজার চারশো কোটি ডলারের অ্যাপটিকে কেনার আগে গত অক্টোবরে মাস্ক ক্রয় চুক্তিটিকে “এক্স, দ্যা এভ্রিথিং অ্যাপ তৈরির বড় ধাপ” হিসাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
মাস্কের রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স-এও এক্স অক্ষরটি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে দুই দশকেরও বেশি সময় আগে মাস্কের মালিকানাধীন লেনদেন কোম্পানির নাম ছিলো এক্স ডটকম যা পরবর্তীতে প্রতিদ্বন্দী একটি কোম্পানির সঙ্গে একীভূত হয়ে পেপ্যাল নামে আত্মপ্রকাশ করে।
বড় বড় ওয়েব কোম্পানিগুলোর মধ্যে নাম পরিবর্তন একটি পরিচিত ঘটনা। ২০২১ সালের শেষের দিকে ফেইসবুকের নাম পরিবর্তন করে হয় মেটা, এবং ছয় বছর আগে গুগল তাদের নাম বদলে করে অ্যালফাবেট। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই নাম পরিবর্তিত মূল কোম্পানিগুলো তাদের মূল ব্র্যান্ড নামকে অপরিবর্তিত রাখে। তাতে করে গ্রাহকরা কোনো বিপত্তি ছাড়াই তাদের ব্যবহার চালিয়ে যান।
কিন্তু মাস্ক টুইটার শব্দটিকেই পুরোপুরি মুছে ফেলতে চাইছেন। নতুন লোগো প্রকাশ করে রোববার পোস্ট করা একটি টুইটে মাস্ক বলেন, “এবং শীগগীরই আমরা টুইটার ব্র্যান্ডকে বিদায় জানাব, এবং পর্যায়ক্রমে সব পাখিকেই।”
গত মে মাসে নিযুক্ত অ্যাপটির নতুন সিইও লিন্ডা ইয়াকারিনো সোমবার এক ইমেইলে কর্মীদের বলেন, - “অডিও, ভিডিও, মেসেজিং, লেনদেন, ব্যাংকিংয়ের নতুন অভিজ্ঞতা দিয়ে পুরো কমিউনিটির মন জয় করা অব্যহত রাখবে কোম্পানিটি। এটি আইডিয়া, পণ্য, সেবা এবং সুযোগের জন্য নতুন বৈশ্বিক মার্কেটপ্লেস তৈরি করবে।”
“এমন মিশন নিয়ে সত্যিকারের সাফল্য লাভের চেয়ে বলা অনেক সহজ” - মন্তব্য উঠে এসেছে সিনবিসি’র প্রতিবেদনে।
এক্সকে সুপার অ্যাপ বানাতে মাস্কের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য “সময়, অর্থ এবং জনবল” প্রয়োজন এবং “কোম্পানিটির তা নেই” বলেছেন প্রোলক্স। কোম্পানিটির বিজ্ঞাপন আয় অর্ধেকে নেমে আসার খবর মাসের শুরুতে দিয়েছেন মাস্ক। সেইসঙ্গে তিনি তখন যোগ করেন “অন্য কোনো বিলাসিতা করার আগে আমাদের আয় বাড়াতে হবে।”
প্ল্যাটফর্মটিতে বিদ্বেষ এবং বর্ণবাদমূলক কমেন্ট বেড়ে গেছে —এমন প্রতিবেদন দেখিয়েছেন একাধিক সামজিক অধিকার সংগঠন এবং গবেষক। তারপর থেকে টুইটারে পণ্য বিপণনে সতর্কতা বেড়ে গেছে কিছু কিছু বিজ্ঞাপনদাতার, বলেছে সিএনবিসি।
বিজ্ঞাপনী আয়ের ওপর ধাক্কা কাটাতে মাস্ক প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন থেকে আয়ের কথা বলেছেন। কিন্তু আট ডলারের মাসিক সাবসক্রিপশন ফি দিয়ে সে ক্ষতি পূরণ করতে কোম্পানিটির লাগবে কয়েক কোটি প্রিমিয়াম গ্রাহক।
প্ল্যাটফর্মটিতে রয়ে যাওয়া বিজ্ঞাপনদাতাদের নতুন শব্দের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। সারা বিশ্বব্যাপী টুইটারের বার্তা “টুইট” নামে পরিচিত। এখন এর পরিবির্তে এমন শব্দ খুঁজে বের করতে হবে যা সকল গ্রাহক এবং বিভিন্ন কর্পোরেট বিপণন দলের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে পরিচিত এবং সাদরে গৃহীত হবে।
কোম্পানিগুলো টুইটারে বিজ্ঞাপন ব্যয় বাড়াবে, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বাজারের ওপর করা সম্প্রতি এক জরিপে এমন কোনো প্রমাণ “খুঁজে পায়নি” বলে সিএনবিসিকে বলেছেন উইলিয়াম ব্লেয়ারের একজন বিশ্লেষক রালফ শাকার্ট।
বাদবাকি পুরো ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের বাজারে অগ্রগতির প্রমাণ উঠে এসেছে জরিপটিতে।
এই নাম পরিবর্তন “অনেক টুইটার গ্রাহক ও বিজ্ঞাপনদাতার কাছে একটি বিষণ্ণ দিন” এবং “স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, টুইটারের গত ১৭ বছরের অতীত হারিয়ে গেলো এবং আর কোনোদিন তা ফিরে আসবে না।” — ইমেইল বার্তায় বলেন ইনসাইডার ইনটেলিজেন্সের বিশ্লেষক জেসমিন এনবার্গ।
"থ্রেডস কিংবা অন্যকোনো অ্যাপ নয়, খোদ মাস্ক নিজেই 'টুইটারের হত্যাকারী', টুইটারের নাম বদল সেটাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।” —লেখেন এনবার্গ।