সংবিধানের মূলনীতি থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দিলেও প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘রাষ্ট্রধর্ম’ ইস্যুতে কোনো সুপারিশ করেনি সংবিধান সংস্কার কমিশন। যেহেতু তারা এই দুটি বাতিলের সুপারিশ করেনি, ফলে ধরে নেওয়া যায় যে তারা রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখার পক্ষে।
Published : 30 Jan 2025, 05:44 PM
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে সংবিধান সংস্কার কমিশন গত ১৫ জানুয়ারি যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে বেশ কিছু ‘বৈপ্লবিক’ সুপারিশ রয়েছে। যেমন বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তন। কমিশনের প্রস্তাব গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাম হবে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরে এসে দেশের সাংবিধানিক নাম কেন পরিবর্তন করতে হবে, দেশের মানুষ আদৌ এই পরিবর্তন চায় কি না, এই বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে উঠবে কি না, সেটি ভিন্ন তর্কের বিষয় হলেও সুপারিশটাকে বৈপ্লবিক বলে মানতে হবে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে নতুন রাষ্ট্রের জন্য যে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়, সেই সংবিধানের প্রস্তাবনাও নতুন করে লেখার সুপারিশ করেছে কমিশন। তারা একটি প্রস্তাবিত প্রস্তাবনাও এর সঙ্গে যুক্ত করেছে— যেখানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মতো গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকেও।
সংবিধানের বিদ্যমান চারটি মূলনীতির (জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা) মধ্যে তিনটি বাদ দিয়ে শুধু ‘গণতন্ত্র’ রেখে একটি নতুন মূলনীতি তারা যুক্ত করার সুপারিশ করেছেন, সেটি হলো ‘বহুত্ববাদ’। এই দুটির সঙ্গে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের সময় জারিকৃত প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স বা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত তিনটি অধিকার ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার’ যুক্ত করারও সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থাৎ কমিশনের প্রস্তাব মতে সংবিধানের মূলনীতি হবে পাঁচটি। এগুলো হচ্ছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র। যদিও বলা হয় যে, গণতন্ত্রের মধ্যে বাকি সবগুলোই নিহিত আছে। অর্থাৎ কোনো রাষ্ট্র যদি শুধু তার নাগরিকের জন্য প্রকৃত গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে পারে তাহলে সেখানে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সুবিচার ও বহুত্ববাদ— সবই চলে আসে।
ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম
ইরেজি সেক্যুলারিজমের বাংলা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ হয় কি না সেটি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও শব্দটি সাধারণ মানুষের বোধগম্য। অনেকে সেক্যুলারিজমের বাংলা ‘ইহজাগতিকতা’ লিখতে ও বলতে পছন্দ করেন এবং এটিই অধিকতর শুদ্ধ বলে মনে করেন। কিন্তু শব্দের এই মারপ্যাঁচে না গিয়েও এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, আধুনিক রাষ্ট্র মানেই ধর্মনিরপেক্ষ। ধর্মীয় রাষ্ট্র বা কোনো একটি ধর্মকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে বাকি সব ধর্মের মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা আধুনিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।
১৯৭২ সালে যখন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়, তখন সংবিধানটি পুরোপুরি ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত ছিল। এমনকি সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য এ কে মোশাররফ হোসেন আকন্দ সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘সর্বশক্তিমান পরম করুণময় দয়াময়ের নামে’ যুক্ত করার প্রস্তাব দিলেও সেটি গৃহীত হয়নি।
তবে ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের আমলে রাষ্ট্রপতির দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র আদেশ নম্বর ৪-এর দ্বিতীয় তফসিলবলে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহর নামে) যুক্ত করা হয়—যাকে পরের বছর ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল গৃহীত সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া হয়। এর ৩২ বছর পরে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করা হলেও প্রস্তাবনা থেকে ‘বিসমিল্লাহ’ বাদ দেওয়া হয়নি। তবে এর অনুবাদে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। এখন সংবিধানের শুরুটা এরকম: ‘বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহর নামে) পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে’।
বাহাত্তরের মূল সংবিধানের ২ নম্বর অনুচ্ছেদের বিষয় ছিল প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় সীমানা। কিন্তু ১৯৮৮ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সংবিধানে অষ্টম সংশোধনী এনে ‘২ক’ নামে একটি নতুন অনুচ্ছেদ যুক্ত করে রাষ্ট্রধর্মের বিধান করেন। সেখানে বলা হয়: ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।’
২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর সময়ে বাহাত্তরের মূল সংবিধানের মূলনীতিসহ অনেক বিধান ফিরিয়ে আনা হলেও রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা হয়। তবে বাক্যটি সর্বজনীন করার চেষ্টা করা হয়। যেমন সংবিধানে এখন রাষ্ট্রধর্মের অনুচ্ছেদটি এরকম: ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ অর্থাৎ রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করা না হলেও এই অনুচ্ছেদটি সংশোধন করে ইসলামের সঙ্গে অন্যান্য ধর্মকে সমমর্যাদা দেওয়া হয়। যদিও কোনো একটি ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করে অন্য ধর্মের সমান মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি একধরনের গোঁজামিল হয়ে যায়।
এই সময়ে কেন ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিলের সুপারিশ?
সংবিধান সংস্কার কমিশন মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিলেও সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম’ এবং রাষ্ট্রধর্ম ইস্যুতে কোনো সুপারিশ করেনি। তার মানে প্রস্তাবনায় বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখার পক্ষেই কমিশনের অবস্থান। যদি তাই হয় তাহলে মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখে সংবিধানকে আরও বেশি সাম্প্রদায়িক করার পথে কমিশন কেন হাঁটছে— সেটি বিরাট প্রশ্ন।
বস্তুত, একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অধিকতর গ্রহণযোগ্য হয়। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির রাজনীতি যত কট্টর বা উগ্র হিন্দুত্ববাদী হোক না কেন, বহু বছরের চর্চার মধ্য দিয়ে ভারত সারা বিশ্বে নিজেদেরকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রমাণের চেষ্টা করেছে। গুজরাট ট্রাজেডির মতো সেখানে সংখ্যালঘুরা নানাভাবে নিপীড়নের শিকার হলেও সামগ্রিকভাবে ভারত যে একটি ধর্মনিরপেক্ষ চেহারা বিশ্বকে দেখাতে চায় বা দেখাতে পারে, সেখানে মূল ভূমিকা পালন করে তাদের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি।
একইভাবে বৈশ্বিক মিডিয়া, বিশেষ করে ভারতের সংবাদমাধ্যম, এমনকি সে দেশের ক্ষমতাসীন বিজেপির অনেক নেতা বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বড় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় এবং একসময় এখানে উগ্র ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল বলে বা এখনও মাঝেমধ্যে মাজার, দরগাহ, কবরস্থান, বাউল-ফকিরদের আস্তানায় ভাঙচুর, তাদের অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনাকে পুঁজি করে বাংলাদেশকে মৌলবাদী রাষ্ট্র বলার বা লেখার যে সুযোগ পায়— সেই সুযোগটি আরও বেড়ে যাবে যদি সংবিধানের মূলনীতি ধেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে রাষ্ট্রধর্মের বিধান বহাল রাখা হয়। বিদেশিদের এই সুযোগ কেন দেওয়া হবে সেটি পরিষ্কার নয়। বিশেষ করে গত বছরের ৫ অগাস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগের দিন থেকে বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের ওপর হামলা, ধর্মীয় ইস্যুতে মন্তব্যের কারণে মব ভায়োলেন্সের মতো ঘটনা নিয়ে যখন দেশে-বিদেশে সমালোচনা হচ্ছে।
এইসব ঘটনায় সম্প্রতি পুলিশ যে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, গত বছরের ৪ অগাস্ট থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৪০টি মাজার, দরগাহ ও কবরস্থানে ৪৪টি হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে ঢাকা বিভাগে, যার সংখ্যা ১৭। চট্টগ্রাম বিভাগে ১০টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৭টি হামলার ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। শেরপুর জেলায় একটি মাজারে ৪ বার হামলা হয়েছে। পুলিশের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪৪টি হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়ছে। এর মধ্যে ১৫টি নিয়মিত মামলা এবং ২৯টি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও পুলিশের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং এমন একটি মুহূর্তে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাদ দেওয়ার সুপারিশ কোনো সুবিবেচনাপ্রসূত কাজ হয়েছে বলে মনে হয় না। কেননা এই সুযোগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তো বটেই, অন্য আরও অনেক দেশের সংবাদমাধ্যম এই বিষয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশের সুযোগ পাবে। অনেকেই হয়তো এই ঘটনাকে ধর্মীয় মৌলবাদীদের চাপ বলে সন্দেহ করবে। কেউ কেউ হয়তো এরকমও বলার চেষ্টা করবে যে, ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি থেকে সরে গেলোবাংলাদেশ ইত্যাদি— যা ড. ইউনূসের মতো একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। উপরন্তু এই কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ যেহেতু একজন ‘সেক্যুলার ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে পরিচিত এবং যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন; মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ভালো— ফলে এই ঘটনাটি তার জন্যও বিব্রতকর হবে কি না— সেটিও ভাবা দরকার।
যদি এমন হতো যে মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, রাষ্ট্রধর্ম এবং প্রস্তাবনা থেকে বিসমিল্লাহ— সবই বাতিলের সুপারিশ করে ‘বহুত্ববাদ’ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে, তাহলে তার একটি যুক্তি থাকত। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ, অথচ রাষ্ট্রধর্ম বহালের অর্থই হলো সংবিধানকে অধিকতর সাম্প্রদায়িক করা এবং ধীরে ধীরে রাষ্ট্রকে আরও বেশি সাম্প্রদায়িকতার দিকে ঠেলে দেওয়া।
স্মরণ করা যেতে পারে, এরশাদ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্মের বিধান যুক্ত করেছিলন তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য। এখানে তার ধর্মীয় অনুভূতি তথা পরকালীন কল্যাণ কামনার কোনো বিষয় ছিল বলে মনে হয় না, অন্তত তার জীবনযাপনের যেসব কিছু জানা যায়, তাতে তাকে পরহেজগার ভাববার সুযোগ ছিল না। তাছাড়া দেশের মানুষও তখন ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বানানোর দাবি জানায়নি। আবার যখন এটি করা হলো তখন সাধারণ মানুষ এর বিরোধিতাও করেনি। ভোটের রাজনীতির কারণে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিও এর বিরুদ্ধে বড় কোনো প্রতিবাদ গড়ে তোলেনি। তবে একাডেমিক পরিসরে এর সমালোচনা হয়েছে। দেশের ১৫ জন বরেণ্য ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। যদিও হাইকোর্টে রিটটি খারিজ হয়ে যায়।
গত বছরের ২৫ এপ্রিল এ নিয়ে ৫২ পৃষ্ঠার যে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় সেখানে বলা হয়: সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের স্বীকৃতি দেওয়া সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকেও আঘাত করে না। সংবিধানের ২ (ক) অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত মৌলিক নীতিগুলো এবং অন্য কোনো বিধানের সঙ্গেও অসঙ্গতিপূর্ণ নয়। সংবিধানে ইসলামকে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ মর্যাদা প্রদান করা হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে রাজনৈতিক মর্যাদা প্রদানের বাধ্যবাধকতা নেই। অনুচ্ছেদ ২ (ক) অবশ্যই সামগ্রিকভাবে পড়তে হবে এবং পড়লে এটা সুস্পষ্ট হয়, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার ধারণার সন্নিবেশ কোনোভাবেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করে না। এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকেও প্রভাবিত করে না এবং সংবিধানে বাহুল্যও সৃষ্টি করে না। (ইত্তেফাক, ২৬ এপ্রিল ২০২৪)। আদালতের এই পর্যবেক্ষণের সমালোচনা করলে আদালত অবমাননার শঙ্কা রয়েছে। তাই সেদিকে না গিয়ে এটা বলা যায় যে, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার পেছনে এরশাদের যে রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি ছিল, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বা তাদের সময়ে গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের সেটি থাকার কথা নয়। আবার এও ঠিক যে, তারা সুপারিশ করেছে বলেই সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল হয়ে গেছে তা নয়। বরং এ বিষয়ে যদি রাজনৈতিক ঐকমত্য না হয় এবং সংসদ যদি এটা অনুমোদন না করে তাহলে এই সুপারিশ কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকবে।